×

পুরনো খবর

খাশোগি হত্যার অনুমোদন দেন সৌদি যুবরাজ: হোয়াইট হাউস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৫৫ এএম

খাশোগি হত্যার অনুমোদন দেন সৌদি যুবরাজ: হোয়াইট হাউস

নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ফাইল ছবি

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই তার কট্টর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা কিংবা জীবিত আটক করার লক্ষ্যে অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সময় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে। দুই বছর আগে দুনিয়াজুড়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সংশ্লিষ্টতার কথা যুক্তরাষ্ট্র এবারই প্রথম প্রকাশ করল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হয়নি। তবে সৌদি আরব এ প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছে। এটি মিথ্যে, নেতিবাচক এবং গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে রিয়াদ। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের।

‘খাশোগি নিষেধাজ্ঞা’র ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। জড়িত সৌদি সরকারের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ভিসা পাবেন না

এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন নৃশংস খাশোগি হত্যা অভিযানের সঙ্গে জড়িত সৌদির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে যুবরাজ তাদের মধ্যে নেই। অ্যান্টোনি ব্লিনকেন বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেনো বিদেশের মাটিতে খাশোগি হত্যার মতো কোনো ঘটনায় জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া যায়। স্পষ্টতই ‘খাশোগি নিষেধাজ্ঞা’ নামে অভিহিত এ পদক্ষেপের ফলে  তুরস্কে এই সাংবাদিক হত্যা অভিযানে সংশ্লিষ্ট সৌদি সরকারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আর ভিসা পাবেন না।

হোয়াইট হাউসের অনুমোদন ক্রমে খাশোগি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি ও প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স (ওডিএনআই)। চার পৃষ্ঠার ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান  তুরস্কের শহর ইস্তাম্বুলে অভিযান  চালিয়ে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে জীবিত আটক কিংবা হত্যা করার অনুমোদন দিয়েছিলেন।

এ প্রতিবেদন তৈরিতে রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সি যুবরাজের নিয়ন্ত্রণ, প্রভাব, এবং তার সুরক্ষা ও নিরাপত্তামূলক অভিযানে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সদস্য, পাশাপাশি যুবরাজেরই একজন মূল উপদেষ্টার খাশোগি হত্যা অভিযানে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে যুবরাজ সৌদি আরবের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একচ্ছত্র কর্তৃত্বের অধিকারী হন। ফলে তার অনুমোদন ছাড়া সৌদি সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পক্ষে বিদেশের মাটিতে খাশোগি হত্যার মতো কোনো অভিযান চালানো সম্ভব- এমন ধারণা করা কঠিন। তাছাড়া বিদেশের মাটিতে সৌদি রাজতন্ত্র ও রাজপরিবারের বিরোধী ও সমালোচকদের দমনে যুবরাজের সহিংস পদক্ষেপের প্রতি সমর্থনের বিষয়টিও ছিলো বিবেচনায়।

২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তিনি সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক ছিলেন। শুরু থেকেই হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সন্দেহ করা হচ্ছে। অবশ্য যুবরাজ এই হত্যায় তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের তদন্তে তিনি অভিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট অন্তত চারজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে তাদের বরাতে আগের দিন শুক্রবারই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন তথ্য জানানো হয়।

এর আগে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনেও খাশোগি হত্যার জন্য সৌদি সরকারকে দায়ী করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরব স্বীকার করেছিল, কতিপয় বেপরোয়া কর্মকর্তা সরকারের অনুমোদন ছাড়াই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।

পরে সৌদি আদালত প্রাথমিকভাবে পাঁচ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিচারক সেই সাজা কমিয়ে প্রত্যেককে ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দেশটিতে অস্ত্র বিক্রিও সীমিত করতে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে এক প্রকার  অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যুবরাজের পদ দখল করা মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন।

সৌদি যুবরাজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রভাব কতটা পড়বে, তা তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা মুশকিল। তবে যুবরাজ এ ধাক্কা শেষপর্যন্ত সামলে উঠতে সক্ষম হলেও তার নেতৃত্ব দেশে-বিদেশে, বিশেষত মুসলিম বিশ্বে প্রশ্নের ‍মুখে পড়বে বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন জো বাইডেন। ফোনালাপে বাদশাহর কাছে মানবাধিকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।  খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতর গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ হতে যাচ্ছে, এটা আগেই জানা গিয়েছিল। প্রতিবেদনে খাশোগি হত্যায় মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসার আভাসও ছিল। বাদশাহ সালমানকে ফোন করার আগে বাইডেন প্রতিবেদনটি পড়েছেন বলেও তিনি নিজেই জানান। তবে সৌদির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বলেছে, বাদশাহ সালমান ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এই অঞ্চলে ইরানের অস্থিতিশীলমূলক কার্যক্রম ও দেশটির সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App