×

জাতীয়

মাত্র ৪ হাজার টাকার জন্য প্রাণ গেল পিয়াসের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম

মাত্র ৪ হাজার টাকার জন্য প্রাণ গেল পিয়াসের

ছবি: সংগৃহীত

গত ৭ মার্চ ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় ১টি পুরাতন মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা পরিশোধের দ্বন্দ্বে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূর এবং শামীম হোসেনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ঘটনার পরদিন নিহত পিয়াসের পিতা বাদী হয়ে মুগদা থানায় ৬ জনকে আসামি করে এবং কয়েকজন অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। রবিবার (১০ মার্চ) রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর মুগদা এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৩ আসামি খালিদ হাসান (১৮), আরিফ হোসেন (২১) এবং মেহেদী হাসান মিরাজকে (২০) গ্রেপ্তার করো। এসময় উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। 

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক চোরাই মোবাইল ফোন কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনিকের কাছ থেকে নিহত পিয়াসের বন্ধু মাহির ৪৩০০ টাকা বাকিতে ১টি চোরাই মোবাইল ফোন কেনেন। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় অনিক তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন।

গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় অনিক খালিদ, আরিফ, মিরাজ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্য আসামি অর্নব এবং রাব্বীকে নিয়ে মোবাইল বিক্রির বাকি টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যান। তারা মাহিরকে বাসায় না পেয়ে মাহিরের মায়ের কাছে মোবাইল বিক্রির পাওনা টাকা দাবি করেন এবং অশোভন আচরণ করে। সেখানে মাহিরের মা একদিন পর টাকা পরিশোধ করে দেবেন বলে তাদের জানিয়ে দেন। টাকা পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে তারা মাহিরের বাসা থেকে চলে যান। পুরো বিষয়টি মাহির তার বন্ধু ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে জানান।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ভুক্তভোগী পিয়াস ও শামীম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অনিকের সঙ্গে উত্তর মুগদা এলাকায় অনিকের আড্ডার পয়েন্টে দেখা করেন। এসময় অনিক, পিয়াস এবং শামীমকে তুই-তুকারি সম্বোধন করেন। পরে একইদিন রাত ১০টা ৩০ মিনিটে পিয়াস অনিককে ফোন দিয়ে লিটল এঞ্জেল স্কুলের গলিতে পুনরায় আসতে বলেন। অনিক সেখানে পোঁছালে পিয়াস এবং শামীম অনিকের কাছে কেন তিনি তাদের তুই তুকারি সম্বোধন করেছিলেন তার ব্যাখ্যা চান।

আগে থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং এবং সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনিক ভিকটিম পিয়াস ও শামীমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার অন্যদের ফোন করে সেখানে আসতে বলেন। অনিকের ফোন পেয়ে অনিকের বন্ধু গ্রেপ্তার খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং গ্রেপ্তার খালিদ পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে বেসবল খেলার স্টিক নিয়ে আসেন। এসময় তারা বেসবল খেলার স্টিক ও লাঠি দিয়ে পিয়াস ও শামীমকে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন।

একপর্যায়ে মামলার অপর আসামি রাব্বী পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে আচমকা জোরপূর্বক একটি নতুন ধারালো ছুরি নিয়ে ভিকটিম পিয়াসের পিঠের ডান পাশে এবং শামীমের ডান কাঁধে আঘাত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পিয়াস এবং শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পিয়াসের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে জড়িতরা আত্মগোপন চলে যান।

আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীকে গুলি করা সেই মেডিকেল শিক্ষক ৫ দিনের রিমান্ডে

উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় একটি পুরোনো মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা পরিশোধের দ্বন্দ্বে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূর এবং শামীম হোসেনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App