গত ২১ দিনে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ১৭৪টি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্র্যাফিক বিভাগ। অননুমোদিত স্টিকার সম্বলিত, ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে ডিএমপির ৮টি ট্র্যাফিক বিভাগ অভিযান চালিয়ে আইনগত এ ব্যবস্থা নেয়। গত ১২ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত চালানো অভিযানে ৩৬৩টি অননুমোদিত স্টিকার, ৪৬১টি ফিটনেসবিহীন ও ২ হাজার ৩৫০টি অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

রবিবার (৫ মে)  দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ট্র্যাফিক পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান। 

তিনি বলেন, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার স্টিকারের অবৈধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করছে ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগ। এ অভিযান চলমান থাকবে। ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশসহ জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত স্টিকার ব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রায় ২ হাজার গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে।

এস এম মেহেদী হাসান বলেন, রাজধানীর নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনের লক্ষ্যে জনসাধারণের মধ্যে ট্র্যাফিক সচেতনতা বাড়ানো, ট্র্যাফিক প্রসিকিউশন ব্যবস্থাপনা, সময়োপযোগী ট্র্যাফিক আইন বাস্তবায়ন, ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন এবং ট্র্যাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগকল্পে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগের এ বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ট্র্যাফিক সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও ডিএমপির ট্র্যাফিক বিভাগের দায়িত্ব পালনে জনগণের সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরছে।

ডিএমপির ৮টি বিভাগের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ট্র্যাফিক দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান বলেন, গত ১২ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ট্র্যাফিক রমনা বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা করেছে। ৭৪টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ১৮৮টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্র্যাফিক মতিঝিল বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ১৬৪টি মামলা করেছে। ৪৬টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও তিনটি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্র্যাফিক লালবাগ বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা করেছে। ২০টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ২০৭টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্র্যাফিক ওয়ারী বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করেছে। ৪২টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ২১৫টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্র্যাফিক তেজগাঁও বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করেছে। ৫৩টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ২০৪টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে।

ট্র্যাফিক গুলশান বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করেছে। ৬১টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ১২৩টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্র্যাফিক উত্তরা বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করেছে। ৯৪টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ৭৬টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে। ট্র্যাফিক মিরপুর বিভাগ অননুমোদিত স্টিকারের বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা করেছে। ৭১টি ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও এক হাজার ৩৩৪টি অবৈধ যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে।

মেহেদী হাসান বলেন, সম্প্রতি চলমান তাপপ্রবাহে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক, সাধারণ মানুষ, পথচারী, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের একটু স্বস্তি দিতে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের উদ্যোগ সুপেয় পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।    

গত রবিবার মার্চ মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, রাস্তায় পুলিশের স্টিকার লেখা কোনো গাড়ি দেখলে কর্তব্যরত পুলিশ অবশ্যই যাচাই করবেন। গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে বা ডিএমপির লোগো লাগিয়ে সন্ত্রাসীদের চলাফেরার তথ্য পাওয়া গেছে। যদি যাচাই করে দেখা যায় সেটা পুলিশের গাড়ি নয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডিএমপির ক্রাইম ও ট্র্যাফিক বিভাগ এই বিষয়টি নজর রাখবেন।