×

জাতীয়

সংসদে শেখ হাসিনা

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৮ পিএম

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
  • রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার অঙ্গীকার

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাঁধাগ্রস্ত করতে পারবে না   ইনশাআল্লাহ। আমরা ২০৪১ সালের এই দেশকে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরিত করবো। দেশে বিদেশে নালিশ করে কোন ফায়দা হবে না।  দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে ও রাষ্ট্রপতির উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবে অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এ কথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করছিলেন।

তিনি বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। ২২ দিনের এই অধিবেশনে দুটি বিল পাস হয়েছে। ৫০টি স্থায়ী কমিটি পাস হয়েছে। রাষ্ট্রপতির   আদেশটি পড়ে শোনান স্পিকার ড. শিরিন শারমীন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ২৬৯ জন সংসদ সদস্য ভাষণ দেন। 

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কয়েকদিন আগে আমরা রাজধানীতে  অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখলাম। এটি একটি দুর্ঘটনা। কিন্তু আমরা দেখি, রাজনীতির নামে অগ্নি সন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিএনপি নির্বাচন বাধা দেয়ার নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। এরা কি এসব করতে পারে? লন্ডন থেকে নির্দেশ আসে আর এখানকার বিএনপি নেতা কর্মীরা অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়ে মেরে আবার তার ছবি পাঠায়। কত নৃশংস তারা। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশে লেখা হচ্ছে, তাদের নেতাকর্মীদের রাজবন্দী করা হয়েছে। কিসের রাজবন্দী? তারা তো সন্ত্রাসী। হয় মানুষ হত্যার হুকুম দাতা, না হয় সন্ত্রাসী, না হয় অর্থদাতা। ২৮ নভেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের হাত তাদের আক্রমণ থেকে সাংবাদিক, জার্জেজ কোয়াটার, প্রধান বিচারপতির বাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সসহ কোন কিছুই রেহাই যায়নি। নারীদের উপর হামলা করা হয়েছে। পুলিশকে হত্যা করা হয়। তাহলে তারা কিসের রাজবন্দী? তারা তো সন্ত্রাসী। লন্ডন থেকে  হুকুম আসে, এখন থেকে নেতারা সেই হুকুম বাস্তবায়ন করে। আমার প্রশ্ন বিএনপি নেতারা কি বোকা?  লন্ডন থেকে হুকুম আসে। তারা আগুন সন্ত্রাস করে ছবি তুলে পাঠায়। তারা কি জানে না, যে ছবি পাঠালে রেকর্ড থেকে যায়? 

এখানে যেসব সংসদ সদস্য রয়েছে, তাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা নিজ নিজ এলাকায় খোঁজ রাখবেন, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, তাদের যেন   সঠিকভাবে বিচার হয়। শাস্তিটা যেন নিশ্চিত হয়। আর সাধারণ মানুষকে বলবো, এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।  এর পরে সংসদে একটি ভিডিও চিত্র দেখান, যেখানে ভোট ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব। ভিডিও দেখানোর পর আবেগ তারিত শেখ হাসিনা বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে। এদের কোন ক্ষমা নাই। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। 

বিএনপিকে আজরাইল মন্তব্য করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে, শিশুদের হত্যা করছে। আর আমাদের দেশের জন্য বিএনপি আজরাইল হয়ে এসেছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করতে চায়। গণতান্ত্রিক ধারা চায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। 

সংসদের ভোট নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরের বক্তৃতার জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে ভোটে চিত্র তুলে ধরলেন। তিনি দ্বিতীয়-তৃতীয় ও চতুর্থ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা দেখাননি। জিয়াউর রহমান ভোট চুরির পথ দেখিয়ে গেল। বিরোধী দলীয় নেতার ভাই (এরশাদ) সেই পথেই হাঁটলেন। জিয়াউর রহমানের হ্যা-না ভোট আগে থেকেই দেয়া হয়েছিল। আমি খুশি হতাম বিরোধী দলীয় নেতা যদি তার ভাইয়ের ৮৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল দেখাতেন তাহলে ভাল হতো। এরপর এরশাদের পথ ধরে খালেদা জিয়াও একই পথ ধরলেন। 

