×

জাতীয়

বিরোধিতায় জাপা

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে সংসদে বিল উত্থাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৮ পিএম

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে সংসদে বিল উত্থাপন

ছবি: সংগৃহীত

দ্রুত বিচার আইনকে স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উপস্থাপিত এই বিলটি উত্থাপন করার সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু এটাকে বর্বর কালো আইন অভিহিত করে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন-২০২৪ নামে বিলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর এই আইনটি যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে দুইদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।  

বিলটির বিরোধিতা করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটি বর্বর আইন, কালো আইন। বিএনপির সরকারের সময় যখন এই আইন করা হয় তখন আওয়ামী লীগসহ সারা দেশে সব রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছিলো। এই আইন দ্রুত বিচার আইন নাম কিন্তু বিচারের কোর্টে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা শেষ হয় খুব কম। সিআরপিসিতে মামলাগুলি যেভাবে চলে এটা প্রায় সেভাবেই চলে। শুধুমাত্র গ্রেপ্তারের বেলায় দ্রুত বিচার আইন বলে মনে করতে পারি। এই আইনটা দিয়ে সরকার যদি ইনটেনশন থাকে সাধারণ মানুষকে বা তার প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার সুযোগ আছে। আজকে আপনারা ক্ষমতায় আছেন কালকে ক্ষমতায় না থাকলে যদি অন্য কেউ আসে তাহলে আপনারাই এই আইনের মাধ্যমে হয়রানি হবেন। যদি ক্ষতিও হয় আইনটি স্থায়ী করেন না, প্লিজ এটাকে প্রত্যাহার করেন। প্রয়োজনে আরো এক বছর দুই বছরের জন্য বাড়ান কিন্তু স্থায়ী করবেন না। এটায় ভুগবেন, আপনারাও ভুগবেন, দেশের মানুষও ভুগবে ভবিষ্যতে। প্লিজ প্রত্যাহার করে নেন আইনটা। 

আরো পড়ুন: পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

এর পর আইনমন্ত্রী বলেন, উনি একটা কথা বলেছেন যে এটা জনগণের উপরে অত্যাচার করার জন্য আইন এবং যখন এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিলো তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। যখন এই আইনটা পাস করা হয় ২০০২ সালে এর উদ্দেশ্য ছিলো আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য বিএনপি বিরোধী যে দল ছিলো তাদেরকে অত্যাচার করা। কিন্তু যদি দেখেন যে গত ১৫ বছর যাবৎ এই আইনের প্রয়োগ যেভাবে হয়েছে সেইখানে কিন্তু আজকে তার যে বক্তব্য সেটা সঠিক নয়। দ্বিতীয় কথা তিনি বলেছেন ভবিষ্যতে, এই আইনটা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন। এই আইনটা থাকাকালে আপনারা আমরা সকলেই দেখেছি, এই আইনটা থাকার কারণেই কিন্তু এই ১৫ বছর অনেক রকম বিশৃঙ্খলা হয় নাই। একটা পরিসংখ্যান যদি নেন তাহলে দেখবেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইটা শুধু রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাদের জন্য ব্যবহার করা হয়নি। অনেক রকম সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা এই আইন প্রতিহত করেছে। সেই কারণে এই আইনটার প্রয়োজন আছে, এ কারণে এই আইনটি স্থায়ী করা উচিত।

এদিকে ২০০২ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত বিল সংসদে তোলা হল। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্যকোনো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারা এখনকার মতই থাকবে।

আরো পড়ুন: প্রতি ৯৯০ জনের বিপরীতে হাসপাতালে বেড রয়েছে ১টি

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে জোরপূর্বক বাধা প্রদান যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল ২ বছর। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে ৭ বার এর মেয়াদ বৃদ্ধি করে সর্বশেষ ১০ এপ্রিল ২০১৯ সালে ১৭ বছর থেকে ২২ বছর বৃদ্ধি করা হয় যার মেয়াদ ৯ এপ্রিল ২০২৪ এ শেষ হবে। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এই আইনটি মেয়াদান্তে পুনঃ পুনঃ সময় বৃদ্ধি না করে স্থায়ীভাবে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App