×

পুরনো খবর

স্বপ্নের সুরমা সেতুর উদ্বোধন ২৯ অক্টোবর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৩৮ পিএম

স্বপ্নের সুরমা সেতুর উদ্বোধন ২৯ অক্টোবর

উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ‘সুরমা সেতু’। ছবি: ভোরের কাগজ

উদ্বোধন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে ছাতক দোয়ারা বাজার উপজেলায়। উপজেলার আশপাশের এলাকার মানুষও সেতু এলাকায় এসে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। ছাতকের উত্তর পাড়ের দুটি ইউনিয়ন ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, ছাতক পৌরসভার একাংশ, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, আকিজ গ্রুপ, মেঘনা পেপার মিলসহ মেঘালয়ের পাদদেশের শিল্পনগরী হিসেবে সিলেট বিভাগে রয়েছে ব্যাপক খ্যাতি।

আগামী শনিবার (২৯ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের শতাধিক সেতু উদ্বোধন করবেন। সেই তালিকায় সুরমা নদীর উপর সুরমা ব্রিজসহ উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ছাতক দোয়ারাবাজার সড়কে আরো ৯টি ব্রিজ উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সুরমা ব্রিজ, সংযোগ সড়ক, টোলপ্লাজাসহ ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২শ ৫০কোটি টাকা।

ব্রিজ উদ্বোধন নিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা শিক্ষক রিপন দে, আশিষ রহমান ও দিলোয়ার হোসেন জানান, ব্রিজটা আমাদের জন্য কতোটা জরুরি তা বলে শেষ করা যাবে না। এই ব্রিজ দুই পাড়ের মানুষের মেলবন্ধন দীর্ঘকালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। ব্রিজ উদ্বোধনের আনন্দে যেন আমাদের উপজেলায় উৎসবের বাতাস বইছে।

সুহেল আহমদ নামের আরেক ব্যক্তি জানান, গভীর রাতে আমার মায়ের হঠাৎ বুকে ব্যাথা হলে দোয়ারা বাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাই। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসকরা জানান দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি মাকে নিয়ে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স যোগে রওনা করি। সুরমার পাড়ে ফেরিঘাটে এসে দেখি ফেরি নাই। মা বুকে ব্যাথায় ছটফট করেন। মনে হচ্ছিল তখন মাকে মাথায় করে নিয়ে এপাড়ে আসি। একদিকে অক্সিজেন সমস্যা। অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাতে পারছি না। এভাবে প্রায় ঘন্টা পর ফেরি আসে। সেদিন বুঝেছিলাম আমাদের জন্য সুরমা ব্রিজ কতোটা জরুরি। সেদিনের কষ্ট আমি জীবনেও ভুলবো না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের ছাতক দোয়ারাবাজারের এমপি সাহেবকে সালাম জানাই। শুধুমাত্র উনার একান্ত প্রচেষ্টায় দুই পাড়ের মানুষ যোগাযোগের সব দিকে নিরাপদ হবে।

তিনি আরো জানান, দুই-তিন বছর পূর্বে এক বৃদ্ধ মুমূর্ষু রোগী সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখিন হোন।

প্রায় দেড় যুগে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে । চলতি বছরের জুন মাসে ব্রিজটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও শতাব্দির ভয়াবহ বন্যার প্রচণ্ড স্রোতে সংযোগ সড়ক ভেঙে পানিতে ভেসে যাওয়ায় ব্রিজটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় ও কাজের মান অতিশয় নিম্নমানের কারণে বানের পানিতে ভেসে যায় সেতু সংযোগ সড়কটি। সড়কে যোগাযোগের প্রধান সুরমা ব্রিজ যেন স্থানীয় এলাকাবাসীর মনে ঈদের আনন্দ বইতে শুরু করেছে এমনটাই জানিয়েছেন অনেকেই। সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কের ভাঙা স্থানে ৫টি ভাগে ১০৮টি রিং বসানো হচ্ছে। পরবর্তীতে এখানে স্থায়ীভাবে কালভার্ট বসানো হবে। সব মিলিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সওজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পথে পরিবহন সুবিধের কারণে শিল্পাঞ্চল ছাতকে ভারী ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পাশাপাশি ছাতক ও দোয়ারাবাজার অঞ্চলে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকারের শস্যাদি সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা আর্থিক লাভবান হবেন। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। বয়ে আনবে এবং দুটি উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দুটি উপজেলার।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, বেশ কিছু দিন আগেই সুরমা সেতু মূল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর উভয় পাড়ে ২.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সংযোগ সড়ক ও টোলপ্লাজা নির্মাণ কাজের প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের মধ্যে ছাতক থেকে মাধবপুর অংশে ১.৬০ কিলোমিটার এবং দোয়ারবাজার সড়কের সাথে সংযোগ ৮শ’মিটার নতুন সড়ক ও রাস্তা নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সূত্রে আরো জানা যায়, সুরমা ব্রিজের উভয়পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যায় পড়ে সওজ। বাজারদরের চেয়ে তিনগুণ বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করে ভূমি মালিকেরা তারমধ্যে আকিজ কোম্পানি, বারকাপন, বাঁশখলা গ্রামের সমস্যা ছাড়াও উচ্চ আদালতে ১৭টি মামলা দায়ের করেন। ফলে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ আটকে যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ভূমি মালিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে উচ্চ আদালতে মামলা উত্তোলণের (নো অবজেকশন) ব্যবস্থা করেন। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধের মাধ্যমে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ চালু করা হয়।

রাজনৈতিক ও অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে জানুয়ারীতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ। সেতু নির্মাণে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো ৩ বছর। শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির ৪টি স্তম্ভ (পিলার) নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকরের আমলে সুরমার উপর এই সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অজ্ঞাত কারণে প্রকল্পটি এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়। ২০১০ সালে এই সেতুটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি নতুন সংশোধিত প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ওই আবেদনের পর আবার নতুন করে সেতু নির্মানে ২০২০ সালে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সওজের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এক নেকে) ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা সেতুর পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নেভিগেশন, ভূমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়কসহ কয়েক দফায় প্রকল্প অনুমোদন করে ১শ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি যোগাযোগের উপযোগী করে তোলা হয়।

সুরমা ব্রীজ উদ্বোধন নিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯ অক্টোবরে ভার্চ্যুয়ালি দেশে শতাধিক ব্রিজ উদ্বোধন করবেন। সেই তালিকায় রয়েছে আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত ছাতকের সুরমা ব্রীজসহ আরো ৯টি ব্রিজ।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, অসম্পূর্ণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে। ছাতকের সুরমা ব্রিজসহ ছাতক দোয়ারা বাজার উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৯টা ব্রিজ এক সঙ্গে উদ্বোধন হবে। বিশেষ করে সুরমা ব্রিজ উদ্বোধনে দুই উপজেলা আরো উন্নত হবে। যোগাযোগসহ ব্যবসা বাণিজ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App