×

জাতীয়

ভোজ্য তেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার বন্ধে কর্মশালা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম

ভোজ্য তেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার বন্ধে কর্মশালা

ছবি: ভোরের কাগজ

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক ভোজ্য তেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও অংশীজনের অংশগ্রহণে জেলা এডভোকেসি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাকক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)  এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রধান (রোগতত্ত্ব ও গবেষণা) প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী ও কনসাল্টেন্ট  মুশতাক হাসান মো. ইফতিখার, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম জহিরুল ইসলাম, জেলা সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সোহেল আক্তার।

কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেনসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ। আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলার তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে জনাব ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ২০১৩ সালে আইন করে ভোজ্য তেলে ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, আইনটি বাস্তবায়নে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। এই কর্মশালা, ভোক্তা-ব্যবসায়ীসহ উপস্থিত সদস্যগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

কর্মশালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস। পরে অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য চিত্রও প্রদর্শন করা হয় । 

এদিকে কর্মশালায় খোলা ভোজ্য তেলের ক্ষতিকর দিক ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসাল্টেন্ট জনাব মুশতাক হাসান মো. ইফতিখার। পরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক খোলা ভোজ্য তেলের বিষয়ে পরিচালিত তদারকি কার্যক্রম ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে আরেকটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। 

এছাড়া ভোজ্যতেল ড্রামে বা বাল্কে বিক্রি বা বিপণন বন্ধ এবং এর গুণগত মান ও অণু-পুষ্টি রক্ষায় নিজ নিজ করনীয় সনাক্তকরণে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রানী পাল একটি  

গ্রুপ ওয়ার্ক করেন। পরে গ্রুপ ওয়ার্ক থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন তিনি। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সোহেল আক্তার অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকে। তিনি অধিদপ্তরের জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের নীতি নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ মেনে ব্যবসা করার অনুরোধ জানান।

কর্মশালায় নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ড. এ এফ এম মশিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বোঝা। তাই বাঁচার তাগিদে আমাদের সচেতনতামূলক এ ধরণের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। 

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ফলে মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এমন কর্মশালার মতো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমগুলোকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি। 

ভোক্তা সচেতন হলে তাদের অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে মন্তব্য করে কর্মশালায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রধান (রোগতত্ত্ব ও গবেষণা) প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। মাইক্রো প্লাস্টিকসহ খাবার অনিরাপদকারী কার্যক্রম বিষয়ে কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করে তিনি আরো বলেন, এই কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সচেতন হবো এবং অন্যান্যদের সচেতন করবো। 

আলোচনায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার বক্তব্যের শুরুতে ভাষা শহীদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি অধিদপ্তরের নিয়মিত কার্যক্রম বাজার তদারকি, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং সিসিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন।   ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর গুরুত্বপূর্ণ দিক কর্মশালায় তুলে ধরেন তিনি। 

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। 

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরো বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS (Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।

পরে তিনি বাংলাদেশে ভোজ্য তেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি খোলা ভোজ্য তেল এর ক্ষতিকর দিক বর্ণনার পাশাপাশি প্যাকেটজাত ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেলের সুফল সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সবাইকে অবহিত করেন।  

বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ভোজ্য তেলে ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধকরণ আইনের আওতায় পেট বোতলে ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা গেলেও খোলা তেলে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। তিনি আরও বলেন, খোলা তেল বন্ধ করে প্যাকিং এর আওতায় নিয়ে আসলে তাতে ভিটামিন এ নিশ্চিত করাসহ কতিপয় ব্যবসায়ীদের অবৈধ চর্চা সনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আলোচনায় মহাপরিচালক  এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে।  পরে তিনি কর্মশালার সফলতা কামনা ও প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ জনাব মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ভোক্তা স্বার্থে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধ করে প্যাকিং এর আওতায় এনে তাতে ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। তিনি কর্মশালায় চলমান ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরেন। বিষটি নিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও মননে উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষে সঙ্গে ভোজ্য তেলে ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

অন্যদিকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক কর্মশালায় আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। 

সবশেষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আজকের কর্মশালা যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ , জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App