অধ্যাদেশ অনুমোদন
বিশেষ নিরাপত্তা পাবেন না বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার জন্য প্রণীত আইন বাতিল করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তার সুবিধা পাবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ রহিত করে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ায় এমন তথ্য জানা গেছে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ আইনটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করে।
প্রসঙ্গত, বিগত সরকারের আমলে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ (২০০৯ সালের ৬৩ নম্বর আইন) প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। ওই আইন অনুসারে ২০১৫ সালের ১৫ মে তারিখে বিশেষ নিরাপত্তা ও সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারি করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯ জারি করা হয়েছিল। পরে ২০১৫ সালে এই আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারি করা হয়। কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য আইনটি করা হয়েছিল, যা একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সব বৈষম্য দূর করতে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করেছে। বর্তমানে সংসদ না থাকায় এ আইন রহিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা পরিষদ ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশের’ খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের আইনি যাচাই (ভেটিং) সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়াও অনুমোদন দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা’ এবং কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছিল। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ আইনের আওতায় প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যমান আইনের আওতায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের’ নিরাপত্তা প্রদানসংক্রান্ত বিধানগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাই এ আইনের কিছু বিধান বিলোপসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এই সরকারটা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আউটকাম। নিরাপত্তা সংস্থা এরকম বিশেষ নিরাপত্তার দরকার আছে বলে মনে করে না। আর এটাকে বৈষম্যমূলক মনে করা হয়েছে, সেটার ভিত্তিতে এটা রহিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ প্রণয়ন করে সরকার। পরে বিষয়টি ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) আইন-২০২১’ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে এই আইনের আওতায় বিশেষ বাহিনীর নিরাপত্তা পান বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা। গত ২৫ আগস্ট ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ এবং ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১’ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচ আর এস) সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান এ রিট আবেদন করেন। এ বিষয়ে আদালতে এখনো শুনানি হয়নি। তবে তার আগেই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইনটি বাতিল হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ এসএসএফ নিরাপত্তা পাবেন না। একই সঙ্গে বাতিল হবে নিরাপদ আবাসনসহ সরকার থেকে অন্য সুবিধাও।