×

মতামত

মানুষ ৯০ শতাংশ সময় সমস্যা তৈরিতে ব্যয় করে আর ১০ শতাংশ সমাধানে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম

মানুষ ৯০ শতাংশ সময় সমস্যা তৈরিতে ব্যয় করে আর ১০ শতাংশ সমাধানে

মানুষ ৯০ শতাংশ সময় সমস্যা তৈরিতে ব্যয় করে আর ১০ শতাংশ সমাধানে

কোনো ব্যক্তি যদি ভালো কাজ করে এবং তার তারিফ করার যখন কেউ না থাকে বা মন্দ কাজ করলে কেউ ধিক্কার না দেয়, তখনই বুঝতে হবে পৃথিবীর মানুষের অবক্ষয় চলছে। মানব জাতির সম্পর্কে এত বড় একটি খারাপ মন্তব্য করার হিম্মত আমি কীভাবে পেলাম, এমনটি প্রশ্ন আমাকে করা হয়েছে গত কয়েক দিন আগে সুইডেনের একটি জনসমাবেশে।

আমি তৎক্ষণাৎ আমার উপরের মন্তব্যের পেছনে একের পর এক যুক্তি দাঁড় করাতে শুরু করলাম। যেমন বললাম সুইডেন ২০০ বছরের বেশি সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে চলছে, হঠাৎ কি হলো যে ন্যাটোতে যোগ দিতে হবে এবং কেনই বা বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বিশাল অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা নিতে হবে? 

দেশের জনগণ সব শুনছে, দেখছে এবং জানছে তারপরও কোন প্রতিবাদ নেই, নেই হা-হুতাশ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, ইসরায়েল-হামাস সংকট চলছে, বিশ্বের বহু গরীব দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে, তো? চোখের সামনে দুর্নীতি, অনীতি হচ্ছে, আমরা নীরবতা পালন করে চলছি ইত্যাদি ইত্যাদি। 

সবাই চুপ হয়ে গেল, নতুন কোন প্রশ্ন নেই, ভাবলাম যাক তাহলে যা বলেছি তা ভুল কিছু না। আমার পরবর্তী মতামত ছিল— বিশ্বের মানুষের ৯০% সময় ব্যয় হয় প্রবলেম মেকারে বাকি ১০% সমাধানে। হঠাৎ একজন তরুণ প্রজন্মের মেয়ে হাত উঁচু করে বললো একটু বিশ্লেষণ করবে কী বোঝাতে চাচ্ছো তুমি? 

বাকিটা সময়ে আমি যে আলোচনা করেছিলাম সেটা ছিল নিম্নরূপ- সারাদিন সমস্যার সমাধান করাই মানুষের কাজ নাকি সমস্যা তৈরি করাও মানুষের কাজ? আমরা কি সমস্যা তৈরি করি নাকি সমস্যা নিজ থেকে আমাদের ওপর চেপে বসে? আমাদের লোভ, লালসা, চাওয়া, পাওয়া, আশা, প্রত্যাশা এবং দরকারই মূলত সমস্যার কারণ। মানুষের কারণে কি তাহলে সমস্যা নাকি সমস্যার কারণে মানুষ? 

আমরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষা গ্রহণ করি সে শিক্ষায় কী শিখি মূলত? সমস্যার সমাধান করা এবং সমস্যার সৃষ্টি করা। সমস্যা এবং সমাধানের বাইরে আসলে আমরা তেমন কিছু করি না। এখন যদি সমস্যা না থাকত তাহলে আমরা কী করতাম ভেবেছেন কি কেউ? আমি ভাবতে শুরু করেছি। আমার সেই ভাবনার জগত থেকে আজকের এই লেখা।

