উপদেষ্টাদের প্রতিক্রিয়া
নতুন বাংলাদেশ তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কয়েকজন উপদেষ্টা। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারেরও চেষ্টা করবেন তারা।
ড. আসিফ নজরুল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। যে পশুশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা যেন সেই শক্তির মতো হয়ে না যাই। তাহলে আমাদের ছাত্র-জনতা যে অভাবনীয় একটা সুযোগ আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে সেটার অর্জন ও মাহাত্ম্য মøান হয়ে যাবে। সেটা যেন না হয়, সবাইকে মনে রাখতে হবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা জানেন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একটা ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে দেশে এবং এটাই স্বাভাবিক। কারণ ১৫ বা ১৭ বছর একটা স্বৈরচারী শাসন ছিল। একটা অন্ধকার যুগ ছিল, মানুষের মনে খুব অনেক যন্ত্রণা জমে ছিল। সেটা আউট পাস হয়েছে। কিন্তু তারপরও সেটা অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। যেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক পুলিশ সদস্য, অনেক সংখ্যালঘু মানুষের আর্তনাদ শুনেছি। অনেক স্টোরি আছে যা আমি নিজে শুনেছি। এটা কোনোভাবে প্রত্যাশিত না। আমাদের ক্রোধ সংবরণ করতে হবে। আইনগতভাবে যারা দোষী আছে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর বলেন, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন। এর আগে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করা প্রয়োজন।
আরেক উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সবার সম্মতিতে এমন একটা সরকার গঠন করতে
পেরেছি, যেটি সারাদেশে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই সরকারকে যিনি নেতৃত্ব দেবেন তিনি বাংলাদেশের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে এ সরকার বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে পারবে। পাশাপাশি নতুন সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা নিতে প্রস্তুত রয়েছি আমরা।
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ছাত্রদের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিল, জনগণের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিল, সেগুলোকে সংবিধানে সংযুক্তের মাধ্যমে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। এই প্রত্যাশা রাখছি। আপনার বয়স কম, অভিজ্ঞতা কম সেক্ষেত্রে আপনার যে চ্যালেঞ্জ সেটা কীভাবে মোকাবিলা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো পৃথিবীতে তরুণ প্রজন্মের যে জাগরণ হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি। বিভিন্ন দেশে ২৭ বছর বয়সে কারো কারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নজিরও আছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি। আমি মনে করি আমাদের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা কর্মস্পৃহা দিয়ে মোকাবিলা করব।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার বলেন, আমাদের অনেক দায়বদ্ধতা। সুতরাং, সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। এখনো আমরা সবাই এক সঙ্গে বসতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে বসে সব বিষয় ঠিক করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আগে এই সরকারকে ছাত্রছাত্রীদের যে আন্দোলনে দাবি ছিল তা পূরণ করতে হবে। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যারা নেমেছিল তারা একেবারেই সাধারণ মানুষ। সবার দাবির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সব মিলিয়ে আমাদের অনেক দায়বদ্ধতা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের সাধারণ জনগণ যে কষ্ট পাচ্ছে, সে দিকগুলো নিয়েও গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার ৫০ ভাগই তরুণ, কিন্তু এই তরুণদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। তবে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় এই তরুণ প্রজন্মকে সামনে নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করব।
শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে, তারা কি নতুন সরকারেও কাজে লাগবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করব, অবশ্যই তারা আমাদের কাজে লাগবে। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে তারাও যে প্রাসঙ্গিক হতে পারে, আমরা সেটি এতদিন ভাবিনি। এই প্রজন্ম নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করেছে। তারা অবশ্যই দেশের দায়িত্ব নেবেন। তরুণরাই এক সময়ের দেশের নেতা।
চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে। কাজটা যদি সততার সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করা যায়, সেই কাজটি তো কঠিন কোনো বিষয় নয়। বিশ্বের অনেক দেশ গণতান্ত্রিক হয়েছে, অনেক দেশে জবাবদিহিতামূলক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ তো মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখেছে। তাহলে আমার দেশে কেন পারা যাবে না? আমরা শুরু করেছি, দেখা যাক কোন দিকে যাই। শপথ নেয়ার আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার, বৈষম্য দূর করা, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা নতুন এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।