সে নির্বাচনে ২১ শতাংশ ভোট দেখালেন বিরোধী দলীয় নেতা। কিন্তু সে ভোট হয়নি। জনগণ মেনে নিতে পারেননি। জনগণের রুদ্ধরোশে বিদায় নিতে হলো। এরপর ২০০৬ সালের নির্বাচন। সে নির্বাচনও হয়নি। এরপর ১/১১ আসলো। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণ ভোট দিলো। এরপর বিএনপি শুধুই ভোট ঠেকাতে চাইলেন। তারা এখনো এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজ কর্ম করে যাচ্ছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলান্সে নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। সেটা অব্যাহত থাকবে। আমরা ইশতেহারেও ঘোষণা করেছি। এটা চলমান থাকবে। সামনে রমজান মাস উপলক্ষে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে   পবিত্র  রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানাই। এই রমজানে যেন পণ্যের দাম সহনীয় থাকে, আমরা সে পদক্ষেপ নিয়েছি। পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, মজুদ করা হয়, সেগুলো যেন না হয় সেজন্য সমন্বয় করা হবে। খাদ্য উৎপাদনের উপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্যাংশন, পাল্টা স্যানশনের ফলে   খাদ্যের যেন সংকট না হয় সেজন্য উৎপাদনের উপর জোর দিয়েছি। সবাইকে বলেছি, এক ইঞ্চি জায়গা যেন ফাকা না থাকে। 

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভমেন্ট, স্মার্ট  সোসাইটি আমরা গড়ে তুলবো। নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই বাছাই করা হবে। বিদেশী ঋণের উপর প্রকল্প হাতে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা যাচাই বাছাই করবো। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেগুলোর ওপর জোর দেব, আসছে বাজেটেও তার প্রতিফলন থাকবে। চলমান পরিকল্পনাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। দেশের যে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে তা মানোর জন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব। 

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন, অতিমারির ফলে কিন্তু এই মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশেও এই মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ দেয়া হবে। পবিত্র রমজান মাস আসলে যাতে দ্রব্যমূল্য যাতে সহনশীল পর্যায়ে থাকে। এখানে একটা অদ্ভুত ব্যাপার রমজান আসলে দ্রব্যমূল্য বা দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। সে জন্য মজুত যাতে না করতে পারে নিত্য পণ্যের সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সেটা নিশ্চিত করবো। আমরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যখন জুন মাসে বাজেট করবো তাতে আগেগুলো যাতে প্রধান্য পায় সেটা লক্ষ্য রাখবো। বাজেট করার সময় প্রতিশ্রুতি যাতে সম্পন্ন হয় তার দিকে লক্ষ্য দেব। 

বিশ্ব খাদ্য শস্য যে অভাব দেখা দিয়েছে সে জন্য এক ইঞ্চি জমিও যাতে অপাতিত না হয়। আমাদের লক্ষ হচ্ছে- ২০০৮ এর পরে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো তা কিন্তু বাস্তবায়ন করেছি। ২০২১-২০৪১ একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সেই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় করেছি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট সরকার, দক্ষ অর্থনীতি ও দক্ষ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলবো। পাশাপাশি কি কি ধরনের প্রকল্প আমাদের জন্য প্রযোজ্য, তার সুফল জনগণ কতটা পাবে সে প্রকল্প নেয়া হবে ও বাস্তবায়িত হবে। বিদেশী ঋণ নিতে যথা সম্ভব যাচাই বাছাই করবো। চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে ফেলবো। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করবো। জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশ নেই যেখানে একটা ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন মাসে স্বল্প উন্নত দেশে রুপান্তরিত করতে পেরেছিলেন। তার পরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আর আওয়ামী লীগ ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত গণমানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App