×

পুরনো খবর

রাজাকার তালিকা যাচাইয়ের পথ খুঁজছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৬ এএম

তুমুল সমালোচনার কারণে স্থগিত হওয়া রাজাকার তালিকা কীভাবে যাচাই-বাছাই হবেÑ সেই পথ খুঁজছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী একটি পথ এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব আরেকটি পথ বাতলেছেন। কিন্তু সঠিক পথটি এখনো চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি কেউই। এর আগে জেলা প্রশাসকদের কাছে এই তালিকা চাইলে সাকুল্যে ১২ জন জেলা থেকে তালিকা পাঠান।

বৃহস্পতিবার ( ১৯ ডিসেম্বর) আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির মাধ্যমে স্থগিত হওয়া রাজাকারের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হতে পারে। মন্ত্রীর ঠিক উল্টো কথা বলেছেন সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান। তিনি বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে রাজাকারের তালিকা যাচাইয়ের পদ্ধতি চ‚ড়ান্ত করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করলে এটি সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি।

কোন পথে গিয়ে এই কাজ শেষ হবে- তার দিশা এখন পর্যন্ত না মিললেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী সব অভিযোগকে বেমালুম অস্বীকার করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যঙ্গকে পাত্তা না দিয়ে গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সাফ বলে দিয়েছেন, যেসব গণমাধ্যম ‘রাজাকারের তালিকা করতে ৬০ কোটি টাকা খরচ’ শিরোনামে সংবাদ প্রচার করেছে, তাদের আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো ক্ষমা চেয়ে সংবাদটি প্রত্যাহার না করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, রাজাকার তালিকা প্রকাশে ৬০ কোটি টাকা খরচের খবর জানেই না বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরকম পরিস্থিতিতে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দেশ-জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেতনভোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নাম প্রকাশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকার ঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ

পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য গত বুধবার ওই তালিকা স্থগিত করা হয়। এখন কীভাবে এই তালিকা যাচাই করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটাকে স্থানীয়ভাবে যাচাই করা হবে। স্থানীয়ভাবে করলে ঠিকঠাক হবে।

আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান বলেন, কোন পদ্ধতিতে রাজাকারের তালিকা যাচাই করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা এখন তারাই যাচাই-বাছাই করবে নাকি আমরা করব, নাকি যৌথভাবে করা হবে, নাকি কোনো বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেয়া হবে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়নি, এটা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দুই মন্ত্রণালয় (মুক্তিযুদ্ধ ও স্বরাষ্ট্র) একসঙ্গে কাজ করলে এটি সহজ হবে। কারণ তাদের কাছে এখনো বহু ডকুমেন্ট আছে। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিল করত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। গুছিয়ে কাজটা করতে হবে, এককভাবে এটা করা সম্ভব না।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, গত ১৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ১০০ সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সেখানে তিনি রাজাকারের তালিকা তৈরির ব্যয় সম্পর্কে কোনোকিছু বলেননি। কোনো কোনো গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের সংবাদ প্রচার করেছে। যা অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত নয়। এ ধরনের অসত্য সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘রাজাকারের তালিকা করতে ৬০ কোটি টাকা খরচ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এ তালিকা প্রণয়নের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি বা চাওয়া হয়নি। এ কাজে একটি পয়সাও খরচের প্রশ্নই আসে না। এটি একটি অসত্য তথ্য। এ ধরনে অসত্য সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App