×

জাতীয়

বাহাদুর শাহ পার্কে অপরাধচক্র, করানো হয় ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪০ পিএম

বাহাদুর শাহ পার্কে অপরাধচক্র, করানো হয় ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি

বাহাদুর শাহ পার্কের পথ শিশুদের লিপ্ত করা হচ্ছে নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে

'আব্বা মারা যাওয়ায় মা অন্যজনকে বিয়ে করেছে। মোহাম্মদপুরে থাকে তারা। মা যেতে বলে কিন্তু আমি গেলে সৎ বাবা আমাকে আর মাকে মারে। তাই সেখানে যাইনা। ছোট বেলা থেকেই আমি এখানে ভিক্ষা করি। সুযোগ পেলে চুরিও করি। চুরি না করলে ওরা (চক্র) আমাকে মারে। কিন্তু লকডাউনে আগের মতো ভিক্ষা নেই। তাই খাবারও নেই। পার্কে লোক আসে না, তাই না খেয়েই পার্কে ঘুমাতে হয়। রাতে আমার খুব কষ্ট হয়। ঘুমাতে পারিনা অশ্রু নয়নে বাহাদুর শাহ পার্কে এভাবেই ভোরের কাগজকে নিজের চিত্র তুলে ধরে হৃদয় (১০)।

হৃদয় আরও জানায়, চুরির পেশা বাদ দিতে চাই সে। কিন্তু চুরি বাদ দেওয়ায় কেরাণীগঞ্জের মামুন (২৫) নামের এক ব্যক্তি তার পায়ুপথে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুড়িকাঘাত করে। তাকে জোড় করে মহিলাদের ব্যাগ থেকে চুরি করানো হয়। করানো হয় মাদকাসক্ত। আর চুরি না করলে আঙুল কেটে নেওয়া বা মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। পাশেই কম বয়সী একটি মেয়ের (৫) হাতে ড্যান্ডির প্যাকেট। নাম জিজ্ঞেস করতেই দৌড়ে পালায় সে। কি কারণে মাদক সেবন করছে মেয়েটি নিজেও জানে না জানাল হৃদয়।

গুলিস্থানের এক মাদ্রাসা থেকে পার্কের কয়েকজন মহিলা ও কেরাণীগঞ্জের কয়েকজনের সম্মীলিত একটি চক্র ভুলিয়ে ভালিয়ে আনে সজলকে (৮)। তাকে প্রথমে মাদক দ্রব্য ড্যান্ডি খাওয়ানো শেখায়। এরপর জোর করেই তাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ও চুরি করানো হয়। কিন্তু লকডাইনে ভিক্ষা বৃত্তিতে তেমন রোজগার নেই বলে তাকে মারধর করা হচ্ছে বলে জানায় সজল।

জানা যায়, পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বাহাদুর শাহ পার্কে বর্তমানে ২০-২৫ জন শিশু-কিশোর আছে। অন্যান্য সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে পুরান ঢাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের বিনোদের একমাত্র খোলা জায়গা এটি। উদ্বাস্তু এ পথশিশু ও কিশোররা পার্কের আশেপাশে চকলেট, ফুলের মালা, প্লাস্টিক বিক্রি করত। এছাড়া সবার কাছে হাত পেতে করত রোজগার। আবার সুযোগ পেলেই মোবাইল, ব্যাগ, কানের দুল বা গলার হার ছিনতাই  করে পালাত। এর বিনিময়ে তাদের চক্র থেকে পেত খাবার ও ড্যান্ডি। কিন্তু লকডাউনে পার্কে নেই মানুষ। নেই ভিক্ষা। তাই চক্র থেকে খাবারও নেই। ইফতারের সময় যদি কোন ব্যক্তি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খাবার নিয়ে আসে শুধুমাত্র তাহলেই সারাদিনে একবেলা খেতে পায় এ পথশিশুরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক ডিন ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এ পথ শিশুরা সোস্যাল ব্যাহিভার ও ক্রিমিনাল ব্যাহিভার বুঝে না। তারা মাদক সেবন ও চুরিকে অপরাধ হিসেবে মনে করে না। মাদক সেবনের কারণে তারা মানষিকভাবে ভারসাম্যহীন থাকে। তারা চুরির মত ছোট ছোট অপরাধ করতে করতে একসময় বড় সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়। অনেক রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার হয়। তাদের জন্য প্রয়োজন যথাযথ পুনর্বাসন কেন্দ্র।

লালবাগ জোনের এডিসি হাফিজ আল আসাদ বলেন, পথ শিশুদের নিয়ে মূলত কাজ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়। তাদেরকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হলেও তারা আবার ফিরে আসে। তবে আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পুনর্বাসনের জন্য পথ শিশুদের একটি ডাটা কালেকশন করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App