আয়নাঘরের বর্ণনা দিলেন মাইকেল চাকমা
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ এর সাবেক নেতা মাইকেল চাকমা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আয়নাঘর নামের গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ ৫ বছর ৩ মাস মুক্তি মিলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ এর সাবেক নেতা মাইকেল চাকমা। মুক্তি পাওয়ার পর বন্দি দিনগুলোর লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন মাইকেল।
২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে গোয়েন্দা পরিচয়ে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় মাইকেল চাকমাকে। কালো কাপড়ে বেঁধে ফেলা হয় মুখ। সেদিনের বর্ণনা দেন মাইকেল।
তিনি বলেন, প্রথম দিন নেয়া হয় ছোট্ট এক অন্ধকার কুঠুরিতে। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন সেই গুহায় ছিল না কোনো আলো-বাতাস। আয়না ঘরের সেই বর্ণনা হার মানায় থ্রিলার সিনেমাকেও।
আরো পড়ুন : খুন-গুমসহ আয়নাঘরের মতো সব অপকর্মের বিচার হবে: ড. ইউনূস
মাইকেল চাকমা জানান, শুরুর দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু মারধর করা হয়নি। তবে যেভাবে এবং যে পরিবেশে বন্দি করে রাখা হয় তা অত্যন্ত অমানবিক এবং ভয়ংকর। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। অনেকটা গুহার মতো সে জায়গা। সেখানে থাকলে মানুষ যেমন কিছুই দেখে না, ঠিক সেই রকম।
মাইকেল জানান, আয়নাঘর নামক বন্দিশালায় অসংখ্য মানুষকে দেখেছেন। সেখানে অনেক মানুষ আটক ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন দুইজন। তাদের একজনের নাম সাইদুল আরেকজন এরশাদ। সাইদুলের বাড়ি ছিল রংপুরে। এরশাদের বাড়ি ঢাকার কচুক্ষেতে। আরো দুজনের নাম তিনি শুনতে পেয়েছেন যাদের দেখেননি। তবে তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই মাইকেল চাকমার। তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ৪-৫টি বন্দিশালায় রাখা হত বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সেখানে কাউকে দেখার বা কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ছিল না। তবে গোসল করতে নেয়ার সময় বাথরুমের ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় অনেককে দেখেছেন। তাদের কারো চুল পাঁকা, দাড়ি পাঁকা। কারো বয়স কম, কারো বেশি।
আয়নাঘর থেকে ফিরে মাইকেল চাকমা জানতে পারেন, তার পিতা আর বেঁচে নেই। পুত্র শোক বুকে নিয়ে তিনি মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, মাইকেল চাকমা আর জীবিত নেই ধরে নিয়ে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানও সম্পন্ন করেছে পরিবার।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ৭ আগস্ট মুক্তি পান পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফ এর নেতা মাইকেল চাকমা। এখন জড়িতদের বিচার চান তিনি।