×

জাতীয়

উপজেলা নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ০৬:১০ পিএম

উপজেলা নির্বাচন সরকারের পাতানো ফাঁদ

ছবি: ভোরের কাগজ

উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচন ‘সরকারের পাতানো ফাঁদ’ বলে অভিহিত করেছেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘আরেকটা ফাঁদ… সর্বশেষ ফাঁদ পেতেছেন আমাদের আজকের সরকার। তারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচন। এর আগে জাতীয় নির্বাচনেও ফাঁদ পেতেছিলেন… বিএনপিকে নির্বাচনে নেবেন কিন্তু বিএনপি সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে।'

শনিবার (৪ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।

আব্বাস বলেন, যেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না সেই নির্বাচনের প্রয়োজন বাংলাদেশে নাই। রাজতন্ত্র কায়েম করতে পারেন, রাজতন্ত্র ঘোষণা দিতে পারেন কিন্তু নির্বাচনের কথা আপনাদের মুখ দিয়ে মানায় না।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন ভোট দিতে গিয়েছিলো লোকজন? এবারও যাবে না। আমার ছোটভাই রিজভী (রুহুল কবির রিজভী) উদাহরণ দিলেন সরিষাবাড়ি, কক্সবাজার ও বরিশালের… ওরা(আওয়ামী লীগ) নাকি বলেছে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না।

‘ আমি আজ ছোট ভাই রিজভীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ভাই এটা শুধু দেখার জন্য আনন্দের বিষয়। কুকুরে কুকুরে কামড়া-কামড়ি করছে… আমরা শুধু দেখি…আমাদের শুধু দেখার বিষয়… কামড়া-কামড়ি কুকুরে কুকুরে হচ্ছে আমার কি? করুক গিয়ে.. আমরা তো নির্বাচনে নাই। ওরা ওদের প্রার্থীকে নির্বাচনে দাঁড়াতে দেবে না, বিএনপির প্রার্থী দাঁড়ালে কি দাঁড়াতো অবস্থাটা। তো আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে, সঠিক থাকবে ইনশাল্লাহ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিবের মুক্তির দাবিতে হাবিবুর রশিদ হাবিব মুক্তি পরিষদ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

‘সরকারের পতন হবেই’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘এই দেশে এই স্বৈরশাহীর পত্রিকায় দেখলাম… সরকার উৎখাত করবে।”

‘‘ আরে ভাই আমি তো সরকারই দেখি না। এটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। সুতরাং এই সরকারকে উৎখাত করার দায়দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না। জনগণ যখন মনে করবে তখন লাথি দিয়ে সরকারকে ফেলে দেবে, সরকার থাকতে পারবে না।”

দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘একজন-দুইজন-তিনজন করে প্রতিদিন কোর্টে আত্মসমর্পণ করছে, স্বেচ্ছায় জেলে যাচ্ছে। আমরা তাদের মুক্তি দাবি করে আসছি, আজকে এই মানববন্ধন হচ্ছে।”

‘‘ বিচিত্র এই বাংলাদেশ ! সেদিন দেখলাম আমার কোনো এক ভাই এক‘শ টাকার চুরির জন্যে চোরের হাত বেঁধে রাখেন আর ১ হাজার কোটি টাকা চুরি যারা করে তাদেরকে স্যালুট দেন… এই হলো বাংলাদেশ। আজকে বাংলাদেশের কি করুণ অবস্থা, কি দুরাবস্থার মধ্যে আছে.. এটা আওয়ামী লীগ ছাড়া বিশ্বের সকলেই জানে। আর তার চেয়ে বেশি জানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তারা কি অবস্থার মধ্যে আছে…. অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে আছে…।”

‘খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো না’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার দল বিএনপি সেই দলের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করতে করতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন । আল্লাহ জানেন কখন যে কি হয়।”

