×

পুরনো খবর

লিপস্টিকের সাতকাহন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:০৪ পিএম

লিপস্টিকের সাতকাহন

লিপস্টিকের সাতকাহনে মডেল হয়েছেন শাহানা সুলতানা

লিপস্টিকের সাতকাহন
একজন পুরুষকে ঘায়েল করার জন্য নারীর সবচেয়ে বড় অস্ত্রের নাম লিপস্টিক। নারীর ঠোঁটের লিপস্টিকের আঁচড় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতে পারে পুরুষের হৃদয়। অন্তত ইতালীয় অভিনেত্রী মনিকা বেলুচ্চি এমনটাই বলেছেন। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় ‘যখন আয়নার সামনে লিপস্টিক মাখো ঠোঁটে, হাই-হিল জুতো/ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামো, হাতে বই, বুকের ওপর/ কালো বেণী, চিবুকে ঘামের ফোটা, কী-যে ভালো লাগে।’ ইংরেজি Lipstick শব্দের বাংলা ওষ্ঠরঞ্জনী। ওষ্ঠরঞ্জনী বা লিপস্টিক হচ্ছে এক প্রকার প্রসাধনী দ্রব্য যা বিভিন্ন রকম রঞ্জক পদার্থ, তেল, মোম এবং ত্বক কোমলকারী পদার্থের সন্নিবেশে তৈরি হয় এবং মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তা ঠোঁটে প্রয়োগ করা হয়। লিপস্টিক বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। লিপস্টিক সাধারণত নারীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং রূপসজ্জার কার্য ব্যতীত ছেলেরা এটি ব্যবহার করেন না। নারীদের ক্ষেত্রেও বয়সন্ধিকালে রয়েছেন এমন মেয়ে বা তরুণীরা সচারচর লিপস্টিক ব্যবহার করেন না, কারণ সেসময় ঠোঁটের প্রাকৃতিক রঙ ও ভাঁজ, সর্বোপরি সৌন্দর্য অটুট থাকে। লিপস্টিক শুধু পোশাকের সঙ্গেই যে ম্যাচ করে পরতে হবে এমন নয়, লিপস্টিক ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না এরকম অনেকেই আছেন। ছোটবেলায় মায়ের লিপস্টিক লুকিয়ে পরার প্রবণতা সব বাচ্চাদের মধ্যেই থাকে। যে কোনও ঋতুতেই ফ্যাশন ট্রেন্ড হল লিপস্টিক। লিপস্টিকের রঙই চিনিয়ে দেয় আপনি কেমন ধরনের মানুষ। তবে এই লিপস্টিকের জন্যই যে একটি বিশেষ দিন রয়েছে তা লিপস্টিকপ্রেমীরা জানতেন কি? ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক লিপস্টিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ইরাকি বংশোদ্ভূত আমেরিকান মেকআপ-শিল্পী ও হুদা বিউটির প্রতিষ্ঠাতা হুদা কাত্তানের উদ্যোগে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এই দিবসের প্রচলন হয়। বহুল ব্যবহৃত এই সাজের উপকরণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে দিনটি কিন্তু পালন করা যেতে পারে। কেবল সৌন্দর্যচর্চা বা ফ্যাশনই নয়, লিপস্টিকের সঙ্গে ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসেরও গভীর সংযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন বিলাসসামগ্রীর উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও লিপস্টিকের উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়নি। কেননা, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মনে করতেন, লিপস্টিক মানুষের মনোবল বাড়ায়। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ নারী নিয়মিত লিপস্টিক ব্যবহার করেন। আর ঠোঁটে প্রতিদিন লিপস্টিক ব্যবহার করেন এমন একজন নারী সারা জীবনে প্রায় চার কেজি লিপস্টিক খেয়ে ফেলেন! সাজগোজের ক্ষেত্রে লিপস্টিকের ব্যবহার অনেক বেশি। তাড়াহুড়ো করে সাজের বেলায় লিপস্টিকের কথাই সবার প্রথমে মাথায় আসে। এই লিপস্টিক নিয়ে যুগ যুগ ধরে পৃথিবীজুড়ে ঘটেছে নানান কীর্তি-কাণ্ড। আমরা এখানে লিপস্টিকের ইতিহাস, ব্যবহার, ব্র্যান্ডসহ নানান তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনা করবো। লিপস্টিকের ইতিহাস বহু নারীর কাছেই সৌন্দর্য প্রকাশের এক অনিবার্য উপকরণ লিপস্টিক। ঠোঁটে লিপস্টিক না লাগিয়ে তাঁরা বাইরে বের হন না। অথচ একসময় লিপস্টিক ব্যবহার রীতিমতো বিতর্কিত ছিল। