×

জাতীয়

অননুমোদিত অনুপস্থিতির জন্য কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম

অননুমোদিত অনুপস্থিতির জন্য কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিলেটের জৈয়ন্তপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বিশ্বনাথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয়ে দুটি ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন। বুধবার (৬মার্চ) দুপুরে কর্মক্ষেত্রে অননুমোদিত অনুপস্থিতজনিত কারণে জৈয়ন্তপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা জনাব রেন্টু পুরকায়স্থকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সেন। 

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কর্তৃক কার্যালয় পরিদর্শনকালীন অফিসে অননুমোদিত অনুপস্থিত থাকা এবং সরকারি কর্তব্যে অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার জন্য জনাব রেন্টু পুরকায়স্থকে নির্দেশক্রমে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে বুধবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যেই জারি করা হয়েছে। 

অভিযানকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জৈয়ন্তপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অপারেশন থিয়েটার, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড রুম, স্টাফ কোয়ার্টার সহ বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে উপস্থিত ইনডোর ও আউটডোর রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। পরিদর্শনকালে জৈয়ন্তপুর কমপ্লেক্সে বেশকিছু অনিয়ম দেখতে পান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখানে কমপ্লেক্স চত্বরে সহজে দৃষ্টিযোগ্য স্থানে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এর কারন ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, "একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দৃষ্টিযোগ্য স্থানে চিকিৎসকদের স্থান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন কীভাবে থাকতে পারে? প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারের সাথে এই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কারো স্বার্থ না থাকলে এটি হতে পারতো না।" 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেখানে হাত পরিষ্কার করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার চাইলে উপস্থিত কর্মকর্তারা সেটি দিতে ব্যর্থ হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে অথচ সেখানে কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয় না। এটি কীভাবে হতে পারে? একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ঐ উপজেলার মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেবার জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা যারা দিবেন তারা যদি দায়িত্বশীল না থাকেন তাহলে তো সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে না। সরকার যে জন্য বিনামূল্যে মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে চাচ্ছে সেটিও পূরণ হবে না। আমি পরিষ্কার ভাষায় এখানে বলে যাচ্ছি, আমি শুধু বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ত্রুটিই দেখবো না। সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের অব্যবস্থাপনা হলে সংশ্লিষ্ট কেউই মাফ পাবে না।"

স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ইমার্জেন্সি রুম অত্যন্ত ছোট দেখতে পেয়ে কক্ষটিকে বড় করার নির্দেশনা দেন। অপারেশন থিয়েটার থাকার পরও সেগুলোতে কোন রোগীর অপারেশন হতে না পারার জন্য মন্ত্রী এসময় উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। অন্যান্য কক্ষ পরিদর্শন করে সেগুলো আরো মেরামত করার নির্দেশ দেন এবং এখানকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় কিছুদিন আগে জৈয়ন্তপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষও পরিদর্শন করেন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন স্থানীয় ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একজনের পিতা জৈয়ন্তপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলীর বাসায় যান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আরো পড়ুন: ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে আগুন  

এর কিছু সময় পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। তিনি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে এখানে সব স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিত দেখতে পান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে এখানকার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীদের একত্র করে প্রয়োজনীয় কিছু দিক নির্দেশনা দেন এবং চিকিৎসা সেবা দিতে সবাইকে আরো সতর্ক থাকতে বলেন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি কোন মিডিয়ায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে নেতিবাচক খবর দেখতে চাই না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য। কাজেই মানুষ যেন সঠিক সেবা পায়, রোগীরা যেন অসম্মানিত না হয় সেটি সবার আগে সবাইকেই খেয়াল করতে হবে।"

অভিযান চলাকালে স্থানীয় এমপি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ মহাসচিব এহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন সিলেট সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App