×

জাতীয়

বরকত-রুবেলের সম্পদ হিসাব ‘অতিরঞ্জিত’, দাবি স্বজনের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ০৪:৩৯ পিএম

বরকত-রুবেলের সম্পদ হিসাব ‘অতিরঞ্জিত’, দাবি স্বজনের

চাঁদাবাজির মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে ভুল তথ্যের মাধ্যমে ফাঁসানো হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।

শনিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) ‘রুবেল-বরকত’ পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুবেলের কন্যা যাওয়াতা আফনান রাদিয়া এসব দাবি তোলেন।

লিখিত বক্তব্যে যাওয়াতা আফনান রাদিয়া বলেন, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকে। একপক্ষ আরেক পক্ষকে শায়েস্তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকতায় আবার বাবা ও চাচার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত হয়েছে।

রাদিয়া বলেন, ভুল তথ্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে আমরা সামাজিকভাবে অপরাধী হয়ে গেছি ও ন্যয় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একটি চক্র এই মামলাকে আলোচিত এবং বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।

[caption id="attachment_270950" align="aligncenter" width="700"] শনিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) ‘রুবেল-বরকত’ পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রুবেলের কন্যা যাওয়াতা আফনান রাদিয়া।[/caption]

তিনি বলেন,আমার বাবা ২০০০ সাল থেকে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার বাবা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি কাজে বিপরীতে ব্যাংক লোন দ্বারা পরিচালিত হয়। বাবার নামে ও কোম্পানির নামে যে জমি রয়েছে তার পরিমাণ ১৫৯ বিঘা এবং এই জমিগুলো তিনটি ব্যাংকে মর্গেজ দেওয়া। ১৫৯ বিঘার মধ্যে চর অঞ্চলে ৩০ বিঘার মত জমি রয়েছে। যার প্রতি বিঘা মূল্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

‘আমার বাবার তিনটি ব্যাংকে আউটস্টান্ডিং হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লোন রয়েছে জানিয়ে রাদিয়া বলেন, যেখানে তার ব্যাংক হিসেবে ৫-৭ কোটি থাকা কি অস্বাভাবিক?

আমার কাকা সাজ্জাদ হোসেন বরকতের নামে ২০০ বিঘা জমি আছে, যা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সরকারি কাজের বিপরীতে ব্যাংকে মর্গেজকৃত এবং লোনের আউটস্টান্ডিং প্রায় ২০ কোটি টাকার মত। এছাড়া চর অঞ্চলে তার একটি এগ্রো ফার্ম আছে যা ৪০০ বিঘার জমির উপর।

বাবা-চাচার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বর্ণনা তুলে ধরে রুবেলের মেয়ে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে একই মামলায় সিআইডি করলো ২০০০ কোটি টাকার মামলা। আবার দুদুক করলে ৭২ কোটি টাকার মামলা। দুদক ২ বছরে অনুসন্ধান করে প্রায় ৮০০ বিঘার মত জমি পেল। সেখানে সিআইডি ৫৭০৬ বিঘা জমি পেল কিভাবে? দুটি সংস্থা দুইরকম হিসাব দেখাচ্ছে। তাই দুটি সংস্থা যদি এক জায়গায় বসে কাজ করে কিংবা একে অপরকে তথ্য সরবরাহ করে তাহলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে। ৫ হাজার ৭০৬ বিঘার জমির  পরিমাণ যে ভুল তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। সিআইডি কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, যা পরিকল্পিত।

২০২০ সালের ৭ জুন গ্রেফতারের পর পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে বললো বদরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা দুইদিন পর ৯ জুন সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ অস্ত্রসহ সকল মামলার এজাহারে বলা হয়েছে বাইপাস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাদিয়া বলেন, 'আমার বাবা কাকার নামে ৪টি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আছে। তারপরেও তাদের নামে মিথ্যা অন্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছে। এইসব অস্ত্র মামলা মিথ্যা এবং প্রভাবিত হয়ে করা। কেননা ১৩ জুন এই অস্ত্র মামলা সহ ৩টি মামলায় ৫ জনের একসঙ্গে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। ভিন্ন ৩টি মামলায় ৫ জন আসামীকে একইসময় এক সঙ্গে জবানবন্দি হয় একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে। অথচ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি করার সময় প্রত্যেক আসামীকে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক আলাদা আলাদা ৩ ঘন্টা সময় দিতে হয়। ম্যাজিস্ট্রেট নিজে জজকোর্টে স্বাক্ষী দেওয়ার সময় বলেছে, যে এটা সম্ভব নয়। অথচ এরপরও তিনি নিজেই প্রভাবিত হয়ে এই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়েছেন।

'আমার বাবা ও চাচাকে গ্রেফতারের পর পর তাদের নামে ১২টি মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৭ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন করে জোরপূর্বক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সার্কেল এসপি ও ডিবি বসে স্বীকারোক্তিমমূলক জবানবন্দি করায়। গ্রেফতার করার পর থেকে রিমান্ড চলাকালীন সময় আমার বাবা ও চাচাকে থানা বা ডিবি অফিসে না নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। থানার ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখলে তার প্রমাণ মিলবে। তারা থানার আসামী অথচ থানায় নেওয়া হয়নি। আমার চাচা এই অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কোর্টে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। আপনারাই চিন্তা করেন কতটা অমানুষিক নির্যাতন করলে একটা মানুষ এই সব করতে বাধ্য হয়?’ বলেন রুবেলের মেয়ে।

যাওয়াতা আফনান রাদিয়া আরও বলেন, আমাদের বাসা ও অফিসে তল্লাশীর নামে পুলিশ যে তান্ডব করেছে তা খুবই দুঃখজনক। বাসায় যখন তল্লাশি করা হয় তখন আমাদের ভাইবোনের ঈদের নতুন টাকা পর্যন্ত নিয়ে যায়। অফিস থেকে ২টি লকার থানায় নিয়ে যায়। যার মধ্যে থাকা স্বর্নালঙ্কার ও নগদ অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়। থানার সিসি টিভি ফুটেজে তার প্রমাণ মিলবে।

তাই সব ঘটনা অনুসন্ধান করে সত্য প্রকাশের জন্য সবাদ মাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান রুবেলের কন্যা যাওয়াতা আফনান রাদিয়া।

তিনি বলেন, ২০০০ কোটি টাকার মামলা কে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে যা অনভিপ্রেত। মানি লন্ডারিং মামলা ডকুমেন্টারি মামলা। এই মামলায় বলা হয়েছে আব্বু ও কাকা মিলে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আব্বু ও কাকার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই সব অপপ্রচার চালাচ্ছে যাতে আব্বু ও কাকার জামিন না হয়।

আয় বহির্ভূত কোনো কিছু না পেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের গল্প সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রাদিয়া।

সম্মেলনে রুবেলের ছেলে আদিয়াত হাসান রাফিম ও বরকতের মেয়ে ইসরাত জাহান আদ্রিতি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App