×

জাতীয়

ডুবতে বসেছে সম্ভাবনাময় রেস্তোরাঁ খাত শিল্প!

Icon

সিনিয়র রিপোর্টার

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

ডুবতে বসেছে সম্ভাবনাময় রেস্তোরাঁ খাত শিল্প!

ছবি: সংগৃহীত

‘জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২’-এ সেবা খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে হোটেল ও রেস্তোরাঁকে। বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি দীর্ঘদিন ধরে এ খাতকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার দাবি করে আসছিলো। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা এই নীতির অনুমোদন দেয়। অবশেষে গেজেট প্রকাশ হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানায় সংগঠনটি। বাংলাদেশ শিল্পনীতি-২০২২-এর গেজেটে সেবা খাতের পঞ্চম অবস্থানে রাখা হয়েছে হোটেল ও রেস্তোরাঁ শিল্পকে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায় অপরিকল্পিতভাবে ভবনের প্রতিটি সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ছিলো ডজন খানেক। যার কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। এমন অভিযোগ ছিলো ভবন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, যা ভবন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও রাজউক তদন্ত কমিটি।

বেইলি রোডের ঘটনার পরেই টনক নড়েছে রাজউকসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। বেইলি রোডের ঘটনার সূত্র ধরে রাজউক নিজেদের খুশি অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকার অনুমোদিত ভবনের রেস্টুরেন্টগুলো কোনো লিখিত নোটিশ ছাড়া বন্ধ করে দেয়। এর থেকে বাদ যায়নি রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির গাউসিয়া টুইন পিক বিল্ডিংয়ের ১৫টিরও অধিক রেস্টুরেন্ট। যে কারণে এখন দিশেহারা ১৪০০ এর অধিক কর্মকর্তা কর্মচারী।

গাউসিয়া টুইন পিক বিল্ডিংটির সভাপতি জাকির হোসেন ও সেক্রেটারি আবুল এহসান আনোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের জানান, আমাদের এই বিল্ডিংটি রাজউক নকশার কোনো ব্যত্যয় না ঘটিয়ে একটি আইকনিক ভবন হিসেবে পুরো ঢাকা শহরে সুপরিচিত। আমাদের রেস্তোরাঁগুলি উন্নত মানের। এখানে দেশি-বিদেশি অতিথিরা আসেন। এই বাণিজ্যিক ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট এবং চলাচলের জন্য দুইটি প্রশস্ত সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়া অগ্নিনির্বাপক সকল ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও গত ৪ মার্চ কোন লিখিত নোটিশ ছাড়া হঠাৎ রাজউক অভিযান চালিয়ে আমাদের ভবনটির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে সিলগালাও করে দেয়। 

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো একই রোডে রুপায়ন এবং জাস্টিস আমিন আহমেদ বিল্ডিংয়ের বাফেট লাউঞ্জ, বাফেট প্যারাডাইজ, বাফেট এম্পাইয়ার, চিকিং, সিক্রেট রেসিপি, ধাবা, স্ন্যাক্স অ্যাটাক, গ্র্যান্ড লাউঞ্জ, বাফেট স্টোরিজ, গারলিক এন্ড জিঞ্জার, গ্রেট কাবাব ফ্যাক্টরি, এম্রসিয়া, ক্যাফে রিও, দা ফরেস্ট লাউঞ্জ এই রেস্তোরাঁগুলো খোলা আছে। সেগুলোর দিকে নজর নেই রাজউক কর্তৃপক্ষের ।

সভাপতি আরো বলেন,আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ,পানির অপচয়, অপব্যবহার ও কোনো অনিয়মের অভিযোগ নাই এবং নিয়মিত বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করে আসছি আমরা। আমাদের ভবনটি বর্তমান যুগের অত্যন্ত আধুনিক, দৃষ্টি নন্দন, বিনোদন উপযোগী নিরাপদ ভবন। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই বিল্ডিংয়ে যেসব রেস্টুরেন্ট আছে এর প্রতিটিই সবদিক দিয়ে গুনগত ও সেফটি সম্পন্ন। এছাড়া রাজউক অনুমোদিত ফায়ার সেফটি সম্পন্ন সরকারি সব বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

আমাদের এই বিল্ডিংয়ের প্রতিটি রেস্টুরেন্ট গ্রাহক সেবায় অনেক উন্নত ও গ্রাহকের সব চাহিদার কথা মাথায় রেখে পরিচালিত হয়। আমাদের ভবনে রয়েছে গ্যালিটোস,ডলসি, সাওপাওলো, কড়াই গোস্ত, ইয়ামচা ডিসট্রিকট, দা লবি লাউঞ্জ, এরিস্টোক্রেট লাউঞ্জ, হোয়াইট হল বাফেট, মেরিটেজ ঢাকা, প্যান প্যাসিফিক লাউঞ্জ, স্পাইস অ্যান্ড হারবস, কালচার অ্যান্ড কুইজিন, চাপঘর, কাভান সিগনেচারের মতো জনপ্রিয় সব রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকলে সরকার লাখ লাখ টাকা ভ্যাট ও রাজস্ব হারাবে। 

তিনি আরো জানান, এসব ভবনগুলোতে রয়েছে ফায়ার হাই ড্রেনট, ফায়ার হোস সিস্টেম, ফায়ার ফাইটিং যন্ত্রপাতি, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর এবং ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার যা প্রতিটি তলায় বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ দোতলা বিশিষ্ট পার্কিং ব্যাবস্থাসহ পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা আছে। আমাদের রেস্তোরাঁগুলোতে রান্নার জন্য এল পি জি গ্যাস ব্যাঙ্ক স্থাপন করা আছে। যা ভবনের পেছনে স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কয়েকজন হোটেল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তার অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক লোনে করা। শুধু তাই না, প্রায় ১৫ জন বাড়িওয়ালা এই ভবনের ভাড়ার ওপর নির্ভর করে তাদের সংসার পরিচালনা করেন।

পবিত্র মাহে রমজানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে জন্মদিন, বিয়ে, কর্পোরেট মিটিংসহ ইফতার ও সেহরি পার্টির আয়োজন হয়ে থাকে। সুধু তাই না উক্ত অনুষ্ঠানগুলো আমরা প্রি বুকিংও করে থাকি। কিন্তু হঠাৎ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়ায় আয়োজকরা বিপদে পড়ে যান। এই ১৪টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৪ শতাধিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান রয়েছে। এখন এদের বেতন বোনাস সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মোটকথা সব রেস্টুরেন্ট, দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের আকুল আবেদন যে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন এবং বিশাল আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন ভুক্তভোগীরা । ইতোমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর অনেকে লিখিত স্মারকলিপি দিয়েছেন বলেও জানা যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণে শিল্পের মর্যাদা অর্জন করেছে রেস্তোরাঁ সেক্টরটি। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App