×

পুরনো খবর

গান্ধী আশ্রম হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ১০:১৬ পিএম

গান্ধী আশ্রম হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র

নওগাঁর আত্রাইয়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম স্থান গান্ধী আশ্রম। আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্নে এর অবস্থান। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত, অহিংস ব্যক্তিত্ব ও  ভারতবর্ষের জনপ্রিয় নেতা মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত আত্রাইয়ের গান্ধী আশ্রমটি অনেকটাই সেজে গুছে এগুচ্ছে।

নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দিন দিন গান্ধী আশ্রমের কলেবর বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে ভারতীয় ও স্থানীয় সংসদ  ইসরাফিল আলম এমন,পির অর্থায়নে মহাত্মা গান্ধী ও পিসি রায় মেমোরিয়াল হল গড়ে উঠেছে। বর্তমানে আশ্রমের অনেকটা জায়গা জুড়ে চাষ করা হচ্ছে তুঁত গাছ।

এছাড়াও জেলা পরিষদের অর্থায়নে সেখানে সীমানা প্রাচীর ও দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে তুঁত গাছ। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দেখতে আসেন। শুধু তাই নয়; প্রতি সপ্তাহে একজন ডাক্তার এসে রোগী দেখেন। তবে ওখানে স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দের। আর তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আশ্রমটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব বলে দাবি সচেতন মহলের।

সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজ সামাজ্র্যবাদের নির্যাতনের যাঁতাকলে যখন পিষ্ট ভারতবর্ষবাসী। তাদের জুলুম ও নিপীড়নে অতিষ্ট বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ। সে সময় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনমনে জায়গা করে নেন ভারতবর্ষের কিংবদন্তি নেতা মহাত্মা গান্ধী। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে থেকে তিনি এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইংরেজদের পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনমত সৃষ্টি করেন।

তিনি এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ১৯২৫ সালে নওগাঁর আত্রাইয়ে এসেছিলেন। সে সময় তিনি আত্রাই রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন তেতুঁলিয়া নামক স্থানের আজকের এই গান্ধী আশ্রমে অবস্থান করে এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করেন। একই সাথে এলাকাবাসীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে তিনি এখানে খদ্দর কাপড় তৈরির তাঁত শিল্প স্থাপন ও খাঁটি সরিষার তেলের জন্য ঘানি স্থাপনসহ অনেক স্মৃতিচিহ্নই গড়ে তোলেন। তৎকালীন সময়ে বানভাসী মানুষদের সহযোগিতা করার লক্ষ্যে তিনি এখানে স্থাপন করেন বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি (বিআরসি)।

গান্ধী আশ্রম দেখতে আসা স্থানীয় শিক্ষার্থী তাবাসসুম, নিলীমা, রত্নাসহ অনেকেই জানায়, মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত গান্ধী আশ্রমটি খুব ভালো লেগেছে। তবে এখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায়। সেই স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় স্থানীয় গরীব, অসহায় ও ছিন্নমূল পর্যায়ের শিশুরা পড়ালেখা করতে পারতো। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ঐতিহাসিক আশ্রমটিকে আন্তর্জাতিক মানের একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব।

স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা বেগম, আব্দুল কুদ্দুসসহ অনেকেই বলেন, এখানকার অনেক জায়গা অবৈধ ভাবে দখল হয়ে আছে। সেই সব জায়গা উদ্ধার করে এখানে স্কুলের পাশাপাশি একটি হাসপাতাল স্থাপন করলে আমরা এবং স্থানীয় গরীব-অসহায় মানুষসহ অনেকেই উপকৃত হবো। এছাড়াও এখানে যা বর্তমান আছে তার রক্ষনাবেক্ষণ ও সংস্কার প্রয়োজন। এখানে করার আরো অনেক কিছুই আছে। এখানে কিছু করার জন্য শুধুমাত্র কর্তা ব্যক্তিদের সুদৃষ্টি ও সৎ মন মানসিকতার প্রয়োজন।

গান্ধী আশ্রম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. নিরঞ্জন কুমার দাস বলেন, এক সময় গান্ধী আশ্রমের উন্নয়ন মুখ থুবরে পড়ে থাকলেও বর্তমান সরকারের স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিল আলম ও ভারতীয় অর্থায়নের গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মহাত্মা গান্ধী ও পিসি রায় মেমোরিয়াল হল। এখানে প্রতি বছর আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয় গান্ধীর জন্মোৎসব। আমি প্রতিদিন এই এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বিনামূল্যে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। তাই আশ্রমের আরো উন্নয়নের পাশাপাশি একটি হাসপাতাল গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন। আমি সরকার কিংবা উপজেলা প্রশাসন এমন কি এই আশ্রম থেকেও কিছু পাই না। শুধু আমি নই এই আশ্রমে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে একজন কেয়ারটেকার দেখভাল করলেও তার কোন বেতন-ভাতা কিংবা কোন সুযোগ-সুবিধা কিছুই পান না।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এমন,পি বলেন, বিগত সরকারের আমলে এই ঐতিহাসিক আশ্রমটি খুবই অবহেলিত ছিলো। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আশ্রমটির মর্যাদা  অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি নিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন দেশের গন্যমান্য ব্যক্তিদের এখানে এনেছি। নিজস্ব অর্থায়ন এবং ভারত সরকারের সহায়তায় গান্ধী আশ্রমটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানোর চেষ্টা করে আসছি। তবে এখনোও এখানকার অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। আমি আশ্রমটিকে আধুনিক মানসম্মত ও আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে উন্নিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা রাখি আমি তাতে সফল হবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App