×

পুরনো খবর

পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম

পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন
পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন

Woman Stomach Ache

পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন
পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন

প্রতীকী ছবি

পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন
পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন
পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে যে সময় সতর্ক হবেন

বিশ্বের বেশিরভাগ নারী প্রতিমাসে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করেন। ব্যথাটি সাধারণত তলপেটে খিঁচুনি ধরে থাকা ব্যথার মতো অনুভূত হয়। তলপেটের সঙ্গে সঙ্গে এটি পিঠ, উরু, পা ও শরীরের অপরাপর অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পিরিয়ড চলাকালীন প্রায় পুরো সময়টা জুড়েই এ ব্যথা থাকে। তবে অনেক সময় এ ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং এর কারণে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। খবর বিবিসির।

এসময় অনেকে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ও মাথাব্যথায়ও ভুগতে পারেন।

তবে পিরিয়ডের ব্যথা বিভিন্ন নারীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ও মাত্রায় হয়। আর সবার শরীরের একই জায়গায় ব্যথা হয় না ও সবার ব্যথার তীব্রতাও একই রকম হয় না।

পিরিয়ডের সময় ব্যথা হয় কেন? ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও প্রজণন স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ড. কেটি ভিনসেন্ট যিনি পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে গবেষণা করছেন।

তিনি বলেন, ৩০-৫০ শতাংশ নারীর ঋতুস্রাব যন্ত্রণাদায়ক হয় ও এর মধ্যে অনেকের যন্ত্রণা এতো বেশি হয় যে, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়।

তিনি আরো বলেন, পিরিয়ড চলাকালে যেসব শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়, তার প্রতিটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে।

যেমন তিনি ব্যাখ্যা করছেন, যখন একজন নারীর মাসিক হয়, তখন জরায়ু সংকুচিত হয় যাতে শরীরের ভেতর থেকে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। আর যখন মাথা ঘোরার মতো অনুভূতি হয়, সেটি প্রকৃতপক্ষে জমাটবাঁধা রক্তের নির্গমনের কারণে হয়।

এছাড়া, অনেকের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শরীরে প্রচণ্ড প্রদাহ হয়।

জরায়ু গঠনকারী টিস্যু থেকে এ সময় এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যার কারণে ব্যথা হয়।

সেই সঙ্গে মানবশরীর প্রোস্টাগ্ল্যানডিন্স নামে এক ধরনের পদার্থ উৎপাদন করে, ঋতুস্রাবের সময় যার উৎপাদন বেড়ে যায়।

প্রোস্টাগ্ল্যানডিন্স হচ্ছে এক ধরনের চর্বিযুক্ত যৌগ যা কোষে উৎপন্ন হয় ও দেহের বিভিন্ন কাজে তাদের অংশগ্রহণ থাকে। যেমন, পিরিয়ডের সময় তারা জরায়ুর পেশীকে সংকুচিত করে ও প্রদাহ তৈরি করে, যার কারণে ব্যথা হয়।

প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস কোন হরমোন নয়, কিন্তু এদের কাজের ধরণের কারণে এরা হরমোনের মতোই আচরণ করে।

ড. ভিনসেন্ট বলেছেন, মাসিকের সময় যে ব্যথা এবং ফোলাভাব তৈরি হয় তাতে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার মধ্যে প্রোস্টাগ্ল্যানডিনস একটি বলে আমরা বিশ্বাস করি।

কিন্তু এই প্রদাহ ও ব্যথার কাজটা কী? ড. ভিনসেন্ট বলেন, প্রদাহের অনেক ইতিবাচক কার্যক্রম আছে। কেউ যখন আহত হয়, তখন প্রদাহ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া শুরু করে যা টিস্যুর পুনর্গঠনে সহায়তা করে এবং টিস্যুর এই পুনর্গঠনের সময়টাতে সেটিকে যাতে সুরক্ষা দেয়া হয় তার বোধ আপনার মধ্যে তৈরি করে ক্ষতস্থানে ব্যথার মাধ্যমে। এটা একটা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া যা দেহকে সেরে উঠতে বা পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। তাই, ঋতুস্রাবের সময় সব ধরণের ব্যথার জন্য দায়ী হচ্ছে প্রোস্টাগ্ল্যানডিন্স যা জরায়ুকে পরিপূর্ণভাবে সেরে উঠতে সহায়তা করে এবং মাসিকের সব তরল যাতে জরায়ু থেকে বের হয়ে যায় তা নিশ্চিত করে।

কিন্তু সমস্যা তখন হয়, যখন এই ব্যথা বা প্রদাহ অতিমাত্রায় হয়।

যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাবের সম্ভাব্য কারণ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এনআইএইচ এর তথ্য যন্ত্রণাদায়ক পিরিয়ডের কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করেছে, যা নিম্নরূপ:
  • এন্ডোমেট্রিওসিস
  • ফাইব্রয়েড
  • তামা দিয়ে তৈরি ইনট্রটেরিন ডিভাইস(আইইউডি)
  • পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (পিআইডি)
  • প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম (পিএমএস)
  • যৌন মিলনের কারণে সংক্রমিত রোগ

পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ে কখন উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? যেসব নারীরা ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করেন তাদের অনেকে ব্যথানাশক বা প্রদাহনাশক ওষুধ খেয়ে কিছুটা আরাম অনুভব করতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় অন্য কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকার কারণেও ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে।

তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে জরায়ুতে টিউমার বা ইউটেরিন ফাইব্রয়েড, যা শুধু ফাইব্রয়েড নামেও পরিচিত। এগুলো থেকে ক্যান্সার হয় না।

এই ফাইব্রয়েড জরায়ুর ভেতরে বা এর চারপাশে হতে পারে এবং এর কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ব্যথা হতে পারে।

পেলভিক ইনফ্ল্যামাটরি ডিজিজ বা পিআইডি এর কারণেও ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। পিআইডি হচ্ছে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।

সাধারণত যৌন মিলনের কারণে সংক্রমিত রোগের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পিআইডি হয়, যেমন ক্ল্যামাইডিয়া ও গনোরিয়া। এছাড়া এ ধরণের রোগে আক্রান্ত কারো সাথে যৌনমিলনের কারণেও পিআইডি হতে পারে।

জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত পদ্ধতি যেমন ইনট্রটেরিন ডিভাইসের কারণে ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। গর্ভধারণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই ডিভাইসটি জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।

কিন্তু চিকিৎসক ও গবেষকরা মনে করেন, তলপেটে ব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিস।

এন্ডোমেট্রিওসিস কী? অ্যান্ড্রু হর্ন স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের স্ত্রীরোগ ও প্রজনন বিজ্ঞানের অধ্যাপক, যিনি এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণ নিয়ে গবেষণা করছেন।

তিনি বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিসকে আমরা বর্ণনা করি এভাবে যে, এন্ডোমেট্রিয়াম নামে জরায়ুর ভেতরের এক ধরণের টিস্যু যখন জরায়ুর বাইরে চলে আসে এবং অনাকাঙ্খিত স্থান যেমন পেলভিক, ডিম্বাশয়, মূত্রাশয় বা অন্ত্রে তাদের পাওয়া যায়।

৬-১০ শতাংশ নারী এই রোগে আক্রান্ত হয়। তলপেটে ব্যথা ছাড়াও এই রোগের কারণে গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন সময়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এন্ডোমেট্রিওসিসের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। কিন্তু যারা এতে আক্রান্ত হন তাদের জীবনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

অ্যান্ড্রু হর্ন বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিসের পরিণতিকে আমাদের ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। যারা এতে আক্রান্ত হন, তাদের জন্য এটা মারাত্মক একটি রোগ। কিন্তু এই রোগের কারণে কেন ব্যথা অনুভব হয়, তা এখনো আমরা খুব একটা বুঝে উঠতে পারিনি।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীদের বড় সমস্যা হচ্ছে এর চিকিৎসা সহজ নয়।

তিনি আরো বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গ প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়, কারণ এগুলোকে ঋতুস্রাবের সময় স্বাভাবিক উপসর্গ হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। আরেকটি বড় সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে, এই রোগের উপসর্গ অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার উপসর্গের সাথে মিলে যায়, যেমন পেটের অসুখ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিস্টেম এবং মূত্রাশয়ের রোগ। এ কারণে এ রোগের চিকিৎসা সহজে করা যায় না।

এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গ অধ্যাপক হর্ন বলেন, এই রোগের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে ব্যথা। তবে, মাসিকের বাইরেও মলত্যাগ, মূত্রত্যাগ বা যৌনমিলনেনর সময়ও এই ব্যথা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, শুধু স্ক্যান বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিওসিস ধরা পড়ে না। শুধু ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমেই এই রোগ সনাক্ত করা যায়। এটি ছোট একটি অস্ত্রোপচারের মতো যেখানে চিকিৎসক পেটে এন্ডোমেট্রিওসিস আছে কিনা তা সনাক্ত করতে তলপেটে ছোট একটি ছিদ্র তৈরি করে একটি পর্যবেক্ষক যন্ত্র বা ল্যাপারোস্কোপ প্রবেশ করান।

এন্ডোমেট্রিওসিসের কোনো নিরাময় নেই। চিকিৎসার মাধ্যমে এর উপসর্গ থেকে কিছুটা কমিয়ে আনা যায় মাত্র। এন্ডোমেট্রিয়াল গ্রোথ বা জরায়ুর ভেতরের বাড়তি টিস্যু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। অনেক সময় হিসটেরেকটমির মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ করা হয়। এছাড়া এর হরমোনজনিত একটি চিকিৎসাও আছে। কিন্তু এন্ডোমেট্রিওসিস গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই রোগের একটি নিরাময় খুঁজে বের করা। এর চিকিৎসায় ওষুধ বা কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বের করা, যা এই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে ও অনেক নারীকে ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App