×

জাতীয়

কেএনএফকে বিশ্বাস করেছিলাম, তারা ষড়যন্ত্র করেছে: সেনাপ্রধান

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম

কেএনএফকে বিশ্বাস করেছিলাম, তারা ষড়যন্ত্র করেছে: সেনাপ্রধান

ছবি: সংগৃহীত

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পাহাড়ের সশস্ত্র দল কেএনএফ (কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) শান্তি আলোচনা শুরুর পর তাদের বিশ্বাস করেছিলাম। তারা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। তারা ভেতরে ভেতরে ‘ষড়যন্ত্র’ করেছে। সুতরাং তাদের আর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। ইনশাল্লাহ জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে। সন্ত্রাসীদের জায়গা বাংলাদেশে নেই।

 দুই দিনে তিন ব্যাংকে ডাকাতি, অপহরণ ও গোলাগুলির প্রেক্ষাপটে রবিবার (৭ এপ্রিল) বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলা পরিদর্শন শেষে বান্দরবান সেনা রিজিয়ন মাঠে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান।

তিনি আরো বলেন, তাদেরকে শুরুতে আমরা একটু বিশ্বাস করেছিলাম। (ভেবেছিলাম) শান্তি আলোচনা হচ্ছে, যেহেতু শান্তি আলোচনা শেষ হয়নি, শান্তির ভেতরেই শেষ হবে। কিন্তু এর ভেতরে এই অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ জনগণের ভেতর শান্তি ফিরে আসবে। এবং দেখতে পারবে যে এই সন্ত্রাসীদের কোনো জায়গা বাংলাদেশে নাই।

ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, আতঙ্ক দূর করার জন্যই আমরা সশরীরে এখানে আসছি। যা আমাদের করণীয়, সর্বাত্মকভাবে করছি। আপনারা ইতোমধ্যে বোধহয় জেনেছেন, গতকাল রাত্রে কিন্তু কিছু সন্ত্রাসীকে ধরতে সক্ষম হয়েছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এবং কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করেছে। 

তিনি বলেন, আমরা এখন সরকারের ওভারঅল স্ট্র্যাটেজি, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে যেভাবে এটা সরকার চিন্তা করেছে, বাংলাদেশ সরকারের সমন্ত অর্গান, আমাদের সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এবং অন্যান্য ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন, সব সমন্বিতভাবে আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে দায়িত্বগুলো পালন করার, বিশেষ করে যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া, সেইগুলো আমরা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে করতে পারব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অলরেডি পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। কিছু কার্যক্রম দৃশ্যমান, কিছু কর্যক্রম আপনারা দেখতে পাবেন না। বাট এর ফল আপনারা সময় মত পাবেন ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চাই, আমার কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা খুবই পরিষ্কার। বাংলাদেশের জনগণের শান্তির জন্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য যা করণীয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, সেটাই করতে হবে। আর সেটা বাস্তবায়নে সক্ষম হব বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছি।

প্রথম ব্যাংক ডাকাতির পর পাঁচ দিন হয়ে গেছে, সেনাবাহিনী জরুরি কোনো অভিযান করেছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, আপনার বুঝতে হবে, এখানে যদি একটা ফোর্স ডিফেন্স নিয়ে থাকত, আমি গিয়ে অ্যাটাক করে দিলাম। এরকম কেউ ডিফেন্স নিয়ে কোথাও আছে? আপনি জানেন কোথায় কে লুকিয়ে আছে? বাংলাদেশের পাড়ার ভেতর, জনগণের ভেতর কেউ যদি লুকিয়ে থাকে, বাংলাদেশের মানুষের ওপর যেয়ে আমরা কি হামলা করব?

সো আমাদের তথ্য নিশ্চিত হতে হবে কোথায় কে আছে, ধীরে ধীরে এগুলো ক্ল্যান্ডেস্টাইন অপারেশন, কোনো জায়গায় কমবাইনড অপারেশন, কোনো জায়গা যদি ডাইরেক্ট কনফ্রন্টশনে যেতে হয়, সেটা পরিস্থিতি অনুযায়ী যাওয়া হবে। তারা অস্ত্র ফেলে জনগণের সাথে মিশে সারা জায়গায় কোথায় কীভাবে আছে, সেইগুলো আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

 উল্লেখ্য, বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে এই সশস্ত্র সংগঠনের অস্তিস্ত প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালের শুরুর দিকে। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রোদের নিয়ে এ সংগঠন গঠন করার কথা বলা হলেও সেখানে বম জনগোষ্ঠীর কিছু লোক রয়েছে। সে কারণে সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।

কেএনএফ বলছে, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি বিলাইছড়ি ও বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ গঠন করতে চায় তারা। সশস্ত্র সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে ২০২২ সালে খবর দেয় র‌্যাব।

কেএনএফের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে পাহাড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়লে ২০২৩ সালের ৩০ মে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। ওই বছরের জুলাই ও অগাস্টে কমিটির সঙ্গে কেএনএফের দুইবার ভার্চুয়াল আলোচনাও হয়। পরে ৫ নভেম্বর রুমা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুনলাই পাড়ায় প্রথমবারের মত কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দুটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রথমবারের মত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

‘শান্তি আলোচনা’ শুরুর পর পাহাড়ে হত্যা-সহিংসতা থেকে মুক্তির আশা জাগতে শুরু করেছিল পাহাড়ের মানুষের মনে। এরইমধ্যে ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে এবং এক ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি। দুটি ঘটনাতেই কেএনএফ এর নাম আসার পর ৪ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া আর ‘সম্ভব নয়’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App