×

জাতীয়

নামকাওয়াস্তে সিলেবাস!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:২৭ এএম

নামকাওয়াস্তে সিলেবাস!

চলতি বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য নামকাওয়াস্তে সিলেবাস প্রস্তুত করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে কর্মশালার মাধ্যমে এ সিলেবাস প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পরীক্ষা হবে নামকাওয়াস্তে, তাই সিলেবাসও করা হয়েছে সে রকমই। ছোট করা এ সিলেবাস দেখা যাবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে। নতুন সিলেবাসে মাধ্যমিকে সব বিষয়ে গড়ে ৩০টি এবং উচ্চ মাধ্যমিকে গড়ে ৩৮টি ক্লাস হবে। এরপর পরীক্ষা নেয়া হবে।

এর আগে কাটছাঁট করে পরীক্ষা দুটির সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সিলেবাস বেশি হয়ে গেছে বলে অসন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, সিলেবাস আরো ছোট করতে হবে। মন্ত্রীর ওই নির্দেশের পরই এনসিটিবি সিলেবাস ছোট করে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সেই ছোট করা সিলেবাসের আদ্যপান্ত নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। এনসিটিবিতে হওয়া ওই বৈঠকে শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, মাধ্যমিকে সব বিষয়ে গড়ে ৩০টি এবং উচ্চ মাধ্যমিকে গড়ে ৩৮টি ক্লাস উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করে দেয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান (শিক্ষাক্রম) ভোরের কাগজকে বলেন, যেটুকু না পড়লেই নয়, শুধু সেটুকু অধ্যায় দিয়েই নতুন করে বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। ছোট হওয়া সিলেবাসে সব বিষয়েই প্রশ্নের বিভাজন ও নম্বর কাঠামো ঠিকই থাকবে। অর্থাৎ যে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে, সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। তবে ইংরেজি বিষয়ে প্রশ্নের কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আসবে। এর মধ্যে ইংরেজির গ্রামার অংশের নেরেশন, বাক্য গঠনসহ বেশ কিছু অংশ বাদ যাবে। পাশাপাশি ইংরেজিতে রচনাও লিখতে হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, নামকাওয়াস্তে সিলেবাসটি প্রণয়ন করা হয়েছে। কারণ পরীক্ষা দুটোতে কোনো অটোপাস দেয়া হবে না। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় বসতেই হবে। পরীক্ষাও হবে নামকাওয়াস্তে। এজন্য প্রতিটি বিষয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অধ্যায় নির্বাচন করে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মাধ্যমিক স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে দাবি তুলেছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মতো তাদেরও পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাস দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এ দাবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এর আগে করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের অটোপাসের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণিতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর জের ধরে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও একই দাবি তুলেছেন। দিনকয়েক আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কিছুটা পিছিয়ে জুন এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। তবু শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অটোপাসের দাবি তুলেছে।

অটোপাসের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে-বিপক্ষের আলোচনায় বলে, কোভিড-১৯ এর কারণে ১১ মাসের বেশি সময় স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা করতে না পারায় পরীক্ষায় ভালো ফল করা সম্ভব নয়। সিলেবাস কমিয়ে আনা হলেও সেটি পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল দেয়া হোক। তবে এর বিপরীতে ঢাকার একটি স্কুলের একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষা বাতিল নয় বরং সে পরীক্ষা দিতে চায়। পিএসসি ও জেএসসির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল দেয়া হলে সেটি ভালো আসবে না বলে জানায় সে।

মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ অটোপাসের পক্ষে মত দিলেও অনেকেই এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তবে শিক্ষাবিদরা বলেছেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য যদি অটোপাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক। তাদের মতে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হলেও তারা তাদের পুরো দুই বছরের পড়াশোনা এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করেছিল। শুধু পরীক্ষা নেয়াটা সম্ভব হয়নি। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটাও হয়নি। যার কারণে ভবিষ্যতে তারা সমস্যায় পড়তে পারে বলে মত দিচ্ছেন তারা।

শিক্ষাবিদরা বলেছেন, অটোপাস আসলে একটি বিশেষ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়। গেল বছর কোভিডের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে তাদের অটোপাস দেয়া হয়েছে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় আরেকবার অটোপাস দেয়া হয়েছিল। সে বছর যুদ্ধের মতো একটি বিশেষ অবস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি উন্নয়নের দিকে এবং টিকা দেয়াও শুরু হতে যাচ্ছে, তাই শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হতে পারে। পড়াশোনাও শুরু হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ৬০ কর্মদিবস পরে শুরু হবে চলতি বছরের মাধ্যমিক এবং ৮৪ কর্মদিবস পরে শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে অটোপাস দেয়ার কথা ভাবাই যায় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App