×

জাতীয়

ঘরে ঘরে করোনার আতঙ্ক, ছড়াচ্ছে সর্দি-জ্বর-ডায়রিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪২ এএম

আতঙ্কের কারণ নেই: বিশেষজ্ঞরা

বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত শাহনাজ বেগম স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন মিরপুরে। গত ৩-৪ দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন শাহনাজ। আর তার ছোট ছেলে অন্তু ভুগছে ডায়রিয়া ও সর্দিতে। জ্বর-সর্দি-ডায়রিয়া করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের লক্ষণ। তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত শাহনাজ। তিনি বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করি। এখন তো নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে করোনার বিভিন্ন উপসর্গও দেখা দিয়েছে। খুব ভয়ে আছি। আমি আর অন্তু আলাদা ঘরে থাকছি। ভাবছি করোনা টেস্ট করাব।

শাঁখারী বাজারের বাসিন্দা বন্ধন সরকার চাকরি করেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে। কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথায় ভুগছিলেন। ঘরে বয়স্ক বাবা-মা। তাই বন্ধনের চিন্তাটাও ছিল বেশি। তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু এই রিপোর্ট কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

শাহনাজ, অন্তু কিংবা বন্ধনের মতো এখন অনেকেই একটু গা গরম কিংবা ডায়রিয়া হলেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। সেই সঙ্গে সর্দি, কাশি কিংবা গলাব্যথা থাকলে তো কথাই নেই। করোনা আতঙ্কে মানুষ যেন ভুলেই গেছে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা অন্যান্য অসুখের কথা।

চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর, মাথাধরা, মাথা ভার ভার, ঘাড়ের পেছনে ব্যথা, গলায় ব্যথা, ঢোক গিলতে অসুবিধা, শুকনো কাশি, নাক দিয়ে জল, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, হজমের গণ্ডগোল, গায়ে র‌্যাশ, সারা শরীরে ব্যথা, শিরদাঁড়ায় আড়ষ্ট ভাব, ক্লান্তি ভাব, জিবে স্বাদ না পাওয়া, নাকে কোনো গন্ধ টের না পাওয়ার মতো অসংখ্যা লক্ষণ করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকের কোনো উপসর্গই নেই। তাই সামান্য লক্ষণ দেখা মাত্রই ভয়ে ও দুশ্চিন্তায় থাকছেন অনেকে।

তারা বলছেন, সরকারের উদ্যোগ এবং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনা বাড়ায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ খুবই কম। কিছু কিছু উপসর্গের ওপর প্রাথমিকভাবে ভিত্তি করে ক্লিনিক্যালি রোগ নির্ণয় সম্ভব। যেমন ম্যালেরিয়ায় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, একদিন অন্তর জ¦র। ডেঙ্গুতে মাথা, গা, হাত, পা? গাড়েও অসহ্য ব্যথা। করোনায় জ¦রের সঙ্গে শুকনো কাশি বা স্বাদ, গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া। আর প্রতি বছর এই সময়ে ডায়রিয়ার

প্রকোপ দেখা যায়। তাই করোনা নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলেন তারা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, জ্বর বা সামান্য শরীর খারাপ হলে অন্য কিছু ভাবার আগেই করোনা ভাইরাস ভাবছে। অথচ জ্বর মানেই করোনা না। বিরতি দিয়ে বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমের কারণে সর্দি, কাশি কিংবা জ্বরে ভুগছে বেশির ভাগ মানুষ।

তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগগুলো না থাকলে এই সময়ে আমরা সাধারণত ঘরে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সেইসঙ্গে গরম পানির ভাপ, হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়া আর জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেই। এছাড়া মাস্ক পরে বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পরিবারের অন্য কারো সূত্রে করোনা ঘরে এলে সবার প্রথমে তা রোগীর শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। আর বেশির ভাগ লক্ষণ যদি করোনার সঙ্গে মিলে যায় তখন পরীক্ষা করিয়ে নেয়াই ভালো।

ডায়রিয়া আক্রান্ত হলেই করোনা এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ডায়রিয়া হলেই কোভিডের সংক্রমণ ভাবা ঠিক নয়। করোনাকালে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম ছিল। করোনা যখন তুঙ্গে তখন ২০-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকত হাসপাতালে। এখন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কারণ বর্ষাকাল সবে শেষ হয়েছে। এছাড়া আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডায়রিয়ার পোস্ট মৌসুম। অন্যান্য বছর এই সময়ে দৈনিক সাতশ থেকে আটশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। এখন দৈনিক তিন থেকে সাড়ে তিনশ রোগী ভর্তি থাকছে। কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন হাত ধোয়ার প্রবণতা বেড়েছে। খোলা ও বাইরের খাবার কম খাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় যাতায়াত বেড়েছে। ফলে বিভিন্ন এলকা থেকে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App