×

জাতীয়

বিকালে ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৫ এএম

বিকালে ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম

ছবি: সংগৃহীত

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার বিকালে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। সফরকালে, বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ একাধিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে ১১টি স্মারক ও চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। কাতারের আমিরের এই সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর, সেই বছরের ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কূটনৈতিক মিশন প্রতিষ্ঠা করে কাতার। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দুই দিনের সফরে আসা কাতারের আমিরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে ঢাকার কয়েকটি সড়ক সাজানো হয়েছে। প্রায় ১৯ বছর পর, কাতার থেকে এমন উচ্চ পর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

এর আগে, ২০০৫ সালের এপ্রিলে কাতারের তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল সানি বাংলাদেশ সফর করেন। এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতা ছাড়াও, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায়, বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কাতারের আমিরের এ সফরে ১১টি দ্বিপক্ষীয় দলিল স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক। দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি, উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দুদেশের মধ্যকার দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বদলি সংক্রান্ত চুক্তি এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠনসংক্রান্ত চুক্তির পাশাপাশি শ্রমশক্তি, বন্দর পরিচালনা, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। 

বাংলাদেশ ও কাতারের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, কাতার বঙ্গবন্ধুর সরকারকালীন সময়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রীর গত বছরের মার্চ ও মে মাসে দুইবার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশে সফর করবেন।

সফরের আলোচ্য বিষয় সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে কাতারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যবসাবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রসমূহকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সফরসূচি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আজ বিকালে বা সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে কাতারের আমির ঢাকা পৌঁছবেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বিমানবন্দরে কাতারের আমিরকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে স্বাগত জানাবেন। আমিরকে গার্ড অফ অনার দেয়া হবে। 

পরদিন ২৩ এপ্রিল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন কাতারের আমির। এরপর গণভবনে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজনে অংশ নেবেন আমির। সন্ধ্যায় তিনি বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশ ও কাতারের বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি আমিরের নামে নামকরণ করার কার্যক্রম চলছে। 

আগামী ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এই দুটি স্থাপনা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির এই সফরের তাৎপর্য সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ কাতার শক্তিশালী অর্থনীতি, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও কূটনৈতিক তৎপরতা ও মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিলের অধিকারী কাতার বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া কাতার বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কাতারের আমিরের এই সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। 

কাতারের সঙ্গে বাকিতে তেল কেনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের রেফার্ড পেমেন্টে (এক বছরের বাকিতে) তেল কেনার চুক্তি রয়েছে, কাতারের আমিরের সফরে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।  অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাতার চাইলে দেশের কোনো একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। 

কাতার-বাংলাদেশ সম্পর্ক : কাতার এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হয়, তারপর ১৯৮০ সালে ঢাকায় দোহার দূতাবাস খোলা হয়। তারপর ঢাকা ১৯৮১ সালে দোহাতে তার দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করে। উভয় দেশ ১৯৭৯ সালে একটি বিমান পরিষেবা চুক্তিও করেছিল। কাতারে সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ৪ লাখেরও কিছু বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন এবং কাজ করছেন। বাংলাদেশি কর্মীরা ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের সাফল্যে অবদান রেখেছিল দেশটিকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সরবরাহ করে এবং মেগা ইভেন্টের সাক্ষী থাকা স্টেডিয়ামগুলোর নির্মাণ সম্পন্ন করে। ২০১৮ সালে সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়ার পর কাতার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র গত তিন বছরে, কাতার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার কর্মী নিয়োগ করেছে। 

আমীরের সফর সম্পর্কে কাতার চেম্বারের চেয়ারপারসন শেখ খলিফা বিন জসিম আল-থানি গতকাল দোহা নিউজকে বলেছেন, উপসাগরীয় দেশটি বাংলাদেশের তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান সরবরাহকারী। কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৫ বছরের গ্যাস চুক্তি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে প্রতি বছর ১ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। দোহা এবং ঢাকার বাণিজ্য বিনিময়ও ২০১৮ সাল থেকে ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। রাজনৈতিকভাবেও দুই দেশ ফিলিস্তিনি এবং মিয়ানমার শরণার্থী ইস্যুতে মতামত ভাগ করে নেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App