ডিএসসিসি মেয়র
নদী-খাল দখল করে ভবন বানিয়েছে, উদ্ধারে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৯ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
উচ্চ শিক্ষিতরা নদী ও খালের জমি দখল করে ১০ তলা বাড়ি বানিয়েছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, শ্যামপুর খাল ১০০ ফুট থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ৮ ফুটের একটি নালা। কঠোরতার সঙ্গে আগামী মাস থেকে দক্ষিণের জিরানী, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর চারটি খাল দখলমুক্ত করা হবে, যদিও সেখানে অনেক প্রভাব চাপ রয়েছে। এমন অনেক প্রভাবশালী রয়েছে যা খাল দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হবে।
শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) মিলনায়তনে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘জলাবদ্ধতা নিরসন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনরুদ্ধারের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম।
এ সময় মেয়র বলেন, এখন সময় এসেছে, দখলের পরিবর্তে ত্যাগ করতে হবে। যারা এতদিন দখল করেছেন, তারা এখন ত্যাগ করেন। আগামী প্রজন্মের জন্যও হলেও ত্যাগ করেন। তাদের জন্য সুন্দর একটা ঢাকা শহর আমরা বিনির্মাণ করতে চাই।
দখল হওয়া খাল ও নদী উদ্ধারে প্রভাবশালীদের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মেয়র বলেন, উচ্চ শিক্ষিতরা নদীর জমি দখল করে ১০ তলা বাড়ি বানিয়েছে। সেগুলো আমাদেরকে উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। কিন্তু তখনি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমাদের উপরেও তো অভিভাবক আছে। তাদের কাছ থেকে প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। তবুও আপনাদের (সাংবাদিক) সরব ভূমিকায় সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমরা খাল-নদীগুলো উদ্ধার করতে পারবো।
আরো পড়ুন: ভারত রাজনৈতিক আর চীন উন্নয়নের বন্ধু: কাদের
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ২০২৩ সালে যাত্রাবাড়ী সড়কটি ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়ণে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিক করা হয়েছিলো। অথচ গত তিনদিন আগে ওয়াসা কিছু না জানিয়ে বিনা অনুমতিতে আরসিসির সেই রাস্তা খনন করেছে। যা খুবই দুঃখজনক। টেকসই সমাধানে যাওয়া যাচ্ছে না এমন অনেক কারণে।
সংলাপে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আমি জানি মেয়র মহোদয় খুবই শক্ত অবস্থান নেন। কিন্তু যারা যারা খাল দখল করেছেন- তারাও কিন্তু কম শক্তিশালী না। দখলদারদের নামগুলো দেখলেই বুঝবেন তারাও কতটা শক্তিশালী। সুতরাং এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে যে, আমরা উদ্ধার কাজটাও করবো, একই সঙ্গে স্থায়ী একটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এজন্য সরকারের কমিটমেন্ট দরকার।
সমন্বয়হীনতার কারণে খাল উদ্ধার অসম্ভব মনে করে তিনি বলেন, রামচন্দ্রপুর খাল নিয়ে খালি গল্পই শুনছি। সেখানে রামের বাহিরে রামের একটা বোন সীতাও আছে। তার একটা বাড়িও আছে সেখানে। তিনি আবার গানও করেন। সেই সীতা নাকি আলাদাভাবে পানি উন্নয়নের কাছ থেকে খালের জায়গায় ভবন নির্মাণের অনুমতিও নিয়েছেন। ফলে সাদিক এগ্রো উচ্ছেদ হওয়া নিয়ে খুশি হয়ে কোনো লাভ নেই, যদি খালটা কাজে না আসে।
তিনি বলেন, একটা শহরে ১৪ টার মতো সরকারের সেবা সংস্থা কাজ করে। সিটি করপোরেশন শুধু একাই সরকারের একটা সংস্থা নয়। ওয়াসা বলে তারা স্বাধীন, রাজউক বলে তারাও স্বাধীন। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো- রাজউক স্বাধীন সংস্থা হলেও সিটি করপোরেশনের নগরায়ণের পরিকল্পনা দেয় রাজউক। অথচ দুই সংস্থার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সাংঘর্ষিক নীতি বলে মনে করেন তিনি।
মেয়রকে উদ্দেশ্য করে শ্যামল দত্ত বলেন, খাল উদ্ধার করে কি করবেন, খালের পাড়ে রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ১৪ তলা ভবনের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এখানে সিটি করপোরেশন কি করবে? সিটি করপোরেশন কি ভাঙতে পারবে? তিনি বলেন, পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করে ২০০ কোটি টাকার বিজিইএমইএ ভবনে ভাঙিয়েছে হাতিরঝিলে, কিন্তু সেখানে এখন যা হচ্ছে তা বন্ধে কোনো পরিবেশবাদীদেরকে দেখি না। উল্টো শুনছি- সেই প্রকল্পে তারা পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ করছেন। তাহলে খাল উদ্ধার করে লাভ কি?
আরো পড়ুন: রাজধানীতে ৯ কোটি টাকার খাস জমি উদ্ধার
খাল বেদখলের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে প্রবন্ধ উপস্থাপনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা শহরের খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাতে হস্তান্তর হয়েছে নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমরা সবাই জানি, ঢাকা শহরের খালগুলোর মালিকানা নগরীর বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত আছে। প্রধানত জেলা প্রশাসনের কাছে সব খালের মালিকানা থাকলেও অন্যান্য সংস্থা যেমন: ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশনগুলো, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রভৃতি সংস্থা ঢাকা শহরের খালগুলোর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন নিয়োজিত থাকলেও খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকিতে নগর সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্তঃসমন্বয় ছিলো না এবং খালগুলোর প্রকৃত অভিভাবক ছিলো না কেউ। ঢাকা মহানগরের বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে খালগুলোকে কেন্দ্র করে যে নগর পরিকল্পনার সম্ভাবনা ছিলো, সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিয়ে অব্যাহত দখল আর দূষণের মাধ্যমে খাল ও জলাশয়গুলোকে আমরা উন্নয়নের নামে ক্রমাগত ধ্বংস করেছি। ফলে একদিকে যেমন নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়েছে, ঠিক তেমনি নগরায়নের চাপে শহরের খালগুলো ক্রমান্বয়ে দখলের শিকার হওয়া এবং একই সঙ্গে খালগুলোর দৈর্ঘ্য কমে যাওয়ার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার নেটওয়ার্ক হিসেবে নগরের খালগুলো তাদের কার্যকারিতা হারিয়েছে বহুলাংশে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতা থাকলে খালগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। পাশাপাশি খালগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্প হাতে নিলে খালগুলোর অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যাবে এবং খালের মধ্যে বৃষ্টির পানির ধারণক্ষমতা এবং পানিপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে।
সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন ডুরার সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী।