×

পুরনো খবর

জৌলুস হারাচ্ছে নিশ্চিন্তপুরের ঐতিহ্যবাহী হলুদহাটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০৫:০৮ পিএম

জৌলুস হারাচ্ছে নিশ্চিন্তপুরের ঐতিহ্যবাহী হলুদহাটা

ছবি: ভোরের কাগজ

হলুদ ঔষধিগুন সম্পন্ন মসলা হিসেবে একটি জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত মসলা ফসল। এছাড়াও হলুদের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। মসলার জগতে হলুদের রয়েছে নানা গুণাবলি। স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে রঙের ক্ষেত্রেও হলুদ রাখছে সমান অবদান। অন্যদিকে গুণাবলির দিক থেকেও আছে ব্যাপক ভূমিকা। হলুদ মূলত আদা গোত্রীয় পরিবারের সদস্য। গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক ধরনের মসলা জাতীয় ফসল। এ ছাড়া কাঁচা হলুদে ত্বকের রুপরেখা, কালো দাগসহ ত্বকের রুক্ষতা কমাতে হলুদ বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। অন্যদিকে কোথাও কেটে গেলে নিয়মিত হলুদ খেলে তা দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এ ছাড়া শরীরের নানা ধরনের ব্যথা কমাতেও হলুদ বেশ কার্যকর। জাফরান মিশ্রিত দুধে হলুদের এক চিমটি মিশ্রণ ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এ ছাড়া মানসিক অবসাদ দূর করতে, সর্দি কাশি কিংবা জ্বরের ক্ষেত্রে হলুদে রয়েছে প্রাকৃতিক নানা ঔষধি উপাদান।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর হাটে হলুদ বিক্রয় করতে আসা কৃষক সহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর আমার হলুদের ফলন ভালো, হাটে হলুদের দামও বেশ ভালো পেয়েছি। দেশি হলুদ প্রকার ভেদে প্রতি কেজি বাজার মূল্য ১৫০ থেকে ২২০, বিদেশী হলুদ প্রতি কেজি বাজার মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। হলুদ হাটার আড়ৎদার তপন কুমার বাটুল জানান, দেশের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে বড় আমাদের এই নিশ্চিন্তপুর হলুদ হাটা। ব্যবসায়ীদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত এই হাটটি। দেশ স্বাধীনের আগেই প্রতিষ্ঠিত নিশ্চিন্তপুরের হলুদহাটা। এখনও এখানে ৬০ টির বেশি হলুদের আড়ৎ রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি বড় হলুদের মিল রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫শ মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা রয়েছে এই হলুদ হাটায়। আবহমান কাল থেকে সপ্তাহের দুই দিন সোম ও শুক্রবারে বসে এই হাট। বাকী ৫ দিনেও আড়তে চলে বেঁচাকেনা। প্রতি বছরই সরকারি ভাবে হাট ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত সরকার পাচ্ছেন রাজস্ব। ইজারার মেয়াদকাল থাকে চৈত্র মাসের ৩০ তারিখ থেকে পরবর্তি বছরের বৈশাখের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। দেশের অনেক দুর-দুরান্ত থেকে আসেন পাকারি ব্যবসায়ীরা। এই অঞ্চলের হলুদ যাচ্ছে সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, এবং উত্তর বঙ্গের নাটোর, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে।

হলুদ চাষী উপজেলার একতারপুর গ্রামের হায়দার আলী বলেন, চৈত্র মাস কন্দ (হলুদের কান্ড) লাগানোর উপযুক্ত সময়। সাধারণত ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগাতে হয়। ৫০ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২৫ সে.মি. দূরে দূরে ৫-৭ সে.মি. গভীরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি হেক্টরে ২হাজার ৫শ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়। কন্দ লাগানোর পর ভেলী (নালা) করে দিতে হয়।

উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের চাষিরা ব্যাপক পরিমানে হলুদ চাষ করছেন। অল্প খরচে ও কম পরিচর্যায় বেশি ফলন পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এর চাষ করে থাকেন। এছাড়াও পুরো বছর জুড়েই এর চাহিদা রয়েছে। এই জেলায় চাষের পরিমান বাড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর হলুদের ফলন বেশি হয়েছে। আশানুরূপ ফলন ও বাজার ভাল হওয়ায় ঔষধীগুন সম্পন্ন ফসলের চাষ করতে আগ্রহী কৃষকগণ।

স্থানীয় প্রবীন ব্যবসায়ী রতন মিয়া স্মৃতি বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, হাট সংলগ্ন এলাকার শহর বর্ধিত হওয়ায় এবং নতুন নতুন ইমারত নির্মানের কারণে হাটটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পুরাতন ঐতিহ্য হারাচ্ছে। আগে আমরা দেখেছি এই হলুদ হাটার রাস্তার দুই ধারে শতবর্ষী রেইনট্রি গাছের শীতল ছায়ায় বসে ব্যবসায়ীরা হলুদ বেঁচাকেনা করতেন। পরবর্তিতে পাকা দালান কোঠা নির্মান করে আড়ৎদারি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। ঐ সময়ে নির্মাণ করা বিল্ডিংগুলো হলুদের দালান বলেই পরিচিত ছিল। যা এখনও বহন করছে ঐতিহ্যবাহী হলুদ হাটার পরিচিতি। হলুদ হাটার ব্যবসায়ীদের দাবি, হাটটির পুরাতন ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখে ব্যবসা পরিচালনা ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে হাটটির জৌলুস ফিরিয়েয়ানা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App