×

জাতীয়

সহজ ডটকমকর্মীর নেতৃত্বে ট্রেনের টিকিট সিন্ডিকেট!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম

সহজ ডটকমকর্মীর নেতৃত্বে ট্রেনের টিকিট সিন্ডিকেট!

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ৯ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। এসময় অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুত করা বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট জব্দ করা হয়। তাদের মধ্যে রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজডটকমের চারজন কর্মী রয়েছেন। অনলাইনে টিকিট কাটার বিষয়ে সহজ ডটকম রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রেনের টিকিট কালো বাজারির বিশাল চক্র গড়ে তুলেছিলেন সহজ ডটকমের পিয়ন মিজান ঢালী। 

র‌্যাব বলছে, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম হোতা সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী (৪৮)। তাকেসহ ৯ জনকে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন­- মো. সোহেল ঢালী (৩০), মো. সুমন (৩৯), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), মো. শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪), মো. জয়নাল আবেদীন (৪৬), মো. সবুর হাওলাদার (৪০) ও নিউটন বিশ্বাস (৪০)। 

শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

তিনি জানায়, ২০০৩ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় সহজ ডটকমে পিয়ন হিসেবে যোগ দেয় মিজান। পরে সিএনএস ডট বিডি’র সঙ্গে রেলের চুক্তি হলেও অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজকে দেয়া হলে সেখানেও গ্রেপ্তার মিজানের চাকরি বহাল থাকে। অন্যদিকে নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট কর্মী হিসেবে সিএনএস বিডিতে যোগদান করে। ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পায়। ২০২০ সালে সহজের সঙ্গে চুক্তি হলে তার চাকরি বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পায় সে।

র‌্যাব জানায়, সার্ভার অপারেটর হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল ও টিকিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন নিউটন। তিনি সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে তথ্য দিতেন। মিজান ও নিউটন দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। দেশব্যাপী প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করতো এই ঢালী সিন্ডিকেট।  

মিজান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ফলে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার পরিচিতি তৈরি হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজির চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতো।

খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে এই চক্রটি বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ টিকিট সংগ্রহ করতো। গ্রেপ্তার মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতো। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের চাইতেও বেশি সংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল। এসব টিটিট হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশীদের কাছে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হতো।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেতো। বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের মূলহোতা গ্রেফতার মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এসব অর্থ কখনও তারা নগদে হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতো। আবার কখনও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতো। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App