কোটা আন্দোলনকারীরা গণপদযাত্রা করবে আজ
স্মারকলিপি দেবে রাষ্ট্রপতিকে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংসদে আইন পাস করে কোটা সংস্কার না করা পর্যন্ত আন্দোলন ও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। নতুন কর্মসূচি হিসেবে আজ রবিবার ঢাকায় রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি ও গণপদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। আজ বেলা ১১টায় পদযাত্রা শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গণপদযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, শেরে বাংলা কলেজসহ ঢাকার সব প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বলে জানান নেতারা।
এছাড়া দেশের জেলাগুলোতেও গণপদযাত্রা এবং জেলা প্রশাসকের কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। আজ রাজধানীসহ সারাদেশে কোনো অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়নি। তবে কোটার যৌক্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আন্দোলনকারীরা এ সময় অভিযোগ করেন, গত কয়েক দিন পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে বাধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমের কাজেও পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে বৃহস্পতিবার সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের সাঁজোয়া যানে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন পুলিশের ড্রাইভার খলিলুর রহমান।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীরা বলেন, শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার অডিও রেকর্ড রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন ছাত্ররা কোনো হামলা করেনি। তারপরও কোন উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে? মামলাটি মিথ্যা উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। তারা পুলিশের উদ্দেশে বলেন, মামলা হলে নামে মামলা দিন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার ও দাবি আদায় না হলে সাধারণ মানুষকে নিয়ে বড় আন্দোলনে নামা হবে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরও বিচার দাবি করা হয়। তাদের অভিযোগ, সরকার আলোচনা না করে ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে বুমেরাং হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা হবে না।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আবু বকর মজুমদার বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাইনি। যতদিন কোটার সংস্কার করে সংসদে আইন পাস না করা হবে, ততদিন আমরা আন্দোলন ও কর্মসূচি চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, ঢাকার সাত কলেজসহ আমাদের সমন্বয়ক টিম কুমিল্লাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা নৈতিক ও যৌক্তিক দাবি নিয়ে যে অবস্থান নিয়েছি তাতে কেউ হস্তক্ষেপ করলে আমরা কঠোরভাবে অবস্থান নেব।
আরেক সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ শতাংশ কোটাপদ্ধতি চাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী নই। নাতি-নাতনিরা পাবে, আমরা এটা চাই না। সন্তান পর্যন্ত ঠিক আছে। আমরা চাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোটা।
আন্দোলন পরিচালনায় নতুন নির্দেশনা : এদিকে চলমান আন্দোলন পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ নির্দেশনা দিয়েছেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এসব নির্দেশনায় বলা হয়- বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরে সমন্বয়ক কমিটি তৈরি, সবসময় বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখা, সব সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়া, সম্মিলিতভাবে আন্দোলন, কারো ওপর কোনো আঘাত বা হুমকি এলে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে যুক্ত করা, মিডিয়া ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা, ঢাকার সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য সরাসরি ক্রাউড ফান্ডিং করা।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।