আমি দূরপরবাসে ৪০ বছর বসবাস করছি। এই ৪০ বছর সময়ে আমি সমস্যার সমাধানের চেয়ে সমস্যা তৈরি করেছি বেশি। যখনই দেখি এটা নেই, সেটা নেই তখনই শুরু হয় সমস্যা এবং সেই এটা সেটা না পাওয়া অবধি সমস্যার পর সমস্যা তৈরি করতে থাকি। কখনও সমাধান করি কখনও সমাধান করতে গিয়ে এক বা একের অধিক সমস্যার সৃষ্টি করি— তার মানে আমি ৯০% সময় ব্যয় করি প্রবলেম মেকারে এবং ১০% সময় ব্যয় করি সমাধানে। 

এখন কথা আছে সেটা হলো অনেক সময় আমরা জানি না সমস্যাটা কী, সেটাও একটা বড় সমস্যা। বহু গবেষণার পর হয়ত জানতে পারলাম সমস্যা, এখন সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। যখন সমাধান পেয়ে গেলাম তখন কিছু সময় স্বস্তি, শান্তি, আনন্দ-ফুর্তি এসে হাজির হলো এবং ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন চিন্তার উদয় হলো মানে শুরু হলো নতুন সমস্যা। 

ধরুন সখ হলো শিক্ষামন্ত্রী হবেন। শিক্ষামন্ত্রী নতুন কোনো উদ্ভাবন না তবে আপনি শিক্ষামন্ত্রী হবেন এটা একটি মিশন ইম্পসিবল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখা গেল আপনার সব গেল সাথে আপনিও, তারপরও আপনি সমস্যার সমাধান করতে পারলেন না। মাঝখানে জীবনের বাকি সময় ব্যয় করলেন একটি সমস্যার সমাধান করতে। 

এভাবে বিশ্বের মানুষ প্রতিদিন তার সময়ের ৯০% সময় ব্যয় করে চলছে সমস্যার মধ্য দিয়ে। আমরা আমাদের ধ্যানে যে সময় ব্যয় করি সেই সময়টি যদি সমস্যা যুক্ত না হয়ে সমস্যা মুক্ত হতো। তবে আমরা পৃথিবীকে সুন্দর পরিপাটি করে গড়ে তুলতে পারতাম, পারতাম নিজেদেরকে সুখি ও সমৃদ্ধ করতে। 

আমরা মনে করি যে প্রতিদিন আমরা যে সকল কাজকর্ম করি তার একটা ভ্যালু রয়েছে, কথা সত্য কিন্তু ভাবুন মূলত আমরা কী করি। যেমন উকিলরা কী করেন? একজন অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করে ন্যায়-অন্যায়ের পক্ষে বা বিপক্ষে লড়েন। যারা অপরাধ করে বা অপরাধের স্বীকার তারা সেটা জানে তারপরও উকিল নিয়োগ করে শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে বা শাস্তি দিতে। 

এখন মিথ্যাকে সত্য অথবা সত্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করা এবং সমস্যার সমাধান করা মূলত উকিলের কাজ। যত খারাপ, অন্যায়, মিথ্যা, অপকর্ম, অবিচার, অত্যাচার, দুর্নীতি, অনীতি কাজের পেছনে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করি এবং এর জন্য সমাজের বলতে গেলে সকল মানুষ কাজ করে। 

অথচ ভালো কাজের জন্য উকিল, পুলিশ, বিচার কোনো কিছুর মূলত দরকার হয় না। তার মানে কী দাঁড়ালো? অকাম-কুকামের জন্য মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। অকাম-কুকাম শেখার জন্য মানুষ শিক্ষিত হয়। এর নাম সভ্যতা নাকি অসভ্যতা? 

যাই হোক না কেন, এই হলো আমাদের পৃথিবী। এই পৃথিবীর পরিবর্তন যদি সত্যিই আমরা চাই তবে আমাদেরকে উদ্ভাবিত হতে হবে নতুন উদ্দীপনা এবং ক্রিয়েটিভ চিন্তার মধ্য দিয়ে। শুধু সমস্যা সমাধান না করে আসুন নতুন চিন্তার উদ্ভাবন করতে শিখি।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন, [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App