পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কোটা আন্দোলন তাদের হাতে নেই। এখনকার কর্মসূচি বিএনপি-জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে হচ্ছে। তাদের লাশের রাজনীতির কারণেই ৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। 

বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।

ড. হাছান বলেন, কোটা আন্দোলনের মধ্যে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত চাচ্ছিল দেশে লাশ তৈরি হোক। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তারা এই লাশগুলো তৈরি করেছে। ৬ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ওই দিন সারাদেশে যে নৈরাজ্যের অপচেষ্টা হয়েছে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা।

তিনি বলেন, একই দিনে বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল ভাঙচুর, মেট্রোরেলে হামলা হয়েছে। এগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাজ না। বিএনপি-জামায়াত ঢুকে এসব কর্মকাণ্ড করেছে। আন্দোলনকারীরা এখন তাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। উনার বক্তব্য বিকৃত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন অধ্যাপক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত কোটা আন্দোলনের কর্মসূচির ওপর ভর করে মাঠ অস্থিতিশীল করতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না। তারেক রহমান নির্দেশ দিচ্ছে আন্দোলনে ঢুকে পড়তে। যারা কোটা নিয়ে করছো সেই আন্দোলন আর তোমাদের হাতে নাই। ছিনতাই হয়ে গেছে। তোমাদের নেতারা বিক্রি হয়ে গেছে। বিএনপি-জামায়াত লাশ চেয়েছিল, পেয়েছে। তাদের ক্যাডাররা নেমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে ৬ জনকে খুন করেছে। সরকার তদন্ত করছে। যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। 

ড. হাছান বলেন, কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। সরকার এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাই তোমাদের প্রতি অনুরোধ, চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করো। সরকার তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু তোমাদের আন্দোলন বিএনপি-জামায়াত ছিনতাই করেছে। তোমাদের নেতারা বিএনপির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। বিএনপি-জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে কাজ করছে। তোমরা সতর্ক থাকবে, যাতে বিএনপি-জামায়াতের হাতের পুতুলে পরিণত না হও।

ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝেই কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আগের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সরকার বাতিল করেছে। গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষা সম্পূর্ণ কোটাবিহীনভাবে হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই কোটা ছিল। এর আগেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী ও জেলা কোটা ছিল।

ড. হাছান বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল না। যেটি আমাদের সরকার পূর্ণবহাল করেছিল। পরে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আমাদের সরকার কোটা বাতিল করে। এরপর একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্টে গিয়েছিল। তখন হাইকোর্ট সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে পূর্ণবহালের কথা বলেন।

তিনি বলেন, এখানেই শেষ নয়, হাইকোর্টের এই রায় আবার সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের স্থিতাদেশ অনুযায়ী কোটা নাই। কোটার ভিত্তিতে চাকরি হবে না। সেই পরিস্থিতিই বিরাজমান। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। এটি জানার পরও যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেটি দুরভিসন্ধি। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে সেখানে সম্পৃক্ত করছে। এরপর সেখানে বিএনপি-জামায়াত ঢুকে কোটা আন্দোলনে কর্মসূচি ঠিক করে দিচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-রংপুরসহ সমগ্র দেশে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন লাঠিসোঁটা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নেমেছে। চট্টগ্রামে শিবির বাহিনী মানুষের রগ কেটেছে। চট্টগ্রামে ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের ফেলে দেয়া হয়েছে। সেখানে তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হয়েছে। সেখানে একজন সাধারণ ছাত্রী, একজন সাধারণ ছাত্র এবং একজন ছাত্রদলের নেতা। ছাত্রদলের নেতা ওখানে গেল কেন? এতেই প্রমাণ হয়, তারা ওখানে ঢুকেছে। ঢাকায় একজন পথচারী ও আরেকজন ছাত্র নিহত হয়েছেন।

ঘটনাপ্রবাহ নির্দেশ করে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার সমাবেশ করেও কোনো কর্মসূচি দেয়নি। রাত সাড়ে ১২টায় তারা গায়েবানা জানাজা ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। এর মানে লাশের রাজনীতি। এরা মানে, এই কর্মসূচি কোটা আন্দোলনকারীদের নয়। এই কর্মসূচি বিএনপি-জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে দেয়া হয়েছে। যারা কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা বিএনপি-জামায়াতের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেবো না।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যখনই সামরিক জান্তা বা সেনাসমর্থিত সরকার গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরিয়েছে, তখনই বারবার গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যাকে গ্রেফতার করেছে।

কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে মুক্তি দিতেও বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর আমাদের তৃণমূলের কর্মীরা যে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে মুক্ত করেছিল, তাতে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিল, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও সেই আন্দোলনেই মুক্তি পেয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য লায়ন মশিউর আহমেদের সভাপতিত্বে ও স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন টয়েলের পরিচালনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ দারা প্রধান আলোচক হিসেবে এবং কৃষিবিদ ড. আওলাদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এম এ করিম, স্বাধীনতা পরিষদের সভাপতি জিন্নাত আলী খান,  অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক, বঙ্গমাতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এম আনিসুর রহমান, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপদেষ্টা আক্তারুজ্জামান খোকা প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।