প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা সারাবিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে।

বুধবার (৮ মে) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা ও বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সূত্রে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে। এরূপ অবস্থায় আমার সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যাতে প্রত্যেকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে। বিশেষ করে এ সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। এ কথা ঠিক যে, এ সংঘাত কী মাত্রায় রূপ নিবে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপসহ উক্ত খাতকে সহযোগিতা করার আবশ্যকতা তৈরি হতে পারে।

আরো পড়ুন: দেশে হিরো আলমকে ঘুষি দিলে বিবৃতি দেয়া হয়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে সরকার অগ্রীম পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো হলো, চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য ঠিক রাখা। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রদানে যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সেই উদ্দেশ্যে রেমিট্যান্স প্রদান সহজীকরণ করা হয়েছে এবং রেমিট্যান্স প্রদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২.৫০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ও ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর হতে কার্যকর ব্যাংকগুলোর দ্বারা অতিরিক্ত ২.৫০ শতাংশের যে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে তা অব্যাহত রাখা। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা। নিকট ভবিষ্যতে সরবরাহ সংকটের ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনীতির অগ্রাধিকারমূলক খাতসমূহ যেমন, কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য গৃহীত স্বল্পসুদ ভিত্তিক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমসমূহ অব্যাহত রাখা। রেকর্ড ভবিষ্যতে সরবরাহ সম্পদের ফলে সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনীতির অগ্রাধিকার মূলক খাতগুলো বিশেষ করে কৃষি, সি এম এস এম ই, বৃহৎ শিল্প ওফাকাতের জন্য গৃহীত স্বল্প সুভিত্তিক স্কিমগুলো অব্যাহত রাখা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সম্পূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরানের পার্শ্ববর্তী হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হলে স্পট মার্কেটের এলএনজি সরবরাহে কিছুটা বিরুপ প্রক্রিয়া করতে পারে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও এলএনজির মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতারের প্রতিষ্ঠান থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ এলএনজি কারবো আমদানি সম্ভব না হলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমানের প্রতিষ্ঠান ও স্পট মার্কেট থেকে অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির সুযোগ রয়েছে। 

শেখ হাসিনা আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। ফলে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পায়। যা সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। আমদানি ব্যয়ের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে সারের ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনিশিয়া, কানাডা, রাশিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। ফলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ অনেকাংশে সম্ভব হবে।