×

জাতীয়

কেজি প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা

গরুর মাংসের দামের এতো তফাত যেসব কারণে

Icon

বিবিসি

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১১:৩৬ এএম

গরুর মাংসের দামের এতো তফাত যেসব কারণে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গরুর মাংসের দর বেঁধে দেয়া হয়েছিল ৬৫০ টাকা। নির্বাচনের পর ঢাকায় কোথাও সেই মাংস বিক্রি হয় ৫৯৫ টাকা, কোথাও ৭০০ থেকে ৮০০। একই পণ্যের দামে এতো ফারাক কীভাবে হয়? তাহলে কি যারা কম দামে বিক্রি করছেন , তারা লোকসান দিয়ে ব্যবসা করছেন? নাকি অন্যরা বেশি লাভ করছেন?

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ জায়গাতেই ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট, মহাখালী কাঁচা বাজার, হাতিরপুল কাঁচা বাজার ও বনানী কাঁচা বাজারে এই দাম দেখা গেছে। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। যেমন পলাশী বাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই এই দাম চলছে। পরিমাণে বেশি নিলে উভয়ক্ষেত্রেই কেজিতে ১০-২০ টাকা ছাড় মিলছে।

অন্যদিকে, ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করছেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতিভুক্ত কিছু ব্যবসায়ী। খিলগাঁও, রায়ের বাজার, মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন, বংশাল, মৌলভীবাজার, কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে জনা পঞ্চাশেক ব্যবসায়ী আছেন যারা এই দামে ক্রেতাদের হাতে মাংস তুলে দিচ্ছেন। ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, কমদামে যারা বিক্রি করছেন তারাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে? দামের ফারাকের নেপথ্যেই বা কী কারণ জড়িয়ে আছে?

দামের পার্থক্য বেশি কেন?

পলাশী বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মাংস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আনোয়ার হোসেন। তার দাবি, অনেক জায়গায় সাত-আট মণ পর্যন্ত ওজনের গরু জবাই করা হলেও, পলাশী বাজারে আড়াই মণের বেশি ওজনের গরু আনা হয় না। ফলে মাংসের গুণগত মান ভালো থাকে। তাছাড়া, জবাইয়ের আগে পশু চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়, বলছেন তিনি। “পণ্যের মান বজায় রাখতে গিয়ে দাম অন্য জায়গার চেয়ে বেশি পড়ে যায়।”

ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ নিজেরা জবাই না করে, কেজি দরে মাংস কিনে এনে বিক্রি করে থাকেন। এতে নিজেদের লাভ রাখতে দাম বেশি ধরতে হয় তাদের। গত বছরের শেষের দিকে ৫৯৫ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে ব্যাপক আলোচিত হন ঢাকার শাহজাহানপুরের ব্যবসায়ী মো. খলিল।

এবার রমজানের শুরু থেকে তিনিসহ সমমনা অর্ধশত ব্যবসায়ী একই ন্যূনতম দামে বিক্রি করছেন। এই ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, মাংস বিক্রিতে 'তেমন লাভ' করেন না। তাদের লভ্যাংশ আসে গরুর নাড়ি-ভুড়ি, চর্বি, শিং ইত্যাদি বিক্রি করে। “দেখা গেল, প্রতিটার গোশতে পাঁচ হাজার টাকা লস, কিন্তু নাড়িভুঁড়িতে আয় ২০ হাজার,” বলছিলেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

তারা বলছেন, সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে পশু সংগ্রহ করেন বলে 'ভালো মান এবং স্বল্প মূল্যের' কারণে ক্রেতাদের ভিড় এবং বিক্রি অনেক বেশি হয় এসব দোকানে। অন্যদিকে, যারা সাতশ বা আটশ টাকা নিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই তাদের ব্যবসার হার এক নয় ফলে, তাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

দাম বাড়ানোর কৌশল

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, নীতিনির্ধারক হিসেবে সরকার যখন মাংসের দাম উন্মুক্ত করে রাখে তখন একটা পক্ষ সিন্ডিকেট করে জনগণের টাকা লুট করে। সিন্ডিকেট কোনো অবস্থায় মাংসের দাম কমতে দিতে চায় না। তারা কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারও একটা ধারণা দিলেন তিনি। 

গরুর দাম কমে গেলে, মার্কেট থেকে প্রত্যেক খামার ২০০/৪০০ করে গরু কিনে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। কোরবানির সময় মোটা তাজা করা গরুর যাতে দাম না কমে যায় সেজন্য আগে থেকেই দাম ধরে রাখার এই চেষ্টা করা হয় বলে দাবি তার।

মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, সরকার হাট বাজারে রেট বেঁধে দিলে দামের হেরফের কম হতো। তাহলে, কম দামে কিনতে পারি। কম দামে বেচতেও পারি।”

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গরুর মাংসের একটা যৌক্তিক দাম থাকা দরকার। তবে, দাম বেঁধে দেয়ার পর সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো থাকাও জরুরি। না হলে সেই দাম কার্যকর হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরবরাহ ভালো থাকলে ওই তালিকার চেয়েও কমেও বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা।”

সরকারের উদ্যোগ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে গরু-মুরগির মাংস ও ডিম বিক্রি করা হচ্ছে রাজধানীর ৩০ টি পয়েন্টে। খামারাবাড়ি মোড়ে অধিদপ্তরের কাভার্ড-ভ্যানের পেছনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায় শুক্রবার সকালে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পরিচালক মো জসিমউদ্দিন বলেন, ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য ১৫০ কেজি মাংস নিয়ে এসেছেন তারা। আগারগাঁও থেকে আসা একজন জানালেন, বাজারের দামে অতিষ্ঠ হয়ে এখানে এসেছেন। মানুষের চাহিদার তুলনায় ভ্যানের যোগান অপ্রতুল বলে মন্তব্য তার।ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রবিউল আলমের মতে, পশুপালনের জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করতে হতো না। এমনকি ৫০০ বা তার কমেও মাংস বিক্রি সম্ভব হতো।

মূল্যবৃ্দ্ধির গতিবিধি

২০১৯ রোজার মাসের জন্য ঢাকা দক্ষিণের সিটি কর্পোরেশন গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি যথাক্রমে ৫২৫ টাকায় বেঁধে দেয়। দুই হাজার একুশ সালের একই সময়ে গরুর মাংস কেজিপ্রতি দাম ছিল ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা।দুই হাজার বাইশ সালে গরুর মাংস প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি’র বাজার দর অুনযায়ী, ২০২৩ সালে গরুর মাংসের প্রতি কেজি ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

আরো পড়ুন: 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App