×

জাতীয়

জনগণের সম্পৃক্ততাই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম

জনগণের সম্পৃক্ততাই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পারে

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি (সিসিএইচএসটি) বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বলেছেন জনগণের সম্পৃক্ততাই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে পারে। যেখানে কমিউনিটি গ্রুপ সক্রিয় সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিকও কার্যকর ভূমিকা রাখছে।” 

কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর সহায়তায় ইউএসএআইডি’র নবযাত্রা প্রকল্প (২), ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, আয়োজিত ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবার টেকসই উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা” শীর্ষক কর্মশালায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।

ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ২৪ মাস (১ অক্টোবর, ২০২২ - ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) মেয়াদি নবযাত্রা প্রকল্প (২) খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করছে। 

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার, লাইন ডাইরেক্টর, কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি)। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর সুরেশ বার্টলেট এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ড. মো. রফিকুল ইসলাম। নবযাত্রা প্রকল্প (২) এর চিফ অফ পার্টি লিমা হান্না দারিং প্রকল্পের কার্যক্রম ও সফলতা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন। 

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ কার্যালয়; ড. মাহবুব আরেফিন রেজানুর, বিভাগীয় প্রধান (ফিল্ড), জণস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান; অধ্যাপক ড. নাহিদ ফেরদৌসি, পরিচালক, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ এবং মুস্তাফা এল হামজাওই-পরিচালক, হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অফিস, ইউএসএআইডি বাংলাদেশ। 

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিরেক্টর স্বাগত বক্তব্যে কার্যকরী অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতায় নবযাত্রা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য ইউএসএআইডি এবং আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানান। 

নবযাত্রা প্রকল্প ২ এর চিফ অফ পার্টি লিমা হান্না দারিং, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে নবযাত্রা প্রকল্পের সাফল্য ও স্বাস্থ্য খাতে নারী ও শিশুর পুষ্টিসেবা নিশ্চিতে বিভিন্ন কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। 

তিনি জানান সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার চারটি উপজেলায় নারীর ন্যূনতম খাদ্য বৈচিত্র্য ৪৯.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৩.৬ শতাংশ হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ৪০.৯ শতাংশ মা কমপক্ষে চারবার প্রসব পূর্ব সেবা (এএনসি) গ্রহণ করেছে যা ২০১৭ সালে ছিলো মাত্র ২৪.১শতাংশ। প্রকল্পের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের কারণে, শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ২৯.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৭.৫ শতাংশ হয়েছে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মো. রফিকুল ইসলাম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে স্মার্ট কমিউনিটি ক্লিনিকে রূপান্তর করতে চাই।”

তিনি আরো জানান, ১৩,৯৪৯ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এর চাকুরি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তারা সরকারের গ্রেড-১৪ এর অধীনে রাজস্ব খাত থেকে বেতন পাবেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি, ডা. কাইয়ুম তালুকদার, লাইন ডিরেক্টর, সিবিএইচসি বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিক হাসপাতালের মতন চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রতিষ্ঠান নয় বরং এটি স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে মূলত রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়।”

বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য গর্বিত, কারণ এটি এখন জাতিসংঘ দ্বারা স্বীকৃত এবং এই মডেল পৃথিবীর বহুদেশ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রেইন চাইল্ড। 

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কাউন্সিল (বিএনএনসি) এর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য সূচকে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ সবসময়ই প্রথম।

মুস্তাফা এল হামজাওই-পরিচালক, হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অফিস, ইউএসএআইডি বাংলাদেশ বলেন, “বাংলাদেশ এখন সাফল্যের শিখরে রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। নবযাত্রা প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে মা ও শিশুর অপুষ্টি, শিশুর স্টান্টিং, ওয়েস্টিং কমাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।”

টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুস্তাফা এল হামজাওই বলেন, ‘‘টেকসই উন্নয়ন সাফল্যের সেরা বিষয়। তবে টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় ও তৃণমূল সংগঠনগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এ কারণেই, বাংলাদেশে ইউএসএআইডি-র বাজেটের ২৫ শতাংশ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।"  

এক নজরে ইউএসএআইডি’র নবযাত্রা প্রকল্প (২) নবযাত্রা প্রকল্প (২) ইউএসএআইডি’র আর্থিক সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত ২৪ মাস (১ অক্টোবর, ২০২২ - ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) মেয়াদি একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নে কাজ করছে। প্রথম ধাপে বাস্তবায়িত সাত বছর মেয়াদি (২০১৫-২০২২) ‘নবযাত্রা’ প্রকল্পের বিভিন্ন শিখন ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন অর্জনের টেকসইকরণের জন্যই কাজ করছে ‘নবযাত্রা প্রকল্প (২)’। প্রথম ধাপে ৮ লাখের বেশি হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা, কৃষি এবং বিকল্প জীবিকায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় স্থানীয় লোকজনকে সহায়তা, লিঙ্গসমতা, সুশাসন, সামাজিক জবাবদিহিতা এবং বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছে নবযাত্রা প্রকল্প।  

বর্তমানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৪টি উপজেলায় সুবিধাবঞ্চিত ৬৬,০০০ মানুষের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মা ও শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কৃষি এবং বিকল্প জীবিকা, লিঙ্গসমতা, সুশাসন, সামাজিক জবাবদিহিতা এবং বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। 

সিসিএইচএসটি, সিবিএইচসি ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের মধ্যে নতুন চুক্তি (মে ২০২৩ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫) ১৯ টি জেলায় ৩৯ টি উপজেলায় ৮৬৩ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য সিসিএইচএসটি, সিবিএইচসি ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ সিটিজেন ভয়েস এন্ড অ্যাকশন (সিভিএ) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এই ১৯ জেলায়। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), হেল্থ এ্যসিসট্যান্ট (এইচএ), এ্যসিসট্যান্ট হেলথ ইন্সপেক্টর (এএইচআই), হেলথ ইন্সপেক্টর (এইচআই), ফেমিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিসট্যান্ট (এফডাব্লিউএ), ফেমিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডাব্লিউভি), দের দক্ষতা উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করবে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও সিসিএইচএসটি। এছাড়া এই চুক্তির আওতায় যৌথভাবে কর্মশালা, মিডিয়া ক্যাম্পেইন, উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয় সভা, বার্ষিক জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় সভা আয়োজন করবে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, ৬-৫৯ মাসের শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল প্রদান, ৫-বছরের কম বয়সী অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টি সহায়তা দেয়াসহ নানান কার্যক্রম পরিচালিত করবে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও সিসিএইচএসটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App