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে ৪৪ বছর বয়সের আগে লিপস্টিক ব্যবহারের বিষয়ে আইনগত বাধা ছিল। ১৬৫০ সালে তো লিপস্টিকের ব্যবহার বন্ধের জন্য ব্রিটিশ সংসদে আবেদন পর্যন্ত করা হয়েছিল। শেষ অবধি অবশ্য এর ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। এখানে একটি মজার তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন মাঝেমধ্যে লিপস্টিক ব্যবহার করতেন। যাহোক, লিপস্টিকের উৎপত্তি কিন্তু বহু প্রাচীন। সুমেরীয় সভ্যতায় (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০) এর প্রথম ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার নারীদের মাঝে মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশরীয়রা সামুদ্রিক আগাছা থেকে আরোহিত পার্পল-লাল রং এর এক প্রকার পদার্থের সাথে ০.০১% আয়োডিন, এবং কিছু ব্রোমিন মিশিয়ে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করতেন, যা লিপস্টিক হিসেবে প্রয়োগ করা হতো। রানী ক্লিওপেট্রা তাঁর ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহার করতেন যা তৈরি হতো মেরুন রংয়ের বিটল পোকা থেকে, এর ফলে ঠোঁটে একটি গাঢ় লাল আভা ফুটে উঠতো, এছাড়া বেজ দেওয়া জন্য ব্যবহৃত হতো পিপড়া। আধুনিক লিপস্টিকের বাণিজ্যিক উৎপাদন লিপস্টিক নামের প্রচলন হয়েছে ১৮৮০ সালে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপস্টিক উৎপাদনে ফ্রান্সের নাম উঠে আসে। ১৮৮০ সালে প্যারিসে সুগন্ধি শিল্পেই তৈরি হয় বাণিজ্যিক লিপস্টিক। ১৮৯০ সালের শেষদিকে ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে লিপস্টিক বিক্রি করা শুরু হয় এবং এর প্রসারে বিজ্ঞাপন প্রচারও শুরু হয়। সেসময় লিপস্টিক কাগজের কৌটায় বা টিউবে বিক্রি করা হতো। ১৯১৫ সালে মরিস লেভি সর্বপ্রথম ধাতব কৌটার লিপস্টিক তৈরি করলেন যা ঠেলে উপরে তোলা যায়। তারই হাত ধরে আধুনিক লিপস্টিকের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়। লিপস্টিকটি ছিল সহজে বহনযোগ্য এবং সাধারণ নারীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। যা আমরা আজ 'আধুনিক লিপস্টিক' বলে জানি তার নাম 'সুইভেল-আপ' লিপস্টিক। এটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবন হয় ১৯২৩ সালে। এই লিপস্টিকের উদ্ভাবক জেমস ব্রুস জুনিয়র এটিকে বলেছিলেন 'টয়লেট আর্টিকেল'। যুগে যুগে লিপস্টিকের সঙ্গে সমাজ বাস্তবতা, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্ম জড়িয়ে গেলেও লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও। তারই ধারাবাহিকতায় লিপস্টিকের রঙেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। লিপস্টিকের ব্র্যান্ড আগে প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে লিপস্টিক তৈরি করা হতো। তবে যুগের আধুনিকতার সাথে সাথে লিপস্টিকের উপকরণেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। বর্তমানে আধুনিক উপায়ে অনেক রাসায়নিক দ্রব্য তথা উপকরণ ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে লিপস্টিক। বিভিন্ন মার্কা বা কোম্পানি বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারে নানা উপায়ে তৈরি করছে এসব লিপস্টিক। তারা