×

জাতীয়

হলমার্ক কেলেঙ্কারি

সাজার রায় শুনে আদালত থেকে পালালেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৫ এএম

সাজার রায় শুনে আদালত থেকে পালালেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান

হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের করা মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড পাওয়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার আদালত থেকে পালিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। জামিনে থাকা আসামি মো. জামাল উদ্দিন সরকার রায় শুনতে আদালতে হাজির হন। ওকালতনামায় স্বাক্ষরও করেন তিনি। আদালত তাকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। সাজার রায় শোনার পর এক ফাঁকে আদালত থেকে পালিয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে জামাল উদ্দিনের আইনজীবী হারুন অর রশিদ বলেন, তিনি রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর পেছনে তাকিয়ে দেখি তিনি চলে গেছেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজিব দে জানান, এ মামলায় আসামি জামাল জামিনে ছিলেন। আজকে হাজিরা দিয়েছেন। রায়ের পর তাকে না পাওয়ায় তার জামিন বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এদিকে, বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

যাবজ্জীবন দণ্ডিত অন্য সাত আসামি হলেন- সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন বা রূপসী বাংলা শাখার সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। 

রায়ে তানভীর-জেসমিনকে পেনাল কোডের ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া দণ্ডবিধি ৪২০ ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ডসহ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। 

অন্য ৭ আসামিকে পেনাল কোডের ৪০৯/১০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া পেনাল কোডের ৪২০/১০৯ ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ডসহ দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়।

এদিকে রায়ে সোনালী ব্যাংকের সাত কর্মকর্তাকে পেনাল কোডের ৪০৯/১০৯ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ ১০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পেনাল কোডের ৪২০/১০৯ ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ডসহ দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়। 

তারা হলেন- সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের জিএম অফিসের জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন ও এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান।

এছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে পেনাল কোডের ৪০৯/১০৯ ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে পেনাল কোডের ৪২০/১০৯ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ডসহ দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সুতা রপ্তানির নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসেবে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসেবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App