×

জাতীয়

মহিদুলের হস্তশিল্পের নন্দিত উদ্যোগ ‘স্বপ্নচূড়া’

Icon

হাবিবুর রহমান হবি, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ০৭:১৫ পিএম

মহিদুলের হস্তশিল্পের নন্দিত উদ্যোগ ‘স্বপ্নচূড়া’

ছবি: ভোরের কাগজ

প্রান্তিক জনপদে অকৃৃষি খাতে আয় বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হস্ত ও কারুপণ্য। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসব হস্ত ও কারুপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বাঁশের তৈরি নান্দনিক পণ্যের শৈল্পিক নির্মাণ আমাদের আদি ঐতিহ্য। সময় আর যুগের পরিবর্তনে নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসলেও, এখনো প্রয়োজনের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি বাঁশের তৈরি হস্ত ও কারুপণ্য। কখনো প্রয়োজন, কখনো শৈল্পিকসামগ্রী- দুই-ই মেটাতে সক্ষম বাঁশজাত পণ্য। বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় ৫০ ধরনের নান্দনিক পণ্য তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার তরুণ উদ্যোক্তা মো. মহিদুল ইসলাম। গড়ে তুলেছেন বাঁশ শিল্প কর্ণার ‘স্বপ্নচূড়া’। 

ঘর সাজাতে সৌখিন ব্যক্তিদের কাছে মহিদুলের এসব হস্তশিল্পের কদর রয়েছে। এছাড়া শহর-গ্রামের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল, রিসোর্টেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তা ছাড়া বাজারে অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য এসব পণ্য বিক্রি হয় চড়া দামে। এ কারণেই হস্তশিল্পে মহিদুলের নন্দিত উদ্যোগ ‘স্বপ্নচূড়া’ অনেক উদ্যোক্তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। বাঁশের নান্দনিক হস্ত ও কারুপণ্যের শৈল্পিক নির্মাণে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন মহিদুল ইসলাম।

আরো পড়ুন: সখীপুরে নিরাপত্তার দাবিতে ব্যবসায়ীর সংবাদ সম্মেলন

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামধন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বসতবাড়ির আঙিনায় একটি টিনশেডের ঘর। এই ঘরেই মাহিদুল গড়ে তুলেছেন ‘স্বপ্নচূড়া’ বাঁশ শিল্প কর্ণার নামে একটি হস্তশিল্পের কারখানা। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে কারখানায় কাজে ব্যস্ত তিনি। এখানে যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া তিনি একাই নিজ হাতে তৈরি করছেন বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে ঝাড় লণ্ঠন, ওয়ালল্যাম্প, দশ প্রকারের শোপিস, বিভিন্ন ধরনের ফুলদানিসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক নান্দনিক পণ্য। এ সময় স্থানীয় কিছু দর্শনার্থীরও দেখা মেলে, তারা এসেছেন মহিদুলের ‘স্বপ্নচূড়া’ বাঁশ শিল্প কর্ণারের কর্মযজ্ঞ দেখতে। 

কারখানার পাশেই বসতবাড়ির একটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে ‘স্বপ্নচূড়া’র শো-রুম হিসেবে। সেখানে ঢুকতেই দেখা গেল বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে মহিদুলের তৈরি বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ও শৈল্পিকসামগ্রী। এইসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁড়ি, ফলের ঝুঁড়ি, ফুলদানি, কলমদানি, চুলের খোপা, ল্যাম্পসেট, চায়ের কাপ, কেতলী, মগ, পানির বোতল, গ্লাস, জগ, কাঁটাচামচ, ট্রে, মোবাইল স্ট্যান্ডসহ আরো অনেক কিছু। তার প্রতিষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে আছেন স্ত্রী ফারজানা ববি রজনী আর একমাত্র পুত্র ফারহান মুহিব নিহাল।

বাঁশশিল্প কারিগর মো. মহিদুল ইসলাম জানান, এক সময় প্রত্যেক বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল, চাহিদাও ছিল প্রচুর। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাঁশের তৈরি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই বাঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে শৈল্পিক নির্মাণে নান্দনিক ও সৌখিন পণ্য তৈরিতে মনসংযোগ করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন: রৌমারীতে ঝড়ে দুই শতাধিক বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি

তিনি বলেন, বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব হস্ত ও কারুপণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র ডেকোরেশন, রেস্টুরেন্ট, অফিস, রিসোর্ট, পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনায় নান্দনিক ডেকোরেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি ঘর সাজাতেও এসব পণ্যের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এগুলো তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ কেটে প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাসায়নিক উপকরণ দিতে হয়। তিন-চার দিন ভিজিয়ে রেখে তা রোদে শুকানো হয়। পরে এসব বাঁশ আকারভেদে কেটে প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করা হয়। বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করছেন তিনি। এছাড়া ‘স্বপ্নচূড়া’ বাঁশ শিল্প কর্ণার নামে একটি ফেসবুক পেজও আছে তার। অনলাইনে এই পেজের সহায়তায় অর্ডার নিয়েও পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। পণ্যগুলো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ থেকে প্রতিমাসে খরচ বাদে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি।

মহিদুল বলেন, সম্ভাবনা থাকলেও হস্ত ও কারুশিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ পুঁজির অভাব। এ ছাড়া বিপণনে সীমাবদ্ধতা, কাঁচামাল প্রাপ্তির সংকট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির মতো আরো কিছু বিষয় এই খাতের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে আছে।

উদ্যোক্তা ফয়সাল সাকিদার আরিফ বলেন, দেশি হস্তশিল্পে পণ্য বৈচিত্র্য অনেক রয়েছে, তবে মানসম্মত পণ্যের সংখ্যা কম। পুঁজি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এবং মানসম্মত পণ্য কম থাকায় এগোতে পারছেন না সম্ভাবনাময় এ খাতের উদ্যোক্তারা। এই খাতের বাজার বাড়াতে হলে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App