বিভিন্ন দামে সেগুলো বিক্রিও করছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের মার্কার ও রঙের লিপস্টিক সাধ্য অনুযায়ী ক্রয় করছেন। লিপস্টিকের মার্কার মধ্যে বিশ্বজনীন জনপ্রিয় কিছু ব্র্যান্ড হচ্ছে লরিয়্যাল (Loreal), জরডানা (Jordana), ল্যাকমি (Lakme), গোল্ডেন রোজ (Golden Rose), রেভলন (Revlon), নিওর (Nior), রিভাজ (Rivaj), লোটাস (Lotus), ডেভিস (Davis),জ্যাকলিন (Jackeline) ইত্যাদি। মার্কাভেদে এসব লিপস্টিকের দাম ও গুণগত মানও ভিন্ন হয়ে থাকে। যেভাবে শুরু হয় লিপস্টিকের ব্যবহার সাজসজ্জার ক্ষেত্রে লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা সবসময়ই আকাশচুম্বী। ঠোঁট রাঙ্গাতে সাধারণত নারীরাই লিপস্টিক ব্যবহার করে থাকেন। তবে সময়ের বিবর্তনে এবং কিছু কিছু সমাজে পুরুষদের মধ্যেও লিপস্টিক ব্যবহারের প্রচলন আছে। শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়, ব্যক্তিত্বের বিকাশেও ভূমিকা রাখে লিপস্টিক। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও অনেকে বাড়ির বাইরে যেতেও ঠোঁটে লিপস্টিকের হালকা আভা ছড়িয়ে দিতে ভালবাসেন। ১৯৩০ সালে আমেরিকান অভিনেত্রী ইভ আর্ডেন দাবি করেন, 'যেসব নারীরা লিপস্টিক ব্যবহারে করেন, তাদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।' দীর্ঘকাল থেকেই লিপস্টিকের ব্যবহার করে আসছেন নারীরা। তবে তখনকার দিনে ফল ও গাছের রস থেকে তৈরি রং ব্যবহার করা হতো সাজসজ্জায়। সুমেরীয় সভ্যতা থেকে মিশরীয় সভ্যতা, এরপর রোমান সভ্যতা- নারী এবং পুরুষ উভয়ই ঠোঁট রাঙাতে ব্যবহার করেছে বেরি বা জাম জাতীয় ফল, পান পাতা, লাল সীসা, মাটি, মেহেদি, বিভিন্ন পোকামাকড়, গাছ-গাছড়া কিংবা বিভিন্ন খনিজ। তবে সেসব উপাদান ব্যবহার করা হতো আঠার সাহায্যে। যেন তা ঠোঁটে লেগে থাকে। এরপর উচ্চবিত্ত মেসোপটেমিয়ানরা ঠোঁট রাঙ্গাতে রত্নচূর্ণ ব্যবহার করতো। মিশরীয়রা রঞ্জক পদার্থ যেমন অ্যালজিন, আয়োডিন ও ব্রোমিনের মিশ্রণে লাল রঙ তৈরি করে লিপস্টিক ব্যবহার করত। ফারাও রাণী ক্লিওপেট্রা গাঢ় লাল রঙ ব্যবহার করতেন ঠোঁটে। কোন রঙের লিপস্টিক কী অর্থ বহন করে লাল রঙ লাল লিপস্টিকের আবেদন কখনোই পুরনো হয় না। ষোড়শ শতাব্দীতে রানী প্রথম এলিজাবেথ ছিলেন প্রসাধনীর প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট। তিনি সাধারণত ঠোঁটে লাল রঙ ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। লাল লিপস্টিক যদি কারো প্রিয় হয়ে থাকে তবে তিনি সাহসী তো বটেই, সেই সঙ্গে তাকে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে মনে করা হয়। ধারণা করা হয়, এরা খুব আনন্দ প্রিয়, আত্মসচেতন এবং কাজের ক্ষেত্রে মনযোগী হয়ে থাকে। রেড কালারের লিপস্টিক পছন্দকারী নারীরা অত্যধিক সামাজিকও হয়ে থাকে। গোলাপি রঙ মধ্যযুগে লিপস্টিকের সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে যায়। খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের পর লাল লিপস্টিক পরাকে শয়তানের কাজের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হতো। প্রসাধনী নিষিদ্ধ করার জন্য তৎকালীন সময় পোপ একটি নির্দেশনা প্রচলন করেন। তবে এর ফলশ্রুতিতে লিপস্টিক পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিন্তু তখন লাল বা গাঢ় রঙের পরিবর্তে জায়গা করে নিলো প্রাকৃতিক গোলাপি রঙ। যা নারীদের পাপশূন্যতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেসব নারী গোলাপি রঙের লিপস্টিক পছন্দ করেন, তারা কোমল মনের হয়ে থাকে। পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক ব্যবহারকারী নারীরা দয়ালু এবং যত্নশীল বলে পরিচিত। তারা সাধারণত চমৎকার, মিষ্টভাষী, নিরপরাধ, নরম স্বভাবের হয়ে থাকে। মাঝেমাঝে কিছুটা সংবেদনশীলও। কমলা রঙ কমলা রঙের লিপস্টিক অনেকেই ব্যবহার করেন। এই রং তারুণ্যের বার্তা দেয়। অন্তরের খুশি, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এই রঙের লিপস্টিক। নিজেকে প্রাণবন্ত ও তরুণ দেখাতে এই রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করেন অনেকে। পার্পেল রঙ পার্পেল রঙের লিপস্টিক হাজারো মানুষের মাঝে আপনাকে আলাদা করতে পারে। এই রঙের লিপস্টিক মর্যাদা, অভিজাত্য এবং ক্ষমতার জানান দেয়। তাই জমকালো সাজের সাথে ব্যবহার করতে পারেন পার্পেল কালার লিপস্টিক। নীল বা বেগুনি রঙ সাধারণত এই রঙের লিপস্টিক বেশি ব্যবহার হয় না। তবে যারা এ ধরনের গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করেন তারা অত্যন্ত সাহসী হন বলে ধরে নেয়া হয়। ন্যুড শেড ন্যুড শেডের লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা বেশ কয়েক বছর ধরেই অনেক বেশি। যারা ন্যুড শেড পরতে পছন্দ করেন তারা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা নিজেদের সৌন্দর্য নিয়েও অত্যন্ত সচেতন। ব্রাউন শেড বর্তমানে এই রঙের লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এই রং জানান দেয় নিরপেক্ষতা। আবার সমাজের উলটো স্রোতে যারা হাঁটতে চান তারা না কি ব্রাউন শেডের লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতে বেশি ভালবাসেন। যেকোনো বিষয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহসিকতাও বেশি থাকে তাদের। ৯০ এর দশকে পরিবেশবাদী চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটার ফলে মানুষ তাদের আশেপাশে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাওয়ার পাশাপাশি তাদের সাজগোজেও চেয়েছিল প্রকৃতির ছোঁয়া। তাই নারীরা ঝুঁকে গেলো আর্থ-টোনের লিপস্টিক অর্থাৎ ব্রাউন কালারের দিকে। সে সময় থেকেই ব্রাউন শেডের লিপস্টিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নারীদের কাছে। পিচ শেড পিচ শেডের লিপস্টিক ব্যবহার শুধু অফিশিয়াল কাজেকর্মে নয় বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানেও করতে দেখা যায়। পিচ কালারের লিপস্টিক ব্যবহারকারীরা সাধারণত ভদ্র এবং আশাবাদী স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। কমলা শেড অরেঞ্জ বা কমলা শেডের লিপস্টিক ব্যক্তির মনের আনন্দকে প্রকাশ করে। সাধারণত যারা একটু আমুদে ও উচ্ছল স্বভাবের তারাই ঠোঁট রাঙ্গাতে কমলাকে বেছে নেন। ইউনিক শেড ইউনিক শেড বলতে বোঝানো হয়, যে শেডের ব্যবহার সচরাচর দেখা যায় না, তবে ব্যবহার রয়েছে। কালো, সাদা, সবুজ, বেগুনি যেকোনো রঙই হতে পারে ইউনিক শেড। 'পাংক আদিবাসী সংস্কৃতি' প্রাকৃতিক ধরনের সাজের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধনের বিরোধিতা করে এক নতুন বাঁকের জন্ম দিয়েছে। যা ভেঙে দেয় সৌন্দর্যের ব্যাপারে পশ্চিমা বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিকে। এর ফলে ঠোঁটের সাজে উঠে আসে সাদা, ধূসর, কালো এবং বেগুনি রঙের ব্যবহার। তবে এসব রঙের ব্যবহারের উদ্দীপনার জন্ম নেয় কম বাজেটের বাণিজ্যিক হরর মুভিগুলো থেকে। তাই ইউনিক শেডের লিপস্টিক যারা ব্যবহার করেন তাদের ধরা হয় প্রথাবিরোধী। যারা সমাজের প্রচলিত নিয়মনীতি তোয়াক্কা করে না। তারা সাহসী আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তবে অনেকে তাদের হতাশাগ্রস্ত বা জীবনবিমুখ বলেও মনে করে থাকে। লিপস্টিকের সাতকাহনে মডেল হয়েছেন শাহানা সুলতানা রুমা লিপস্টিকের ধরন লিপস্টিক সাধারণত দুই ধরনের হয়, গ্লসি ও ম্যাট। গ্লসি ১৯৩০ সালে ম্যাক্স ফ্যাক্টর সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপগ্লস তৈরি করে যা তৎকালীন সময়ের চলচ্চিত্র তারকারা ব্যবহার করতেন। প্রকৃতপক্ষে এটি তখন হয়ে যায় হলিউডের গ্ল্যামার আর সিনেমার স্বর্ণযুগের প্রতীক। ত্রিশের দশকে হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তুঙ্গে থাকা লিপগ্লস চলে আসলো সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। সেই থেকে এটি হয়ে গেলো তারুণ্যদীপ্ত আনন্দের প্রতীক। যেসব নারীরা চিরযৌবনা ও সতেজ থাকতে ভালবাসে তারাই গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করে থাকেন। ম্যাট সাধারণত ঠোঁটের সঙ্গে মিশে থাকা লিপস্টিকগুলোই ম্যাট লিপস্টিক। এগুলো ঠোঁটে চকচকে ভাব আনে না। তবে সৌন্দর্য বর্ধন করে ঠিকই। বর্তমানে ম্যাট লিপস্টিকের জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। ধারণা করা হয়, যেসব নারীরা ম্যাট পড়তে পছন্দ করেন, তারা বাস্তববাদী হয়ে থাকে। তাদের আত্মসম্মানবোধও বেশি। লিপস্টিক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম খুব সুন্দর করে সাজলেন কিন্তু একটু লিপস্টিক পরলেন না, দেখতে কি সুন্দর লাগবে? নারীর সাজের প্রাণ হলো লিপস্টিক। এটি সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। কিন্তু লিপস্টিক ব্যবহারের সময় কিছু ভুল পুরো সাজটাই মাটি করে দিতে পারে। সেজন্য জেনে নিতে হবে লিপস্টিক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। তাহলে আর সাজ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক- ম্যাট লিপস্টিকের আগে ময়েশ্চারাইজার ম্যাট লিপস্টিক পরার প্রচলন এখন অনেক বেড়েছে। এটি সহজে ছড়ায় না এবং লেপ্টে যাওয়ার ভয় থাকে না। কিন্তু ম্যাট লিপস্টিক পরলে ঠোঁট হালকা শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ঠোঁটে ম্যাট লিপস্টিক পরার আগে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এতে ঠোঁট অনেক নরম ও সুন্দর থাকবে। লিপস্টিক দেখতেও সুন্দর লাগবে। ঠোঁট কালচে হলে সবার ঠোঁট গোলাপি হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে ডেড স্কিন ও পিগমেন্টেশনের কারণে ঠোঁটের রং কালচে হয়ে যেতে পারে। ঠোঁট কালচে হলে লিপস্টিকের রং ঠিকভাবে ফোটে না। এক্ষেত্রে লিপস্টিক ব্যবহারের আগে ঠোঁটে সামান্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন বেস লাগিয়ে নিন। এরপর ব্যবহার করুন আপনার পছন্দের লিপস্টিক। সরাসরি না লাগিয়ে ব্রাশের সাহায্যে লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। লিপ লাইনার ব্যবহার অনেকে এখন আর লিপ লাইনার ব্যবহার করেন না। এদিকে নিখুঁতভাবে লিপস্টিক পরতে চাইলে লিপ লাইনার ব্যবহার করতে হবে। লিপস্টিক পরার আগে লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁটের বর্ডার লাইন ভালো করে এঁকে নিন। এরপর লিপস্টিক পরুন। লিপ লাইনারের শেড এবং লিপস্টিকের শেড যেন ম্যাচিং থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অতিরিক্ত লিপস্টিক মুছে নিন অনেক সময় লিপস্টিক লাগাতে গিয়ে ঠোঁটে অতিরিক্ত লিপস্টিক দেওয়া হয়ে যেতে পারে। তখন আর দেখতে সুন্দর লাগে না। