সাদিক এগ্রোর আলোচিত ছাগলসহ ২৫০ গরু ও ১২ উট এখন সাভারে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৬:১১ পিএম
১৫ লাখ টাকা মূল্যের আলোচিত সেই ছাগল। ছবি : ভোরের কাগজ
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাদিক এগ্রোর সঙ্গে যোগসাজশ করে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ঢাকার সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ভাঙ্গাব্রিজ এলাকার ফার্মে অভিযান চলায় দুদক।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ১৫ সদস্যের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
আলোচিত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের সেই ছাগল ও একাধিক নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরুসহ উট, ঘোড়া সাভারের ভাকুর্তায় খামারে রাখা হয়েছে। অভিযান চলাকালীন কাপড় দিয়ে ঘেরা একটি ঘরের ভিতরে আলোচিত সেই ছাগলটি দেখা যায়। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় সাদিক এগ্রো ফার্ম উচ্ছেদের পর কিছু ভাঙ্গা শেড, মিষ্টি তৈরির সরঞ্জামসহ বেশকিছু এসি ও সাইনবোর্ডও রাখা হয়েছে ভাকুর্তার খামারে।
আরো পড়ুন : সাদেক এগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা, সাভার ডেইরি ফার্মে অভিযান
ফার্মের দায়িত্ব থাকা ব্যবস্থাপক জাহিদ খান বলেন, আমি দেড় মাস ধরে এখানে দায়িত্ব নিয়েছি। এখানে মূলত দুধ উৎপাদন করা হতো। প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কেজি দুধ এখান ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এই খামারে গাভী ও বাছুর মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ গরু রয়েছে।
এছাড়া ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ কয়েক’শ হাস-মুরগি রয়েছে। আমিসহ প্রায় ৩৫ জন কর্মী এখানে কর্মরত। সোমবার সকাল থেকে এখানে সিকিউরিটি গার্ডের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এর আগে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিল না এখানে।
অভিযানে নেতৃত্ব থাকা দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ভাকুর্তার খামারে একটি শেডে তিনটি বাহ্রামা জাতের গাভী ও সাতটি ব্রাহামা বাছুরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসময় কাপর দিয়ে ঘিরে রাখা একটি ছোট কক্ষে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটিরও দেখা মিলে। সেখানে পাওয়া কিছু নথির খাতা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ব্রাহামা জাতের গরু আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ। এই গরুগুলোর ব্যাপারে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এদিকে প্রায় তিন বছর আগে অবৈধ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুর বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে সাভারের গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুপুরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সাভারে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অনুসন্ধান চালায় দুদকের ১৫ সদস্যের একটি দল। তারা গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন।
অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা গরুগুলো দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিয়ে নেন সাদিক এগ্রোর ইমরান হোসেন। গরুগুলো জবাই করে রমজানে ২৮০ টাকা মূল্যে মাংস বিক্রি করার শর্তে ইমরানকে দেয়া হয়েছিল। তবে ইমরান সুলভ মূল্যে বিক্রি না করেই গরুগুলো তার খামারে রেখে দেন। এছাড়াও নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করে কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলে বলে অভিযোগ ওঠে।
এ ব্যাপারে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০২১ সালে অবৈধভাবে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি হয়। সেগুলো এতদিন পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। তবে গত এপ্রিলে রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরু জবাই করে বিক্রির জন্য সাদিক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন দায়িত্ব নেন। কিন্তু কোরবানি ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া গরুগুলো তিনি জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে এ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সাদিক এগ্রোর সঙ্গে এখানকার কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত রমজান মাসে সুলভ মূল্যের মাংস বিক্রির জন্য অবৈধ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা জব্দকৃত ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে নিলামে উচ্চ বংশীয় গরু বলে বিক্রির জন্য নিয়ে যান সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান। নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুগুলো তিন বছর আগে সাদিক এগ্রোর নামে আমদানি করা হয়েছিল। সেগুলো জব্দ হওয়ার পরও সাদিক এগ্রো আবার ব্রাহমা জাতের গরু বিক্রি করলেন কীভাবে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু জব্দ করে ঢাকা কাস্টম হাউস। এর মধ্যে তিনটি গরু মারা যায়। বাকি ১৫টি গরু লালন-পালনের জন্য দায়িত্ব পায় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার। কিন্তু ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে ইমরান এ ব্রাহমা জাতের নিষিদ্ধ গরু উঠিয়েছিলেন। এর আগে ২০২১ সালে কাগজপত্র জাল করে অবৈধভাবে নিয়ে আসা ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে। ওই গরুগুলো আমদানি করে সাদিক এগ্রো। গরুগুলো বাজেয়াপ্ত করে সরকার।