×

পুরনো খবর

নিরাপত্তা দিতে না পারলে চেয়ার ছেড়ে দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৯ পিএম

নিরাপত্তা দিতে না পারলে চেয়ার ছেড়ে দিন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার চবি ক্যাম্পাসে সাংবাদিক-শিক্ষকরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বক্তারা বারবার এ ধরনের হামলা-নির্যাতনের জন্য চবি প্রশাসনের নতজানু নীতি ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের ওপর তাদের মূল সংগঠনের নিয়ন্ত্রণহীনতাকে দায়ী করে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন।

তারা চবি প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শিক্ষার্থী-সাংবাদিক-শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে চেয়ার ছেড়ে দিন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস) ও চিটাগং ইউনিভার্সিটি এক্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের (সিইউজেএন) উদ্যোগে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে চট্টগ্রাম বিম্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমান ও সঞ্চালনায় ছিলেন চবিসাসের সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু। এতে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক ম. শামছুল ইসলাম, চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, চবি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী, খন্দকার আলী আর রাজি, শাহাব উদ্দিন নিপু, চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও সিইউজেএন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সিইউজেএন এর সভাপতি, চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ হামিদউল্লাহ. চবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ ও সিইউজেএন এর সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ, সমকালের রিজিওনাল এডিটর সারোয়ার সুমন প্রমুখ।

চবি সংবাদদাতা জানান, সমাবেশে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালান, এরপর আপনারা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালান। আপনারা সত্যিই ছাত্রলীগ করেন কি-না আপনাদের আচরণ দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। আমি উপাচার্য মহোদয়ের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি কেন তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো সাংবাদিকবান্ধব মানুষ। উনি তো কখনো এ ধরনের ঘটনা মেনে নেবেন না। আমরা জানতে পেরেছি আপনার ছত্রছায়ায় এখানে নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানান অনিয়ম হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারেন, আমরা প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। তাই একদিনের মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামছুল ইসলাম চবি প্রশাসন ও উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলেন, দুঃখের বিষয় হলো- আজকে বহিষ্কৃত, অছাত্ররা হলে অবস্থান করছে। এতে করে আপনাদের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়েছে। আপনার এ চেয়ার কিছুদিন পরে থাকবে না। মোশাররফের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসে বহিষ্কার করুন। যদি না পারেন, তাহলে প্রশাসনের চেয়ার ছেড়ে দিন। ছাত্রলীগ নেতাদের বলতে চাই, আপনারা যদি সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আপনারাও সাংবাদিকদের রোষানলে পড়বেন।

মানবন্ধনে সাংবাদিকদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ্ বলেন, বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে দাঁড়ানোটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্র সকলের জন্য বিব্রতকর। বিচারের কথা শুধু মুখে না বলে প্রশাসনকে কাজে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা সবসময় হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। মোশাররফের ওপর হামলা একেবারেই পরিকল্পিত। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নামকাওয়াস্তে শাস্তি হয়েছে। আপনি যদি শাস্তি দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা বুঝে নেব আপনি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এমনকি আমরা দেখেছি সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা বহিষ্কার হয়েও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটা প্রশাসনের মদদ ছাড়া সম্ভব না।

সিইউজেএন এর সভাপতি, চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ হামিদউল্লাহ বলেন, এই ক্যাম্পাসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ব্যবহার করে ছাত্রলীগ নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও জয় বাংলা শ্লোগানকে ব্যবহার করে নিয়োগ বানিজ্য থেকে শুরু করে সকল অনিয়মের মধ্যে এদের হাত আছে। শিবির থেকে ছাত্রলীগ কারও চরিত্র পরিবর্তন হয়নি।

সভায় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের ব্যুরো চিফ শিমুল নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনে দলাদলি এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, এখন তারাও কথা বলতে এবং ব্যবস্থা নিতে ভয় পান। তারাই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে এই উশৃংখলদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। একদিন তারা আপনাদেরও মাথা ভেঙে দিবে। সেদিনও আমরা লিখবো।

সমকালের রিজিওনাল এডিটর সারোয়ার সুমন উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বেশিদিন এ দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। তবে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেবেন কি-না সেটা তো আপনার সিদ্ধান্ত। ছাত্রলীগের মাথা না হয়ে বরং সকল শিক্ষার্থীর মাথা হোন। এরকম শাস্তির ব্যবস্থা করুন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাংবাদিকদের গায়ে হাত তুলতে সাহস না পায়।

মানববন্ধনে চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও সিইউজেএন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, এই প্রশাসন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাই, আজ আমরা আর বিচার চাইতে আসিনি। কারণ আমরা জানি কোনো বিচার পাবো না।

আমরা শুধু নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। চবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ ও সিইউজেএন এর সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন এ ক্যাম্পাসে নতুন ঘটনা নয়। হামলাকারীরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পেয়েছে। মনে রাখবেন, আমরা লিখতে যেমন জানি, প্রতিবাদ জানাতেও জানি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: চবি প্রতিনিধি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App