×

জাতীয়

দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোরগ্যাংয়ের ২০ সদস্য গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৭ পিএম

দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোরগ্যাংয়ের ২০ সদস্য গ্রেপ্তার

দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার কিশোরগ্যাং সদস্যরা

বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে কিশোর গ্যাং বা গ্যাং কালচার। এসকল গ্যাংসমূহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংঘর্ষ সমাজে ব্যাপক মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গ্যাংসমূহের পারস্পরিক মারামারি, ক্ষমতা জাহির করতে প্রকাশ্য অস্ত্রের ব্যবহার, মাদক সেবন, যত্রতত্র ছিনতাই, প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান প্রভৃতি সমাজে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এমন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলে অনেক সময় খুন করতেও এরা দ্বিধাবোধ করে না। রাস্তাঘাটে নারীদের ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানি এসকল সদস্যদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম। 

এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এবং নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা রুজু হয়। সম্প্রতি রাজধানীর কদমতলী, হাতিরঝিল ও এর আশেপাশের এলাকায় কিশোরগ্যাং কর্তৃক বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‍্যাব-৩। ফলশ্রুতিতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়। 

এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার (১৭ মার্চ) র‍্যাব-৩ এর পৃথক পৃথক আভিযানিক দল রাজধানীর কদমতলী ও হাতিরঝিল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোরগ্যাং ‘ফয়েজ-আরাফাত’ গ্রুপের ৭ জন, ‘সিয়াম’ গ্রুপের ৪ জন, ‘অনিক’ গ্রুপের  ৪ জন এবং ‘কুনিপাড়া স্কোয়াড’ গ্রুপের ৫ জনসহ সর্বমোট ২০ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত কিশোরগ্যাং সদস্যরা হলো মো. ইয়াসিন আরাফাত, রাশেদ হাজারী (২২), মো. রাসেল ইসলাম (১৯), মো. তামিম মিয়া (২০), রাতুল হাসান (১৮), মমিনুল ইসলাম হৃদয় (২১), মো. রাকিব (২০), সাইফুল ইসলাম সিয়াম (১৯), আশিকুল ইসলাম স্বাধীনসহ (১৯) মোট ২০ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩।

গ্রেপ্তারকালে তাদের থেকে ১টি চাপাতি, ১টি ছুরি, ১টি শাবল, ৩টি ছোরা, ১টি হাসুয়া, ৪টি চাকু, ২টি ক্ষুর, ২টি হেক্সোব্লেড, ২৫ পুরিয়া গাঁজা, ৬টি মোবাইল এবং চাঁদা উত্তোলনের নগদ ৪৫৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়। 

দুপুরে র‍্যাব-৩ প্রধান কার্যালয়ে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় ফয়েজ-আরাফাত কিশোরগ্যাং গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপটি সন্ত্রাসী মো. ইয়াসিন আরাফাত ও তার ফুফাতো ভাই ফয়েজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে এই গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা আরাফাত উক্ত অভিযানে গ্রেপ্তার হয় এবং ফয়েজ বর্তমানে রিহ্যাব সেন্টারে আছে। গ্রেফতারকৃত ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, মারধর, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। 

এছাড়াও হাতিরঝিল এলাকায় সিয়াম এবং অনিক গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন যাবত সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম সিয়াম এবং হাসান আহমেদ অনিকের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর হাতিরঝিল এবং এর আশেপাশের এলাকায় সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল দ্বারা বিকট শব্দ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো।

এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যেত। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতিরঝিল এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। 

তিনি আরো বলেন, রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা হতে গ্রেপ্তারকৃত কুনিপাড়া স্কোয়াড গ্রুপটি হাতিরঝিল ও এর আশপাশের এলাকায় ধৃত মূলহোতা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। মূলহোতা রনিউজ্জামান অনলাইনভিত্তিক অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেলিগ্রামে নোটকয়েন নামক ফিচার ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অনলাইন জুয়ারিদের সঙ্গে জুয়া খেলতো। এ গ্রুপের সদস্যরা উক্ত এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং বিভিন্ন মানুষকে হুমকি, মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছে। এছাড়াও তারা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। 

গ্রেপ্তারকৃত কিশোরগ্যাং সদস্যরা পেশায় অটো-রিক্সা চালক, ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী, দিনমজুর, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App