×

জাতীয়

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার, বিচার দাবি নির্মূল কমিটির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার, বিচার দাবি নির্মূল কমিটির
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার, বিচার দাবি নির্মূল কমিটির

‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার রাষ্ট্রদ্রোহিতাতুল্য অপরাধ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের বক্তারা এ দা

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকারকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে বিচারের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। শনিবার (১০ এপ্রিল)  স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অস্বীকার রাষ্ট্রদ্রোহিতাতুল্য অপরাধ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের বক্তারা এ দাবি জানান।

ওয়েবিনারে নির্মূল কমিটি বলেছে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধুর সেই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুমোদন করেন। যে কারণে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নি এ কথা যারা বলে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে অস্বীকার করে, আন্তর্জাতিক আইনে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বৈধতা অস্বীকার করে এবং ইতিহাস অস্বীকার করে। যারা এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম এমপি এবং প্রধান বক্তা ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে বক্তব্য লাখেন নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর-এর সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, নির্মূল কমিটি আইটি সেল-এর সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর পুত্র আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখা সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণকান্তি চৌধুরী, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখা সভাপতি সমাজকর্মী নূরুদ্দিন আহমেদ, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।

শাহরিয়ার কবির বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হচ্ছে স্বাধীনতাকামী কোন দেশের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ়োক্তি বা দাবি। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন স্বাধীনতাকামী জাতির অবিসংবাদী নেতা হিসেবে, নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি হিসেবে। আন্তর্জাতিক আইন অন্য কাউকে স্বাধীনতার ঘোষণা করার অনুমোদন করে না। কোনও দেশে কেউ যদি তা করেও থাকেন তার কোন আন্তর্জাতিক বৈধতা নেই।

ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, আমাদের সংবিধান ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সৃষ্টি এক রক্তক্ষয়ী ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রেক্ষিতে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তারিখ থেকে কার্যকর এবং এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক হুবহু স্বাধীনতার ঘোষণা দৃঢ়ভাবে অনুমোদন ও সমর্থন করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে দেয়া ক্ষমতাবলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর অস্থায়ী সংবিধান ঘোষণা করা হয়, যেখানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের স্বীকৃতি রয়েছে। একইভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সমর্থন ও স্বীকৃতি মেলে সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম বাক্যে এবং সংবিধানের ১৫০ (৩) অনুচ্ছেদে। যেখানে বলা হয়েছে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং তাহা আইন অনুযায়ী যথার্থভাবে প্রণীত, প্রযুক্ত ও কৃত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল’। সে কারণে ৮ম সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি  বদরুল হায়দার চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র-কে বলেছেন জেনেসিস অব কনস্টিটিউশন এবং এ কারণে আমাদের সংবিধান ইউনিক।

এডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম এমপি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের সূতিকাগার বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এ জায়গা বাংলাদেশের অস্তিত্বের শিকড়। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের বিরোধিতা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।  তিনি বলেন, ২৬ বছর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় ছিল। তারা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে এবং সংবিধানে বিভিন্ন অনুচ্ছেদ কাঁটাছেড়া করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষের চিন্তা চেতনা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো সবই রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিও দ্বিধাগ্রস্থ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কখনও হেফাজত, কখনও জামায়াত, কখনও নেজামে ইসলাম- একেক সময়ে একেক নামে আসে এবং বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা করে। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেও তাদের উত্তরসূরিরা এখনও শক্তিমান এবং প্রশাসন, শিক্ষাক্ষেত্রসহ সমাজের সকল স্তরে তারা অপতৎপরতা অব্যহত রেখেছে।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আমাদের প্রথম সংবিধান। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করেছে আমাদের ২৬৯ জন গণপ্রতিনিধি। সেজন্য তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৭ বছর ধরে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস পালন করছি কিন্তু রাষ্ট্র এই দিবস পালন করছে না। ধর্মনিরপেক্ষতাসহ মুক্তিযুদ্ধের দর্শনগত যেসব বিষয়বস্তু বঙ্গবন্ধু সংবিধানে এনেছেন, সেগুলো তার দল বর্তমানে সম্মুখে ব্যক্ত করতে অনীহা প্রকাশ করছে। এসব বিষয় অগ্রাহ্য করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার বেশিদূর এগোতে পারবে না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার। এগুলো আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারছি না। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের বিরোধিতা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে নিরব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App