×

জাতীয়

মাদক নিরাময় চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে নারীরা, নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম

মাদক নিরাময় চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে নারীরা, নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও

ছবি: ভোরের কাগজ

মাদকসক্ত নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়লেও মাদকের চিকিৎসায় পিছিয়ে আছে নারীরা। এর অন্যতম কারণ নারীদের মাদক নিরাময়ে তেমন ব্যবস্থা না থাকা। মাত্র ৮টি নিরাময় কেন্দ্রে যৌথভাবে নারীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সেগুলো শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রীক হওয়ায় অন্য বিভাগের মাদকাসক্ত নারীরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ মাদকের প্রভাব পুরুষের চেয়ে বিভিন্ন ভাবে নারীদের ক্ষতি করে, এক্ষেত্রে বলা যায় শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব পড়ে। যা একজন নারীর সন্তান ধারণ, জন্ম ও লালন পালন মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১ টায় রাজধানীর শ্যামলীস্থ ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসা কেন্দ্রটির মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইক্লোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস।

বক্তারা বলেন, সময়ের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। যা দেশের একমাত্র নারীদের পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা কেন্দ্র। শুরু থেকে এই চিকিৎসা কেন্দ্র নারীদের মাদকনির্ভরশীলতা, মানসিক ও আচরণগত সমস্যার চিকিৎসা দিয়ে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মাদকনির্ভরশীলতা ও মানসিক সমস্যাগ্রস্থ নারীদের জন্য ১০ বছর যাবৎ সাফল্যের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা দিচ্ছে। 

আরো পড়ুন: রাত ১১টার পর মহল্লার চায়ের দোকান বন্ধের নির্দেশ ডিএমপির

সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল মাসুদ বলেন, নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি পুরুষের তুলনায় বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। ক্রমবর্ধমান নারী মাদকনির্ভরশীলদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এটি দেশের একমাত্র সম্পূর্ণ নারী কর্মীদ্বারা পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্র যা রোগীদের নিরাপত্তাসহ চিকিৎসা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে রোগীদের জীবন দক্ষতা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের জন্য ভোকেশনাল কোর্স ও উদ্যোক্তা কোর্স প্রদান করে থাকে।

এ সময় উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে মোট ৭৬২ জন নারী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে একই সঙ্গে একাধিক মাদক গ্রহণকারীসহ ৩৯% ইয়াবা গ্রহণকারী, ৩৯% গাঁজা এছাড়াও ঘুমের ওষুধ, মদ, শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও অন্ন্যো মাদক গ্রহণকারী রয়েছে। আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের গত বছরের (৩৩% ইয়াবা গ্রহণকারী, ২৮% গাঁজা, ১৬% ঘুমের ওষুধ) তথ্যের তুলনায় যেটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক রোগের মধ্যে সিজোফ্রিনিয়া ৩৫%, মুড ডিজঅর্ডার ২৬%, বাইপোলার ১২%, ডিপ্রেশন ১০%, ওসিডি ৬% বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল।

৭৬২ জন নারীর মধ্যে মাদকনির্ভরশীলতা জনিত সমস্যার জন্য ৪৬৩ জনের ও মানসিক সমস্যার জন্য ২৯৯ জনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে, ৭৬২ জন রোগীর মধ্যে ৭০% চিকিৎসার মেয়াদ পূর্ন করেছে। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে গেছে ২২% এবং বিভিন্ন কারণে ৪% রোগীকে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে ৪% রোগী চিকিৎসারত আছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী) আসাদুজ্জামান খান আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম একমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র যা সর্ম্পূণ নারী কর্মী দ্বারা পরিচালিত। চিকিৎসা কেন্দ্রটি সব আধুনিক সুযোগসুবিধার পাশাপাশি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে দেশের সেরা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পুরষ্কার অর্জন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App