‘‘ তাকে বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা কত বার বলেছি, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে অথবা চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। উনার অবস্থা বেশি ভালো না। তারা (সরকার) আইন নাই। কেনো? আইন থাকবে না কেনো? রাশেদ খান মেননকে বিদেশে পাঠানো হয় নাই, আসম আবদুর রবকে বিদেশে পাঠানো হয় নাই। আসম রবকে বন্দি অবস্থায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং রাশেদ খান মেননকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে পাঠিয়ে ছিলেন। আজকে তারা বলছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো যাবে না। অর্থাৎ তাকে হত্যা করতে হবে এবং এমন ভাবে করতে হবে যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে।”

‘১/১১ তে আপনারা কি হিসেবে জেলে ছিলেন’

মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে কি বলা হচ্ছে? ওই যে কাদের সাহেব (ওবায়দুল কাদের) বললেন, কোনো রাজনৈতিক বন্দি জেলে নাই। কি সুন্দর কথা বললেন… কাদের সাহেব আমার খুব হাসি পায়.. আপনি যখন ১/১১ জেলে ছিলেন.. আপনি কি চোর হিসেবে জেলে গিয়েছিলেন না রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে গিয়েছিলেন… আমি জানতে চাই। ১/১১ সময়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী উনিও জেলে ছিলেন… উনি কি হিসেবে বন্দি হয়েছিলেন আমি জানতে চাই।”

‘‘ কথা বলার সময়ে খেয়াল থাকে না… কথা বলেন রাজনৈতিক বন্দি জেলে নাই… আপনারা একটা করে মামলা দেবেন, গ্রেপ্তার করবেন, জেলে পাঠাবেন আর বলবেন এরা তো মামলার আসামি। কোন মামলার আসামি? রাজনৈতিক মামলার আসামি যারা আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, আপনাদের কাজ-কর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে।”

‘আন্দোলন হবে, মুক্ত হবে দেশ’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ এভাবে গ্রেপ্তার করে পৃথিবীর আন্দোলন কোনো স্বৈরশাসক থামাতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। একদিন না একদিন এই স্বৈরশাসকের পতন ঘটবেই জনরোষের মুখে এটাকে কেউ টিকিয়ে রাখতে পারবে না।”

‘‘ আমরা আন্দোলন গড়ে তুলছি… আন্দোলন হবে, মুক্ত হবে দেশ। আমি জানি না দেখে যেতে পারবো কিনা। কিন্তু এদেশে কেউ না কেউ আসবে এই হায়নাদের হাত থেকে এই দেশকে মুক্ত করার জন্য। ইনশাল্লাহ বিএনপি ঠিকই আসবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান রয়ে গেছেন… তিনি একদিন এই দেশে ফেরত আসবেন জনরোষের মুখে যখন এই সরকারের পতন হবে… তিনি এই দেশে ফিরে এসে নেতৃত্ব দেবেন এদেশের, এদেশকে ভালো করার জন্য, এদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য এদেশের নেতৃত্ব দেবেন।”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশের সর্বনাশ করে গেছে। উনি নাকি ঠিকঠাক করছেন। ভাই কি ঠিক করছেন আমার জানা নাই।”

‘‘দেশে আজকে সাধারণ মানুষের দিকে নজর দেন টাকা-পয়সা নাই… কয়েকজন লোকের দিকে নজর দেন পেট বড়ো হয়ে গেছে। হাজার হাজার লক্ষ কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। দেশের মানুষের পেটে ভাত নাই… যারা তিন বেলা খেতেন তারা দুই বেলা খায়, যারা দুই বেলা খেতেন তারা এক বেলা খায়, যারা এক বেলা খেতেন তারা আধা বেলা খায়… এই হচ্ছে দেশের অবস্থা। তিনি দেশের উন্নয়ন করেছেন… এই উন্নয়ন চুরির উন্নয়ন… এটা দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না।”

সংগঠনের আহ্বায়ক এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জয়দেব জয়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাসহ মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App