কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
নরসিংদী ও গাজীপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-মো. আকাশ ওরফে টান আকাশ (২২), ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি (২০), মো. ইমরান (২৫), মো. রাসেল কাজী (২৪) ও নয়ন (২৫)।
শুক্রবার (২২ মার্চ) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ভুক্তভোগী ফয়সাল ও গ্রেপ্তারকৃতরা একসময় মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং 'পেপার সানী' গ্রুপের সদস্য ছিলেন। আটক গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। তবে ৪-৫ মাস আগে মাদক কেনা-বেচা নিয়ে ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ক্রোন্দল ঘিরে রাব্বি ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে ‘গালকাটা রাব্বি’ নামে পৃথক গ্রুপ তৈরি করে। এর পর থেকেই দুই গ্রুপে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই মারা-মারির ঘটনা ঘটতো। এরই ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে উচিত শিক্ষা দিতে পেপার সানি গ্রুপের ফয়সালসহ দুজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে গলাকাটা রাব্বি গ্রুপের সদস্যরা। এই ঘটনা ঘটাতে পেরে পার্টি করে তারা। তবে যখন জানতে পারে ফয়সাল মারা গেছে তখন যে যার যার যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যায়।
শনিবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১ টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে কিশোর গ্যাংয়ের ৫ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের বের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন তিনি জানান, গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফয়সাল নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব । এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ ও র্যাব-১১ এর যৌথ দল গাজীপুর ও নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে মূল আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ও ভুক্তভোগী ফয়সাল একসময় মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং 'পেপার সানী' গ্রুপের সদস্য ছিলেন। গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু ৪-৫ মাস আগে মাদক কেনা-বেচা নিয়ে ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের কোন্দল ঘিরে রাব্বি ওই গ্রুপ থেকে বের হয়ে ‘গালকাটা রাব্বি’ নামে পৃথক গ্রুপ তৈরি করে।
এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। ঘটনার প্রায় ১ মাস আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মারধর করে পায়ের রগ কেটে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলায় তারা রাব্বিকে উদ্ধার করে। গত ১৫ মার্চ দুই গ্রুপের মধ্যে আবার মারামারি হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, এতে রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেয়ার পরিকল্পনা করে। এছাড়া, ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে রাব্বি আরও ক্ষিপ্ত হয়।
এর মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতরা জানতে পারে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা একটি ইফতার পার্টিতে গেছে। ভুক্তভোগী ফয়সাল ও রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি শেষে ফেরার পথে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্রসহ তাদের উপর হামলা করে রাব্বী গ্রুপের সদস্যরা। এ সময় ফয়সাল ও রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রুপের এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় পার্টি করে উদযাপন করেন। পার্টি শেষে তারা জানতে পারে ফয়সাল হাসপাতালে মারা গেছে ও রানা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা প্রথমে নেত্রকোনায় আত্মগোপন করে দুই দিন অবস্থান করে। পরে মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার রাব্বির বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা রয়েছে। এর আগে একাধিক বার কারাভোগ করেছে। আকাশের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে, সেও একাধিকবার কারাভোগ করেছে।
এছাড়া, গ্রেপ্তার রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাব্বীর গ্রুপে ১৪-১৫ জন সদস্য রয়েছা। যাদের অধিকাংশই আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দেয়। এখন পর্যন্ত তাদের ইন্ধনদাতা বা মদতদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।