কোটা আন্দোলনের সহিংসতা নিয়ে যে মন্তব্য করলেন কাদের
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৬ পিএম
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের ওপর হুমকি এসেছে জানিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন সাধারণ ছাত্রদের হাতে আর নেই, এর নেতৃত দিচ্ছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে।এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারাদেশের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না।
সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখন কোটাবিরোধি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন রাস্তাঘাট দখল করতে যাবে? কেন সহিংসতায় জড়াবে? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। সেই অবস্থায় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না।
আরো পড়ুন : হল না ছাড়বেন না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, লালন করি, বিশ্বাস করি সেই চেতনা বিশ্বাসীরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। যার যার এলাকায় যান, আজকেও তাদের ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির এজেন্ডা আছে, বিধ্বংসী এজেন্ডা আছে।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, এখানে শুধু পুলিশের শক্তি নয়, দলের যে শক্তি, যে শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যে শক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে, সেই শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই শক্তিকে আজ কাজে লাগাতে হবে। যার যার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।
কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব দম্ভ করে বলেছেন, আমরা যা পারি নাই ছাত্ররা তা করে দেখিয়েছে। এতে বুঝা যায় কোটার দাবিতে তারা নামেনি। তারা নির্বাচিত সরকারকে হটাতে চায়। ক্ষমতা দখলের জন্য কতটা মরিয়া হলে তারা শিশু-কিশোরদের মিছিল ব্যবহার করে। ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীরা উসকানিমূলক স্লোগান দিচ্ছে। তারা এ আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এক নেতার ফোনালাপের অডিও ক্লিপ থেকে বুঝা গেছে ছাত্রদলের ক্যাডাদের সংঘর্ষ হামলার নির্দেশ দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত আবারও সহিংসতার প্রতি হাটছে। তারা ক্যাডার বাহিনী সারাদেশ থেকে এনে এই শহরে গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে। আরো অনেক বাজে পরিস্থিতি, ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আহবান জানাচ্ছে, উসকানি দিচ্ছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে মঙ্গলবার রাতে ৫-৬ বোতল পেট্রল, বিপুল লাঠি, ৬০টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, শতাধিক ককটেল জড়ো করেছিলো। যা পুলিশের তল্লাশিতে উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন : ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবে পুলিশ
শিক্ষার্থীদের মা–বাবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের এই ধরনের আত্মবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখুন। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা চরিতার্থ করার জন্য হত্যা, গুপ্তহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব তাদের সন্তানদের বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর এই আন্দোলন থেকে দূরে রাখার।
ছাত্রসমাজের দাবির প্রতি সরকার সহনশীল উল্লেখ করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রের অভিভাবক। সবার যৌক্তিক দাবি তার বিবেচনায় রয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের বলব, আইনের পাশে থাকুন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্ধারিত তারিখের শুনানির জন্য অপেক্ষা করুন। ধৈর্য ধারণ করুন। কোনো অপশক্তির উসকানি বা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।
তিনি আরো বলেন, কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপোষ করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের আমরা কোনো ছাড় দেব না। স্বাধীনতা বিরোধীদের আমরা কোনো ছাড় দেব না। বিএনপি-জামায়াত যদি মনে করে, এসব করে তারা ছাড় পাবে, তবে তাদের বলতে চাই, কোনো ছাড় আওয়ামী লীগ দেবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম প্রমুখ।