×

জাতীয়

পেঁয়াজ সংরক্ষণ মডেল ঘর, যেভাবে আশার আলো দেখছেন চাষীরা

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০২:১১ পিএম

পেঁয়াজ সংরক্ষণ মডেল ঘর, যেভাবে আশার আলো দেখছেন চাষীরা

ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের প্রসিদ্ধ জেলা রাজবাড়ী। দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশের যোগান আসে রাজবাড়ী থেকে । তবে সঠিক সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করে দিচ্ছে। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কালুখালী উপজেলায় ২০টি এই মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়। চলতি অর্থ বছরে বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরে কৃষক পেঁয়াজ রাখা শুরু হয়েছে। 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা বানায়। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা, কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এই ঘরে ৩ স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পেছনে দেয়া হয়েছে ছয়টি তাপ নিয়ন্ত্রণ ফ্যান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘরে পাঁচজন কৃষক তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।

বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের করমচাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক লুৎফর রহমানের বাড়ির ওঠানের একপাশে মডেল ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে ৩ স্তরে পেঁয়াজ রাখা হয়েছে।

কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, আমি এবছরও ৬০০ মন পেঁয়াজ পেয়েছি। সব পেঁয়াজ একসঙ্গে বিক্রি করা সম্ভব না। এজন্য নিজেদের মত করে সংরক্ষণ করি। কিন্তু এক দেড় মাস পর থেকেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। আমরা টিনের ঘরে মাচা করে রাখি। টিনের গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এই মডেল ঘরটি টিনের হলেও ঘরটিতে আলো বাতাস প্রবেশ করছে, আছে ফ্যানের ব্যবস্থাও। ফলে পেয়াজ ভালো থাকছে।

একই গ্রামের কৃষক আলিমুজ্জামান বলেন- ‘আমাদের প্রধান অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ। এতদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়ে চিন্তা ছিলাম, নিজেদের মত করে রাখার চেষ্টা করতাম। দেখা যায় ৬ মাস পর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতো। তাই এই মডেল ঘর দেখতে এসেছি, ইচ্ছা আছে আগামী বছর আমি নিজেই এই আদলে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘর নির্মাণ করবো। আমি কালুখালী উপজেলাতেও খবর নিয়েছি। যারা গত বছর এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছিল এবং তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়নি। ৭ থেকে ৮ মাস পেঁয়াজ ভালো ছিল। তবে সরকার যদি এই মডেল ঘর গ্রামে গ্রামে আরো বেশি পরিমাণ করে দিত তাহলে আমাদের বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হত না।

রাজবাড়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মো. রাজীব খান বলেন, একটি মডেল ঘরে ৩০০ মন পেঁয়াজ রাখা যাবে। ৫ জন কৃষকের জন্য একটি ঘর করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই ঘর দেখে চাষিরা এই মডেলে ঘর নিজেরা নির্মাণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবে। তাহলে তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হবে না। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে কৃষক পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছে। বাঁকি ১৫টি ঘরের কাজ কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে। আগামী অর্থ বছরে আমরা পাংশা উপজেলায় ৩০টি এই মডেল ঘর নির্মাণ করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App