×

জাতীয়

নগরযন্ত্রণা

রাজধানীতে জলজটে ভোগান্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীতে জলজটে ভোগান্তি
  • টানা ৬ ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টিপাত
  • সড়ক দোকান বাসাবাড়িতে পানি
  • বিক্ষুব্ধ দীর্ঘসময় পানিবন্দি মানুষ

আষাঢ়ের বিদায়ক্ষণে সকাল বেলায় ঝুম বৃষ্টিতে ঘুম ভেঙেছে রাজধানীবাসীর। টানা ছয় ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি। প্রবল বর্ষণে ডুবে যায় নগরীর অধিকাংশ এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলি। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে সড়কে চলাচলরত অসংখ্য যানবাহন। দোকান, মার্কেট ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। ক্ষতির শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও সকালে বাইরে বের হওয়া মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছাতে এক রকম যুদ্ধ করতে হয়। দীর্ঘক্ষণ পানিবন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরীর বাসিন্দারা। নিকট অতীতে এত পানি দেখেনি ঢাকাবাসী। তবে বিকাল থেকে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি। নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কথিত উন্নয়নের পরও পানি আটকে থাকায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা।

তবে শুধু রাজধানীতেই নয়, প্রায় সারাদেশেই গতকাল শুক্রবার মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে ৩০৯ মিলিমিটার। আর ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার রেকর্ড হয়েছে। আজ শনিবার বিকাল পর্যন্ত ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও গতকাল বেসরকারি চাকরিজীবী, খেটে খাওয়া মানুষ ও জরুরি কাজের জন্য সকাল থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ঘরের বাইরে বের হয়েছেন অনেকে। তবে ভারি বৃষ্টিতে বিপাকে পড়তে দেখা যায় তাদের। বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম।

এদিকে গতকাল সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দেয়। ছিল গ্যাস সংকটও।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় আছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা আজ শনিবারও অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে ওই বার্তায় সতর্ক করা হয়।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এরপর থেকে বৃষ্টি কমবে।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর এটা সর্বোচ্চ বৃষ্টি। বর্ষা মৌসুমে এটা স্বাভাবিক বৃষ্টি, যা এ বছরে সর্বোচ্চ। গত ২৭ মে ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়, তবে সেটা ছিল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে। তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) দুপুর ১২টার পরও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল, তবে তা সামান্য। শনিবারও রাজধানীতে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে দিনভর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। রবিবার থেকে আবার বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমতে পারে।

সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে সেটিকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারেরবেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।

গতকাল ভোর থেকে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। একটানা এই বৃষ্টি হয় দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এই ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, বিজয়নগর, রাজারবাগ, শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, মতিঝিল, আরামবাগ, পল্টন, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, বাংলামোটর, গ্রিনরোড, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পান্থপথ, উত্তরা, বনানী, জাহাঙ্গীর গেট, মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, রামপুরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, আজিমপুরের প্রধান সড়ক পানিতে ডুবে যায়। শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মিরপুরে মাজার রোড, এলিফ্যান্ট রোড, মৎসভবন, সেন্ট্রাল রোড, ধানমন্ডির ২৭ নম্বর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, দক্ষিণ মনিপুরের মোল্লাপাড়া, মহাখালীর বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে যায়।

পানিতে তলিয়েছে দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, কমলাপুরের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোড, যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনির আখাড়া, রায়েরবাগ, গোলাপবাগের নিচু এলাকাসহ আরো অনেক এলাকা। হাঁটুর উপরের এই পানি আটকে থাকে ৭-৮ ঘণ্টা। এসব এলাকা জলাবদ্ধতা হয়ে পড়ে। নানা কাজে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘরের বাইরে পা দেয়া মানুষ নাকাল হয়েছেন বেশ। ছুটে চলা প্রাইভেট কার আর মিনিবাসের ঢেউয়ে পানিতে ভিজে গেছে রিকশা, অটোরিকশা এবং রাস্তা কিংবা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা মানুষ। অনেক প্রধান সড়কের ফুটপাতেও পানি ওঠে। সেই ফুটপাত আবার খানাখন্দে ভরা। পানি মাড়িয়ে ফুটপাত ধরে চলা কারো কারো গর্তে পা পড়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।

রাজারবাগে যাত্রীসহ একটি রিকশা উল্টে যেতে দেখা গেছে। এরকম আরো রিকশা উল্টে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া রাস্তায় বের হওয়া প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল বিকল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ফলে কোথাও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার রাস্তা উপচে ময়লা পানি ঢুকেছে বাজার, দোকান এবং এমনকি অনেক বাসাবাড়িতেও। সকাল ১০টার দিকে মহাখালী দক্ষিণ পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে- সেখানে কোমর সমান পানি।

এই এলাকায় সড়কের পাশে দোকানপাট এবং কোনো কোনো ভবনের নিচতলাতেও পানি ঢুকেছে। শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, ভিআইপি রোডে বেশ কিছু দোকানে পানি ঢুকতে দেখা গেছে। ডুবে গেছে শান্তিনগর কাঁচাবাজারও। বৃষ্টির পানিতে এভাবে রাস্তা-দোকানপাট ডুবে জলাবদ্ধ হওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। তারা বলছেন, এত উন্নয়নের কথা বলা হয়, অথচ সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে বাসাবাড়িতে ঢুকে যায়। দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে রাজধানীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানঘেরা এলাকা নিউমার্কেট।

নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শুরু করে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে জমে যায় বৃষ্টির পানি। আর এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাস্তার পার্শ্ববর্তী অপেক্ষাকৃত নিচু ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির সময় সড়কের সব পানি উপচে প্রবেশ করেছে মার্কেটের ভেতর। ফলে দোকানে রাখা শাড়ি, কাপড়, বই, জুয়েলারিসহ অন্যান্য সব কিছুই ভিজে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীবাসীকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সময় হাতে নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।

জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ‘কুইক রেসপন্স’ টিম মাঠে নামে। কাজ করেছেন ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়া কোথাও কোনো পানি জমে থাকলে ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬ এই নম্বরে ফোন করার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও। পানি নিষ্কাশনে কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য দক্ষিণ সিটির ১০০টি টিম সকাল থেকে কাজ করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

বাংলাদেশের ম্যাচসহ টিভিতে আজ যা দেখবেন

বাংলাদেশের ম্যাচসহ টিভিতে আজ যা দেখবেন

যে যুক্তিতে বাড়াতে চাওয়া হচ্ছে প্রবেশের বয়স

সরকারি চাকরি যে যুক্তিতে বাড়াতে চাওয়া হচ্ছে প্রবেশের বয়স

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পার্বত্য দুই জেলায় যাচ্ছেন তিন উপদেষ্টা

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পার্বত্য দুই জেলায় যাচ্ছেন তিন উপদেষ্টা

এত টাকা কীভাবে সরালেন সাবেক এই ভূমিমন্ত্রী!

এত টাকা কীভাবে সরালেন সাবেক এই ভূমিমন্ত্রী!

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত
নির্বাহী সম্পাদক: এ কে সরকার

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App