শুনানিতে হাসানুল হক ইনুকে হাসতে দেখে ‘ক্ষেপে’ গেলেন আইনজীবী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ট্রাকচালক সুজন হত্যা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ৫ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক মো. সবুজ রহমানের আবেদনে ঢাকা মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান এ আদেশ দেন।
এর আগে নিউমার্কেট থানায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড শেষ হয় ইনুর। এদিন বিকাল ৪টায় পুলিশের হেলমেট ও জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। এরপর ট্রাকচালক সুজন হত্যায় মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা ইনুকে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনে বলেন, হাসানুল হক ইনু এই মামলার ৬ নম্বর আসামি। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও উস্কানিদাতা। তাকে ১০ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের পরিচয় ও ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে সহযোগিতা করেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। আর রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে ইনুর জামিন চান আইনজীবী মো. মহিবুর রহমান মিহির। প্রায় ১৫ মিনিট শুনানি নিয়ে বিচারক তাকে ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানিতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে হাসতে দেখে ‘ক্ষেপে’ যান আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি বলেন, ইনু হাসছেন কী করে? কারা হাসে? যারা বিপ্লবী, যারা আন্দোলন করে। তিনি তো স্বৈরাচারের দোসর, উনি কী করে হাসেন?
ক্ষুব্ধ আইনজীবী আরো বলেন, শেখ হাসিনা না হয় তার বাবাকে মেরে ফেলার কারণে এই জাতির ওপর ক্ষুব্ধ। বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলায় তিনি মানসিকভাবে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এনারা কেন স্বৈরাচার হলেন? তারা কি ইতিহাস জানেন না?
অপরদিকে ইনুর জামিন আবেদনকারী আইনজীবী মিহির বলেন, ইনুর রাজনৈতিক ইতিহাস পুরোটাই বিপ্লবের। ১৯৭০ সালে তার বাবা যে কারখানায় চাকরি করতেন, সেখানে তিনি ছাত্র আন্দোলন করায় বাবা চাকরি হারান। এই ছাত্র আন্দোলনে (জুলাইয়ের) ইনুর সমর্থন ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে কোটা উঠিয়ে শুধু ১০ ভাগ রাখার পরামর্শও দেন তিনি।
এই বক্তব্যের পর আদালতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করলে আইনজীবী মিহির আর কথা বলতে পারেননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় সুজনের। এ ঘটনায় তার ভাই রফিকুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মোহাম্মদপুর থানা ও নিউমার্কেট থানার মামলার পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্যের’ অভিযোগেও ইনুর বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরেকটি মামলা হয়েছে। গণআন্দোলনে সরকার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণের পর গত ২৬ অগাস্ট তিনি গ্রেপ্তার হন।
হাসানুল হক ইনু ২০১৪-২০১৯ মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটির প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেও তিনি হেরে যান।