×

পুরনো খবর

মানুষের চেয়ে ক্ষমতাশীল হয়ে উঠবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম

মানুষের চেয়ে ক্ষমতাশীল হয়ে উঠবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স!
একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই বলা হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একসময় মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান না হলেও, ক্ষমতাশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। শুধু তাই নয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর কারণে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স- (Artificial Intelligence-AI) কি মানুষের জন্যে বিপদজনক হয়ে উঠছে? চ্যাটজিপিটি নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাজারে আসার পর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভাষাভিত্তিক এই চ্যাটবট তার তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে। যেমন: রচনা, চকরি বা ছুটির আবেনদ, যোকোনো রিপোর্ট, গান-কবিতা ইত্যাদি এই মুহূর্তের মধ্যে লিখে দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ক্ষমতা দেখে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি-নির্ধারক, বিনিয়োগকারী এবং নির্বাহীরা নড়ে চড়ে বসেছেন। এক হাজারের মতো ব্যক্তি এক খোলা চিঠিতে এই প্রযুক্তির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করেছেন। তারা বলেন, গবেষণায় এখনই রাশ টেনে না ধরলে সমাজ ও মানবজাতি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই এখনই সতর্ক থাকা উচিৎ। ভীতির কারণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলেন, ধরা যাক আমরা একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দায়িত্ব দিলাম প্রেসক্রিপশন লিখে দেয়ার জন্য। সে লিখেও দিলো। তার এই লেখা পর্যন্ত আমরা অনেকভাবে পরীক্ষা করে নিলাম। এর ভালো দিকটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় যা আমাদের বর্তমান সময়ের এথিকসের সাথে সংঘাতপূর্ণ, তখন কী হবে! এই ভুল তো মানুষও করেছে। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমরা এই জায়গাতে দেখতে চাই না। চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই নিয়ে উদ্বেগ ঠিক এই কারণেই। এই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সুলিখিত উত্তর তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে একজন ছাত্রকে সুশিক্ষিত করে তোলার যে মূল লক্ষ্য সেটা ব্যাহত হতে পারে বলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা মনে করেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই নিয়ে হঠাৎ এতো আলোচনা কেন? প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। এর গাণিতিক তত্ত্ব অনেক আগে আবিষ্কার হলেও এই বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের জন্য ম্যাথম্যাটিক্যাল মডেলের অভাব ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে কম্পিউটিং পাওয়ার বৃদ্ধির পাশাপাশি, এই প্রযুক্তি সহজলভ্য হয়ে ওঠার কারণে এই খাতের নেতারা এর নেতিবাচক দিক নিয়েও সতর্ক থাকতে চাইছেন। ঢাকায় একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলছেন, প্রত্যেক দশ বছরে কম্পিউটিং-এর ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাচ্ছে। যেহেতু এই প্রযুক্তি মানুষ সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করে ফেলেছে এবং সেসব তথ্য মানুষের চেয়েও দ্রুত গতিতে প্রসেস করতে পারছে, তার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনের ওপরে এর প্রভাব পড়ছে। এতো ভয় কেন? প্রযুক্তি নিয়ে ভয়ের কারণ হচ্ছে মানুষের যেসব কাজ তার একটা বড় অংশ আগামীতে মেশিনের হাতে চলে যাবে। অনেক জায়গাতে সেটা হয়েও গেছে। এরফলে একটা হচ্ছে কাজ হারানোর ভয়। আরেকটা ভয় হচ্ছে এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন মনে করেন। ভয়ের মধ্যে রয়েছে- ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর, ফেক ইভেন্ট, এমনকি ফেক রিলেশনশিপ। হঠাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর অগ্রগতির কারণ কী যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের একজন টেকনিক্যাল ম্যানেজার তানজিম আহসান বলেছেন, সুপার কম্পিউটিং পাওয়ারের কারণে এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। গত কয়েক বছরে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আগে কোনো কোম্পানি যদি ইন্টেল সিপিও বানাতো ওরাই শুধু জানতো এটা কিভাবে বানাতে হয়। এটা ছিল বিশেষ একটা জ্ঞান। কিন্তু এখন এই সেমিকন্ডাক্টর একটা পণ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা যেমন যে কোনো জায়গা থেকে একটা পেরেক কিনতে পারি। এখন সেমিকন্ডাক্টরের বিষয়টাও সেরকম হয়ে গেছে। এই শিল্পের এ ধরনের বিস্ফোরণের ফলে যে কেউ যে কোনো জায়গা থেকে এটা কিনে একটা প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে সেটার ওপর যেকোনো ধরনের মডেলিং ও টেস্টিং করতে পারে। অ্যামাজন, গুগল এবং মাইক্রোসফট এই তিনটি বড় কোম্পানি ক্লাউড সার্ভিস তৈরি করার কারণে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে একটা মুদির দোকানও সেটা ব্যবহার করতে পারে যা তার জন্য আগে অনেক ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু এখন এই সুপার কম্পিউটিং পাওয়ারের কারণে যে কেউই এসব কাজ করতে পারছে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গণতন্ত্রায়নও হয়েছে। এক সময় ধারণা করা হতো- একই ধরনের যেসব কাজ বারবার করতে হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পক্ষে শুধু সেসব কাজই করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি মানুষের করে দেয়া প্রোগ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এখন অনেক কিছুই করা সম্ভব যা মানুষ ভাবতেও পারেনি। চ্যাটজিপিটির সাথে রসিকতা করলে সে বুঝতে পারে। শুধু তাই নয়, ব্যবহারের সাথে সাথে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন নতুন জিনিস শিখতেও পারে এবং এর মধ্য দিয়ে সে নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে থাকে। বিপদ ডেকে আনছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এআই জগতে গডফাদারদের একজন জেফ্রি হিন্টন। তিনি কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যেসব উন্নতি হচ্ছে তার বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এআই-মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। শুধু তাই নয়, এআইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব কাজ করেছেন তার জন্য তিনি অনুতাপও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এআই চ্যাটবট থেকে এমন কিছু বিপদ হতে পারে যা রীতিমত ভয়ংকর। ৩০ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে আরো একটি শঙ্কার কারণ হচ্ছে যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের-এআই কারণে অনেক মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়তে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই এর কারণে সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে পারে। আরেকটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে , প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ আশঙ্কা করছে যে আগামী তিন বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে তারা চাকরি হারাবেন। এদিকে, প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন-বর্তমানে মানুষ যেভাবে জীবনযাপন করে ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের-এআই-এর কারণে নাটকীয়ভাবে তা বদলে যেতে পারে-ভালো বা মন্দ উভয় অর্থেই। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স জগত ও পৃথিবীর নেতৃত্ব যাদের হাতে তারা এর জন্য কতোটা প্রস্তুত?   আরও পড়ুন:

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App