×

মতামত

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড

এই দায়ভার কার?

Icon

আবির চৌধুরী

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১০:০১ পিএম

এই দায়ভার কার?

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে লিখেছেন চিত্রনায়ক আবির চৌধুরী

মর্মান্তিক বেইলি রোডের হৃদয়বিদারক অগ্নি দুর্ঘটনার দায়ভার কে নিবে? এই অগ্নি দুর্ঘটনার দায়ভার কার? সরকারের? নাকি বিল্ডিং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের? নাকি রেস্টুরেন্ট মালিকদের? বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার অনুমতিপত্রই বা তারা কোথায় পেলেন?

মানতেই হবে এই সমস্ত দাহ্য বিপদজনক গ্যাস সিলিন্ডার সিঁড়িতে অবৈধভাবে জমা রাখা কর্মকাণ্ড দেশের ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করেন না। এই ধরণের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের অবশ্যই গাফিলতি আছে। 

এমন অনেক অনিয়মের প্রশ্ন আপনি বা আমাদের অনেকেরই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এতে কী হবে? শেষ পর্যন্ত আমরা আরো কয়েক দিন পর এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি বেমালুম ভুলে যাব! ভবিষ্যতে দেখা যাবে নতুন করে আবার হয়তো কোনো বিল্ডিংয়ে মর্মান্তিক আরেকটি দুর্ঘটনা আমরা দেখতে পাবো।

অবাক হচ্ছেন? হয়ত আমার মনের উপলব্ধির লেখাটি  অনেকেই পড়বেন কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই ! এটা খুব স্বাভাবিক চিত্র আমাদের দেশে।এটাই সত্য যে অগ্নি দুর্ঘটনার দায়ভার হয়তো কারোর না কারোর অবশ্যই আছে,যা আমরা জেনেও এখন মূকবধির।

দেশের অধিকাংশ ইমারত কোড না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে। আমি তো মনে করি, কোড না মানা বিপদজনক ইমারতগুলোর সঠিক তথ্যের পরিসংখ্যান সরকারের কাছেও নেই। আর যদি থেকেই থাকে তাহলে এ ধরণের ভুলভাল ইমারতগুলো টিকে আছে কেন? 

ত্রুটি সম্পন্ন বিপদজনক ইমারতগুলোতে মানুষগুলো বসবাস করছেই বা কেন? এই প্রশ্নগুলোর জবাব কি কেউ দিতে পারবে? এই ধরণের দুর্ঘটনা যাতে না হয় সরকারের কঠোর নীতিমালা থাকা উচিত।

নিয়ম না মানার দেশে আমরা বসবাস করছি।মনে হচ্ছে এদেশে নিয়মের বালাই নেই! এখানে নিয়ম মানতে হয় না! এখানে যার -যার নিয়ম সেই-সেই করে নিতে পারে!! এমনটাই মাঝে মধ্যে মনে হয়,সবাই হীরক রাজার রাজ্যে রাজা!

এখানে সবাই নির্বিশেষে অনিয়মের ক্ষমতাবান। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে আপনারা হয়তো দেখতে পাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত কত হাজার মানুষ ভেজাল খাদ্য খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দৌড়াচ্ছে, ভেজালকারী হোতাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারভাবে সরকার কাজের মত দৃশ্যমান কিছুই করতে পেরেছে? সোজা উত্তর পারেনি।

পানির বোতলে সত্যিকারের  মিনারেল ওয়াটার আছে কিনা আমরা কেউই জানি না! আমার তো বদ্ধমূল ধারণা খাদ্যে ভেজালকারীদের আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার তদারকিতে জিরো টলারেন্সের অবস্থানে নেই। ফরমালিন যুক্ত খাদ্য খেয়ে অনেকেই চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে ধর্না দিচ্ছেন অথচ নিজেও জানেন না কি কারণে রোগ হচ্ছে।

স্বাস্থ্য সেবা বা চিকিৎসার জন্য নেওয়ার দেশ-বিদেশের হাসপাতালগুলোতে কি বিপুল পরিমাণ ব্যক্তির যে ব্যয় মেটাতে হচ্ছে তা তো সবারই জানা।

যাতায়াত ব্যবস্থার কথা নিয়ই বা কি লিখবো? দেশের ৯০% চালকরা রাস্তার নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না! মনে হয় তারা নিজেদের নিয়মেই গাড়ি চালায়। ফি বছরে কতগুলো মানুষ গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় তৎসঙ্গে পঙ্গুত্বকে বরণ করে তার  পরিসংখ্যান ভয়াবহ। 

নদীমাতৃক দেশে নৌ দুর্ঘটনায় বিপুল পরিমাণের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে, তার পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। দুর্ঘটনায় নিহত মানুষদের শুধুমাত্র দোয়া মাগফেরাত কামনা করেই আমরা দায়িত্ব সেরে ফেলি। দুর্ঘটনা যাতে না হয় বা রোধ করার জন্য তদারকিসহ কঠোর আইন করার কাজটি করার জন্য সরকারের গাফিলতি যে আছে তা পরিষ্কার।

পরিশেষে গতকালের নাটক পাড়াখ্যাত বেইলি রোডের অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহত সকল মানুষ যেন বেহেস্তে নসীব হয় তার প্রার্থনা করছি। যারা হাসপাতালে আহত যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তাদের জন্য দোয়া করি। তারা যেন আশুতে আবার তাদের পুরনো জীবন যাপনে ফিরে যেতে পারে। নিয়ম না মানার দেশের মানুষগুলোর প্রতি মহান আল্লাহ যেন সহায় থাকেন। আমিন।

লেখক: আবির চৌধুরী, চিত্রনায়ক ও শিল্পপতি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App