×

মতামত

নয়টি ছোট সংখ্যার বিশাল চ্যালেঞ্জ সুডোকু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৯ পিএম

নয়টি ছোট সংখ্যার বিশাল চ্যালেঞ্জ সুডোকু

নয়টি ছোট সংখ্যার বিশাল চ্যালেঞ্জ সুডোকু

সুডোকুর ক্ষেত্রে পালিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুডোকু নামের ধাঁধার গ্রিড মনকে অচল করে দেয়, যেন মস্তিষ্কের সব ক্ষমতাকে একটি ৯x৯ বর্গাকার জালের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে সাবধানে পূরণ করতে হবে, নির্দিষ্ট সব নিয়ম মেনে।  

এই আবদ্ধতা আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। প্রথম বিশ্ব সুডোকু চ্যাম্পিয়নশিপ ২০০৬ সালের মার্চ মাসে ইতালির লুক্কায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ২২টি দেশের সুডোকু প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করেন। ফিলিপাইন, ভারত, ভেনিজুয়েলা ও ক্রোয়েশিয়াসহ নানা দেশের প্রতিযোগিরা অংশ নেয়। বিজয়ী হন চেক রিপাবলিকের একজন ৩১ বছর বয়সী নারী, তিনি পেশায় একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা জানায়, সুডোকু উন্মাদনার কারণে পেনসিল বিক্রির হার বেড়েছে ৭০০ শতাংশ। 

২০০৫ সালের নভেম্বরে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ সকল কেবিন ক্রুর কাছে একটি নোটিশ পাঠায়। বিমানকর্মীরা উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় সুডোকু মেলাতে পারবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে সুডোকুর জনপ্রিয়তা অনেক। সুডোকু সমাধান করতে ভাষা জানার প্রয়োজনীয়তা নেই। গণিত বিষয়ে জানার দরকার নেই। ধাঁধা সমাধানকারীকে ৮১টি বর্গাকার ঘর বা সেলের একটি চার্ট দেওয়া হয়, যেখানে প্রায় ২০টি বর্গাকার ঘর বা সেল পূরণ করা থাকে। বড় গ্রিড আবার নয়টি ৩x৩ গ্রিডে বিভক্ত। চ্যালেঞ্জ হল, ফাঁকা ঘর এমনভাবে পূরণ করতে হবে যেন প্রতিটি ৯টি সেলের সারি, প্রতিটি ৯টি সেলের কলাম ও প্রতিটি ৯টি সেলের ছোট গ্রিডে ১ থেকে ৯ সংখ্যা পর্যন্ত সব সংখ্যা থাকে। সংখ্যার পুনরাবৃত্তি হবে না বা কোনো সংখ্যা বাদ পড়বে না। 

সুডোকু নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জ নয়। প্রাচীন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন ধরনের জাদুর বর্গ দেখা যায়। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন ম্যাজিক স্কয়ার বা জাদুর বর্গ সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ১৭৫০ সালে তিনি ৮x৮ বর্গের একটি ম্যাজিক স্কয়ার প্রকাশ করেন। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন বাস্তবিকভাবে সেই জাদুর বর্গ নিয়ে মত্ত ছিলেন। 

আঠারো শতকের সুইস গণিতবিদ অয়লার ল্যাটিন স্কয়ার বা বর্গ নিয়ে কাজ করেন। যেখানে প্রতিটি সারি ও কলামে একটি সংখ্যা বা অক্ষরের সেটের পূর্ণ তালিকা ছিল। বড় গ্রিডের মধ্যে ছোট গ্রিডের সুডোকু ধাঁধা ১৯৭৯ সালে ডেল পেনসিল পাজলস অ্যান্ড ওয়ার্ড গেমস নামক সাময়িকীতে প্রথমবারের মতো নাম্বার প্লেস শিরোনামে প্রকাশিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপোলিসের একজন স্থপতি হাওয়ার্ড গার্নসের নামে সেই ধাঁধা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে হাওয়ার্ড গার্নস মৃত্যুবরণ করেন। 

সমাধানের জন্য সুডোকু ধাঁধার প্রতিটি কলামে, সারি ও ছোট সেলে পুনরাবৃত্তি ছাড়া ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা বসতে হবে।  আমেরিকায় জন্ম নেয়া এই ধাঁধা ১৯৮৪ সালে জাপানে পৌঁছে যায়। সেখানে প্রকাশক নিকোলি এই ধাঁধার নাম দেন সুডোকু — অর্থাৎ একবারে এক সংখ্যা থাকবে। ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী ওয়েন গোল্ড সুডোকুর দেখা পান। তিনি হংকংয়ে বিচারক হিসাবে কাজ করেছিলেন। জাপানের টোকিওতে ছুটি কাটাতে গিয়ে সুডোকুর দেখা পান। ২০০৪ সালে তিনি সফলভাবে দ্য টাইমসকে এই ধাঁধা প্রবর্তনের জন্য লবিং করেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সুডোকুর জনপ্রিয়তা শুরু হয়। জাপানে নিকোলি ম্যাগাজিন সুডোকু নামটির ট্রেডমার্কের মালিক। 

স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন থেকে জাহিদ হোসাইন খানের রচনায় অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিন সুডোকু নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। মূল্য ২৫০টাকা। সুডোকুর আবির্ভাবের গল্প আর বৈশ্বিক প্রেক্ষিতসহ সুডোকু বিশ্বকাপের নমুনা সুডোকু প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিদিন সুডোকুতে।

বইটি অনলাইনে পাওয়া যাবে রকমারি ডটকমের https://www.rokomari.com/book/377531/protidin-suduku-1?ref=rncl_0 এই ঠিকানায়। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App