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত লিপস্টিক মুছে নিতে হবে। সেজন্য ব্যবহার করতে পারেন টিস্যু পেপার। টিস্যু পেপার নিয়ে ঠোঁটের উপর হালকা চেপে লিপস্টিক তুলে ফেলুন। লিপস্টিক কেনার আগে সাজগোজের ক্ষেত্রে লিপস্টিকের ব্যবহার অনেক বেশি। তাড়াহুড়ো করে সাজের বেলায় লিপস্টিকের কথাই সবার প্রথমে মাথায় আসে। কিন্তু লিপস্টিকের শেডটি যদি আপনার সঙ্গে মানানসই না হয় তখন সেই লিপস্টিকের জন্যই আপনাকে মলিন লাগতে পারে। কিংবা ধরুন লিপস্টিক ব্যবহারে আপনার ঠোঁটে কালচে দাগ পড়ে গেল, কী হবে ভাবুন তো? তাই ভালো মানের এবং আপনাকে মানাবে এমন লিপস্টিক কেনা জরুরি। নিজের টোন, ঠোঁটের আকার এবং লিপস্টিকের পিগমেন্টেশন আর মান সম্পর্কে ধারণা থাকলে লিপস্টিক কেনা বেশ সহজ হয়ে যায়। চলুন দেখে নিই নিজের জন্য সঠিক লিপস্টিকটি কিনতে কোন বিষয়গুলো আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে- লিপস্টিকের ধরন ত্বকের বা ঠোঁটের ধরনের ওপর নির্ভর করবে কী ধরনের লিপস্টিক কিনতে হবে আপনাকে। লিপস্টিক বিভিন্ন ধরনের হয়- ফুল ম্যাট, সেমি ম্যাট/ক্রিমি, গ্লসি/লিকুইড। ত্বক তৈলাক্ত হলে গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করলে পুরো মুখেই একটা তৈলাক্ত লুক চলে আসে। ফলে দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না। তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ম্যাট বা সেমি ম্যাট লিপস্টিকই ভালো। যাদের ত্বকের ধরন শুষ্ক প্রকৃতির তারা ঠোঁটে গ্লসি, শিমারি বা ফ্রস্টেড টেক্সচারের লিপস্টিকগুলো ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ত্বক স্বাভাবিক তারা সবরকম লিপস্টিকই অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন।ক্রিমি টেক্সচারের লিপস্টিক শুষ্ক ত্বক বা ঠোঁটের অধিকারীদের জন্য ভালো কাজ করে। যাদের ঠোঁট পাতলা তারাও এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। যদি শীতের সময় লিপস্টিক কিনতে যান বা রাতের কোনো অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতে চান তাহলে গ্লসি লিপস্টিক কিনতে পারেন। রাতের অনুষ্ঠানগুলোতে চেহারায় আলাদা দ্যুতি এনে দেয় গ্লসি লিপস্টিক। শীতকালে কমবেশি সবার ঠোঁটই শুষ্ক থাকে বলে এই ঋতুতে গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করাই ভালো। ত্বকের আন্ডারটোন ত্বকের আন্ডারটোন অর্থাৎ ত্বকের ভেতরকার রং সম্পর্কে জানা লিপস্টিক কেনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ওয়ার্ম আন্ডারটোনের হলে কমলা বা লালচে রঙ ঘেঁষা বাদামি, কমলা, খয়েরি টোনের লিপস্টিকগুলোতে চমৎকার দেখাবে। আর কুল আন্ডারটোনের যারা তাদের লাল, বেগুনি, গোলাপি টোনের লিপস্টিকে দারুণ মানায়। আরও যা যা খেয়াল করবেন কোনো লিপস্টিক কেনার সময় যদি দেখেন লিপস্টিকের সিল ওপেন করা অথবা তা থেকে যদি কোন বিকট গন্ধ আসে তাহলে বুঝবেন এটি মেয়াদোত্তীর্ণ। একটি লিপস্টিকের মেয়াদ থাকে ১ থেকে দেড় বছরের মতো। মেয়াদোত্তীর্ণ লিপস্টিক কোনোভাবেই ব্যবহার করবেন না। আজকাল প্রায় সব কসমেটিকস শপে টেস্টার থাকে। ঠোঁটে লাগানোর আগে টিস্যু পেপার দিয়ে লিপস্টিকটা মুছে নিন। কারণ এটি অনেকেরই ব্যবহৃত। মুছে নিলে ঠোঁটে ইনফেকশন হবার আশঙ্কা থাকবে না। লিপস্টিক ঠোঁটে লাগানোর পর যদি কোনো রকম অস্বস্তি হয় তবে তা যত ভালোই লাগুক না কেন, কিনবেন না। ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার পর আপনাকে মানাচ্ছে কি না, আপনি ভালো বোধ করছেন কি না সব বুঝেশুনে সেটি কেনার সিদ্ধান্ত নিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App