×

জাতীয়

বসন্তে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১১:০০ এএম

বসন্তে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি

ছবি: সংগৃহীত

বর্ষাকালকে একসময় ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হলেও মশাবাহিত রোগটি এখন সারাবছরই ভোগাচ্ছে। এবার বসন্তের শুরুতেই মানুষ ডেঙ্গুর শিকার হয়েছে। এতে আভাস মিলছে ভয়ঙ্কর আরেকটি বছরের। 

এ বছরের ২৩ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬২০ জন, যার মধ্যে প্রাণ গেছে ২২ জনের। এর আগে কখনোই বছরের প্রথম ৩ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এত মানুষের মৃত্যু হয়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এখনই যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনার কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত বছরের চেয়ে এবার রোগী বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে ‘

ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের বছর ২০২৩ সালে যে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে যান, তার মধ্যে দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জনই ভর্তি হন ঢাকার বাইরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরও ঢাকার বাইরেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেশি। এখন পর্যন্ত যে ১৬২০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয় ৫৬৮ জন এবং ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ১০৫২। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে গত বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এ বছরও ওই দুটি বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বরিশাল বিভাগে এ বছর ১৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৯৫ জনই বরগুনা জেলায়।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সমন্বয় কমিটির সভায় ডেঙ্গু রোগী বেশি পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।

মশা নিধনে প্রস্তুতি কেমন, জানতে চাইলে বরগুনা পৌরসভার মেয়র মো. কামরুল আহসান (মহারাজ) বলেন, ‘পৌরসভা থেকে মশা নিধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ কম এ কারণে পুরোদমে কাজটি করা যাচ্ছে না।’

কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘গত দুই বছর ধরেই কক্সবাজার জেলায় ১৫ হাজারের বেশি রোগী (রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ) পাওয়া যাচ্ছে। পরপর দুই বছর রোগী বেশি থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক। গেল সপ্তাহে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও এখন থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর ও চাঁদপুরে এডিস মশার উপস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই পরিদর্শনে তিনি দেখেছেন ওইসব জায়গায় এইডিস মশার ঘনত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর বর্ষার সময় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখে ফেব্রুয়ারি থেকেই বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছি আমরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি একটি গোলটেবিল বৈঠক করে যেখানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর মশক নিধনের জন্য যে কর্মসূচি নিই, সেই প্রস্তুতি এবারও আছে। এর বাইরে কোনো ওয়ার্ডে যদি এক সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী পাওয়া যায়, তাহলে ওই ওয়ার্ডকে আমরা রেড জোন ঘোষণা করব।’

বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কিউলেক্স মশা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এইডিস মশা নিয়ে শঙ্কা আছে। এইডিস মশা নিয়ে আপনারা যেমন আতঙ্কিত, আমাদেরও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে। এই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়, মানুষ মারা যায়।’

নিজেদের প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা বছরের প্রথম থেকেই উদ্যোগ নিয়েছি। জানুয়ারি মাসে সভা করেছি মশক নিধনের জন্য। ডিসি সম্মেলনেও আমি মশা নিধনে ডিসিদের যে দায়িত্ব তা পালনের নির্দেশ দিয়েছি। ইনটিগ্রেটেডে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে বলেছি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App