ভেবেছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গেছে, লাশ পেলেন মর্গে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:২২ পিএম
জসিম উদ্দিন সরকার
- গুলিবিদ্ধ লাশটি অটোরিকশা চালক জসিমের
- ঢামেক মর্গে রয়েছে আরো ৫ বেওয়ারিশ লাশ
জসিম উদ্দিন সরকার (৩২) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগেরর দিন গত ৫ আগস্ট বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি তিনি। ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগও করতে পারেননি জসিমের প্রথম স্ত্রী বানেছা বেগম।
তিনি (প্রথম স্ত্রী) ভেবেছিলেন, জসিম হয়তো দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গেছে। কিন্তু কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান। স্বামীর নাম্বারে ফোন দিলে রিসিভ করেন অন্য একজন। পরে জানতে পারেন আজমপুর এলাকায় জসিম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেছিলেন ফোন রিসিভ করা ওই ব্যক্তি।
এরপর ওই ক্লিনিকে জসিমকে খুঁজে না পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে জানতে পারেন- ওই ক্লিনিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে রাখা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ১০ দিন পর শুক্রবার ঢামেক মর্গে গিয়ে খুঁজে পান স্বামীর মরদেহ। দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে আছেন ভেবে এতোদিন নিজেকে শান্তনা দিলেও স্বামীর লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বানেছা বেগম।
বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, আমগো একা কইরা চইলা গেলা, আমগো দেখবো কেডা। কেন গেছিলা ওইহানে (আজমপুর)। কারা মেরে ফেললো আমার স্বামীরে। আমরা বাঁচবো কিভাবে? জানতে চাইলে বানেছা বেগম বলেন, জসিমের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর গ্রামে। বর্তমানে ১ম স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে উত্তরখান ময়নারটেক এলাকায় থাকেন।
তিনি আরো বলেন, জসিমের দ্বিতীয় স্ত্রী নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তারা প্রথমে ভেবেছিলেন, জসিম হয়তো দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে আছেন।
গত ১৩ আগস্ট জসিমের ফোনে আবার কল করলে অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি কলটি রিসিভ করেন এবং তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট জসিম উত্তরা আজমপুর এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এরপর থেকে জসিমের ফোনটি তার কাছে। পরবর্তিতে ওই ক্লিনিকে গিয়েও জসিমকে পাওয়া যায় না। একপর্যায়ে জানতে পারেন, সেখানে বেশ কয়েকজন মারা যাওয়ার পর লাশগুলো ঢামেক মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
সেই খবরে শুক্রবার সকালে মর্গে এসে স্বামী জসিমের মরদেহ দেখতে পান। মূলত জসিমের পরনের লাল শার্ট ও নেভি ব্লু জিন্স প্যান্ট দেখে সনাক্ত করেন তিনি। চেহারা কিছুটা বিকৃত হয়ে গেছে। ঢামেক মর্গের ইনচার্জ রামু চন্দ্র দাস জানান, সহিংসতার ঘটনায় শুক্রবার একটি মরদেহ সনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার আল মামুন আমানতসহ দুটি মরদেহ সনাক্ত করে স্বজনরা নিয়ে গেছে। এখনো আরো ৫টি বেওয়ারিশ লাশ মর্গে রয়েছে।