×

পুরনো খবর

বাজেট ঘাটতিতে পিছিয়ে স্বাস্থ্য খাতের গবেষণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৪ পিএম

বাজেট ঘাটতিতে পিছিয়ে স্বাস্থ্য খাতের গবেষণা

গবেষণায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এ খাতে রয়েছে বাজেট স্বল্পতা। প্রকল্পভিত্তিক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দাতা সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী দেশে কিছু গবেষণার কাজ হলেও মৌলিক গবেষণা নেই বললেই চলে। দেশে যে গবেষণাগুলো হচ্ছে সেগুলোর মান নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন মহল আক্ষেপও করেন। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা দূর হচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত গবেষণা হয় না। গবেষণায় টাকা খরচ করতে সরকার উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু গবেষণার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও আক্ষেপ রয়েছে।

ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস-২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য বাজেটের বড় অংশ খরচ হয় রোগের চিকিৎসায়। অথচ রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা-গবেষণা খাতে সরকারের ব্যয় স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণার দিক থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলো বেশ এগিয়ে। এক্ষেত্রে কয়েকটি সংস্থার নাম উল্লেখ করেন তারা। সেগুলো হলো- আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), ব্র্যাক, সিআরপি, সেভ দ্যা চিলড্রেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট), জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম), ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে মানসম্মত কিছু গবেষণা হচ্ছে।

দেশে মানসম্মত গবেষণা না হওয়ার কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, গবেষণার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হলো গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত হলেও প্রতি বছরই সরকারি খাতে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়ছে। চিকিৎসা গবেষণায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চিকিৎসকদের গবেষণামুখী করা। কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের পদোন্নতির উদ্দেশ্যে কিছুসংখ্যক রিসার্চ আর্টিকেল ছাপার পরই থেমে যান। চাকরিক্ষেত্রে পদোন্নতি ছাড়াও গবেষণার কাজে উৎসাহিত করার জন্য অন্যান্য প্রণোদনারও প্রয়োজন। এ ছাড়া গবেষণার ফলাফল জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে প্রতিফলিত না হওয়ার কারণেও চিকিৎসা গবেষণা পিছিয়ে পড়ছে।

গবেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের উচিত গবেষণায় বর্তমান এবং নিকট ভবিষ্যতের খাতগুলো চিহ্নিত করা এবং চিকিৎসা গবেষণা খাতের সিংহভাগ অর্থ সেই সব গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে চিকিৎসা গবেষণার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতেই হবে। বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ) বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. সারোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেট স্বল্পতা এবং পারস্পারিক নেটওয়ার্কের অভাবে গবেষণার মান ও সংখ্যার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশের গবেষকদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পাবলিকেশন। কারণ, গবেষণাপত্রগুলো জাতীয়ভাবে প্রকাশেও বাজেট স্বল্পতা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে গবেষণা হচ্ছে না এটি সত্য নয়। তবে আমাদের উচিত জনগণের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে জনকল্যাণধর্মী ও মৌলিক গবেষণার প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেয়া। সেই সঙ্গে গবেষণায় প্রাপ্ত বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ভোরের কাগজকে জানান, মৌলিক বিষয়ে গবেষণার জন্য আমাদের দেশে বাজেট নেই বললেই চলে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নির্ধারিত বিষয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু মৌলিক বিষয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ নেই। এ জন্য গবেষক গবেষণার কাজে আগ্রহ হারায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App